পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাল ইসরাইল

আন্তর্জাতিক স্লাইড

মে ৩০, ২০২২ ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি প্রবাসী পাকিস্তানিদের একটি প্রতিনিধিদল ইসরাইল সফর করেছে। দলটিকে স্বাগত জানান ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভায় এক বিশেষ বক্তব্যে বিষয়টি প্রকাশ করেন তিনি। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে একে ‘বড় একটা পরিবর্তন’ বলে অভিহিত করেন। খবর ডন।

এ নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা করছে বলেও অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।

গত ২২ মে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে শুরু হয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনের শেষদিন বৃহস্পতিবার এক বিশেষ বক্তব্য দেন ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট হারজগ। এ সময় ডব্লিউইএফ প্রেসিডেন্ট বোর্গ ব্রেন্ডের এক প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের কাছে ডব্লিউইএফ প্রেসিডেন্ট জানতে চান, আব্রাহাম চুক্তি (আব্রাহাম অ্যাকর্ড) প্রচুর ফল দিচ্ছে। সহযোগিতার পরিধি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন? জবাবে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট জানান, গত সপ্তাহে মূলত দুটি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়েছিলেন তিনি।

হারজগের ভাষায়, ‘প্রথম প্রতিনিধিদলটি আসে মরক্কো থেকে। দলটির সবাই বয়সে তরুণ। ফেসবুকে ইসরাইলি একটি গ্রুপের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। পাকিস্তানি ও ইসরাইলি দুটি গ্রুপই আমার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসে এবং আমরা এক ঘণ্টা ধরে কথা বলি। বিদ্যমান বাধা উপেক্ষা করে এভাবে একে অপরের সঙ্গে কথা বলা সত্যিই অসাধারণ।’

হারজগ জানান, পরদিন প্রবাসী পাকিস্তানিদের আরও একটি প্রতিনিধিদল আসে। এরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। তার ভাষায়, ‘আমাকে অবশ্যই বলতে হবে যে এটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। কারণ, আমরা আগে কখনো পাকিস্তানি নেতাদের এত বড় দলকে ইসরাইলে পাইনি। আর এর সবই সম্ভব হয়েছে আব্রাহাম অ্যাকর্ডের ফলে।’ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে আব্রাহাম অ্যাকর্ড স্বাক্ষরিত হয়।

পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের বিষয়টি খোলামেলা জানালেও দলে কে বা কারা ছিল, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেননি ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট। আব্রাহাম অ্যাকর্ডের ভিত্তিতে গঠিত শারাকা নামের একটি এনজিও এ সফর আয়োজন করে। আমেরিকান মুসলিম অ্যান্ড মাল্টিফেইথ উইমেন’স এমপাওয়ারমেন্ট কাউন্সিল (এএমএমডব্লিউইসি) নামের একটি সংগঠনও সম্পৃক্ত ছিল।

পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলটির সফরের কথা প্রথম জানায় এএমএমডব্লিউইসি। টুইটারে এক পোস্টে এএমএমডব্লিউইসি পাকিস্তানি দলটির ছবি পোস্ট করে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইসরাইলপন্থি বেশ কয়েকটি সংগঠনকে ওই পোস্টে ট্যাগ করা হয়। এএমএমডব্লিউইসি ও শারাকার পোস্টে ইসরাইল সফরের কথা প্রকাশের পরপর পাকিস্তানের রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ও পিটিআই নেত্রী শিরিন মাজারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে আমদানি করা সরকার তাদের অভিভাবকের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে লজ্জাজনক আনুগত্য প্রদর্শন করছে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসরাইল রাষ্ট্র। বিশ্বের বহু দেশই, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ ইহুদিবাদী এই রাষ্ট্রটিকে আজও স্বীকৃতি দেয়নি। এর মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। ফলে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই দেশটির।

দ্বিরাষ্ট্র সমাধান তথা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোর সমর্থক পাকিস্তান। এমনকি আব্রাহাম অ্যাকর্ডের পরও দেশটির সরকার স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, ফিলিস্তিনি সমস্যার ন্যায়ভিত্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলকে তারা স্বীকৃতি দেবে না।

পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও টেকসই শান্তির জন্য জাতিসংঘ ও ওআইসির প্রস্তাব অনুযায়ী দ্বিরাষ্ট্র সমাধান অনস্বীকার্য। আর সেটা অবশ্যই ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা ধরে ও আল কুদস তথা জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষণার মাধ্যমে হতে হবে।

প্রকাশ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও উভয় দেশই বেশ কিছুদিন ধরে অঘোষিত একটা যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। তবে সেটা খুবই নিম্ন স্তরে। এখন থেকে ১৭ বছর আগে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে এ ধরনের যোগাযোগ প্রথম ঘটে। সে সময় পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ কাসুরি ও ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলভান শালোমের মধ্যে একটি বৈঠক হয়।

এর আগে গত বছর ইমরান খান সরকারের আমলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মঈদ ইউসুফ ও ইমরান খানের সহকারী জুলফি বুখারির বিরুদ্ধে ইসরাইল সফরের অভিযোগ করে বিরোধী দলগুলো। তবে দুজনই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এর আগে ইমরান খান এক ঘোষণায় বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান কখনোই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *