দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখীর তাণ্ডব-বজ্রপাতে নিহত ১২

দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখীর তাণ্ডব-বজ্রপাতে নিহত ১২

দেশজুড়ে স্লাইড

এপ্রিল ৮, ২০২৪ ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

দেশের বিভিন্ন জায়গায় কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ও বজ্রপাতে নারী এবং শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে নারী ও শিশুসহ তিনজন, পটুয়াখালীর বাউফলে দুইজন, ভোলায় দুইজন, নেত্রকোণা, পিরোজপুর, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাটে একজন করে নিহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঝালকাঠিতে প্রবল ঝড় ও বর্ষণের সঙ্গে ব্যাপক বজ্রপাত হয়। এ সময় জেলার কাঠালিয়া উপজেলার আওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের মুন্সিরাবাদ গ্রামে হেলেনা বেগম (৪৪) নামে একজন বজ্রপাতে মারা যান।

জেলার সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের ইসালিয়া গ্রামে নিহত হয়েছে মাহিয়া আক্তার (১২) নামে এক শিশু। সে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারায়। এছাড়া, সদর উপজেলার শেখের ইউনিয়নে বজ্রপাতে মিনারা বেগম নামে এক নারী গুরুতর আহত হন। পরে দুপুরের দিকে তিনিও মারা যান।

ঝালকাঠি সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, রোববার সকাল ১০টার পর প্রবল বর্ষণে জেলার অনেক জায়গায় গাছ উপড়ে গেছে। এতে বিভিন্ন জায়গায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সকাল থেকেই পুরো জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।

ঝালকাঠিতে ঝড়ের তাণ্ডব

ঝালকাঠিতে ঝড়ের তাণ্ডব

এদিকে, কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে গেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা। ঝড়ের সময় গাছচাপা পড়ে একজন মারা গেছেন এবং এক শিশুকে ঝড়ের পর রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এছাড়া অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। উপজেলায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা চিকিৎসকদের।

বেলা ১১টার দিকে বাউফলে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। এ সময় দাশপাড়া ইউনিয়নের চরালকী গ্রামে গাছের নিচে পড়ে সাফিয়া রহমান (৯০) এবং নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাতেরকাঠি গ্রামে রাতুল (১৩) নামে এক শিশু মারা যান। এছাড়া ঝড়ে গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলায় অর্ধশত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভোলার লালমোহন ও মনপুরা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় শতাধিক কাঁচা বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়াও লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নে কাঁচা ঘরের চাপায় মো. হারিচ আহমেদ নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। হারিচ ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। ভিক্ষা করতে বের হয়ে তিনি ঝড়ের সময় মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তির বসতঘরের সামনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। নিহত ওই ব্যক্তি ভোলার লালমোহন উপজেলার ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা। এছাড়া বজ্রপাতে উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরলেঙুটিয়া গ্রামে বাচ্চু নামে (৩৫) এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই এলাকার কয়ছর আহমেদের ছেলে।

 পটুয়াখালীতে ঝড়ের তাণ্ডব

পটুয়াখালীতে ঝড়ের তাণ্ডব

পিরোজপুরবাসীও দেখেছে কালবৈশাখীর তাণ্ডব। সকাল পৌনে ১০টার দিকে শুরু হয় ঝড়। প্রায় ১৫ মিনিটের এ ঝড়ে পিরোজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় শতশত গাছ উপড়ে পড়ে। এ সময় পৌর এলাকার শারিকতলা ইউনিয়নের মরিচাল গ্রামে ঘরে গাছচাপা পড়ে রুবী বেগম (২২) নামে এক নারী নিহত হন। এ ঘটনায় ২ জন আহত হয়েছেন।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে আহত একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি গত ৩১ মার্চ রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে আহত হন। শনিবার (৬ এপ্রিল) রাতে সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। নিহত ওই যুবকের নাম মো. আক্তার হোসেন (৩৫)। তিনি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের কলাইয়া গ্রামের আফিছ আলীর ছেলে। আক্তার কলাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি কাম অফিস সহায়ক পদে কর্মরত ছিলেন।

নেত্রকোণার খালিয়াজুরী উপজেলায় হাওরে কাজ করার সময় বজ্রপাতে শহীদ মিয়া (৫২) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার রাজঘাট হাওরে এ ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে।

 পটুয়াখালীতে ঝড়ের তাণ্ডব

পটুয়াখালীতে ঝড়ের তাণ্ডব

এদিকে, যশোরের ঝিকরগাছায় বজ্রপাতে আব্দুল মালেক পাটোয়ারী নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকালে উপজেলার শঙ্করপুর ইউনিয়নের বড় পোদাউলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, সকালে নিজ ইরি ধানক্ষেত পরিচর্যায় পোকা দমনে স্প্রে করছিলেন মালেক। এ সময় হালকা বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হচ্ছিল। সে সময় বজ্রপাতে আব্দুল মালেক পাটোয়ারী মারা যান।

খুলনার ডুমুরিয়ায় বজ্রপাতে ওবায়দুল্লাহ গাজী (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে। মৃত ওবায়দুল্লাহ ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের কোমলপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন গাজীর ছেলে।

এছাড়াও বাগেরহাটে বজ্রপাতে নিক্সন সরদার (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি কচুয়া উপজেলার চর সোনারকুড় গ্রামের বাসিন্দা। রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে ঝড়ের সময় গ্রামের মাঠে থাকা গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। এদিকে ঝড়ের পর থেকে বাগেরহাট পৌর শহরসহ সদর উপজেলার প্রায় সব এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন আছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, আকস্মিক ঝড়ে সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা উপড়ে গেছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। কচুয়াতে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *