দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য

দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য

আদালত স্লাইড

অক্টোবর ২৩, ২০২৩ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাংবিধানিকভাবেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য বলে মন্তব্য করে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিএনপির ৫ নেতার সাজা স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের বিষয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। ২০১৮ সালের দেওয়া রায়ের ৪৪ পৃষ্ঠার অনুলিপি রোববার সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএনপির পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে পৃথক মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে করা আবেদন ২০১৮ সালে ২৭ নভেম্বর খারিজ করেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, নিম্ন আদালতে দুই বছরের বেশি দণ্ড হলে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত ও জামিন হলেই কেবল অংশ নিতে পারবে। সাজাপ্রাপ্তরা হচ্ছেন-বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, আব্দুল ওহাব ও মশিউর রহমান। রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের আইনজীবী রোববার খুরশীদ আলম খান বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির ৫ নেতার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতি মামলার সাজা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত শুনানি করে তাদের আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে তাদের সেই সাজা বহাল রয়েছে। পরে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে একজনের (বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানের) আপিল নিষ্পত্তি করা হয়েছে, বাকি ৪ জনের মামলা এখনো হাইকোর্টে বিচারাধীন। তিনি বলেন, রায়ে আদালত বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে আপিলকারীদের সাজা স্থগিত করার কোনো সুযোগ নেই।

খুরশীদ আলম খান বলেন, সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হলে আপিল বিভাগে তা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানই এখানে প্রাধান্য পাবে।’

আদালতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমানের পক্ষে আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করীম ও খায়রুল আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও আব্দুল ওহাবের পক্ষে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ব্যারিস্টার একেএম ফখরুল ইসলাম এবং মশিউর রহমানের পক্ষে ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক উপস্থিত ছিলেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৪ টাকার সম্পদ অর্জন করায় ওয়াদুদ ভুঁইয়াকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মোট ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। তিনি এ বিষয়ে আপিল করে ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল ২০০৯ সালে জামিন লাভ করেন।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকার সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করে মো. আবদুল ওহাবকে যশোর স্পেশাল জজ গত ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ত্রিশ হাজার টাকার জরিমানা দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে আপিল করে ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর জামিন নিয়েছেন।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ টাকার অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন মৃধা মামলা করেন। এ মামলায় ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুণ্ডু) আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে পৃথক ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন আদালত। পরবর্তীকালে তিনি আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। ২০০৮ সালের ২৫ মে দুর্নীতির মামলায় ডা. জাহিদ হোসেনকে মোট ১৩ বছরের দণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে আপিল করে হাইকোর্ট থেকে পরে তিনি জামিন নেন। আর বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে দুর্নীতির মামলায় ২০০৭ সালের ২১ জুন বিচারিক আদালত ১৩ বছরের সাজ দেন। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *