টাকার বিনিময়ে নাশকতায় নিম্ন আয়ের মানুষ

টাকার বিনিময়ে নাশকতায় নিম্ন আয়ের মানুষ

রাজনীতি স্লাইড

নভেম্বর ২৫, ২০২৩ ১:০৫ অপরাহ্ণ

অনেকটা ভাসমান প্রকৃতির মো. মারুফ (২০)। পেশায় মোটর ওয়ার্কশপের হেলপার। রাজধানীর পল্লবী থানায় ২২ নভেম্বর করা একটি নাশকতার মামলার আসামি তিনি। গ্রেফতারের পর তিনি পুলিশকে বলেন, মিরপুর বাঙলা স্কুলসংলগ্ন এলাকার জসিম নামের এক বড় ভাই আমার পূর্ব পরিচিত। তিনি একদিন আমাকে বলেন, একটি কাজ আছে। করবি নাকি? আমি কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, গাড়ি জ্বালাবি। প্রতিটি গাড়ি জ্বালানোর জন্য তিন হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। টাকার লোভে আমি তার প্রস্তাবে রাজি হই। ২১ নভেম্বর জসিম আমাকে পল্লবী থানার আরিফা গার্ডেনের সামনে পার্কিং করা বসুমতি পরিবহণের সামনে নিয়ে যায়। আমাকে একটি কোরোসিনের বোতল দিয়ে বলেন, এই গাড়িটি জ্বালিয়ে দিলেই হবে। ওইদিন রাতে কোরোসিন দিয়ে আমি গাড়িটি জ্বালিয়ে দিয়ে বাঙলা কলেজের সামনে যাই। সেখানে জসিম আমাকে তিন হাজার টাকা দেয়। ওই টাকা দিয়ে ভাত খাই এবং কাপড়-চোপড় কিনি। দোকানে কিছু টাকা বাকি ছিল। সেই টাকাও পরিশোধ করেছি।

সবুজ হাসান পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগালি। ওয়ারীতে মনোহরদী পরিবহণের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। এরপর জানান, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় টাকার লোভে গাড়ি পোড়ানো পেশায় যোগ দিয়েছি। আমার সঙ্গে সাগর এবং হানিফ নামের আরও দুজন আছে। একটি গাড়ি পোড়ালে ১০ হাজার টাকা পাই। তিনজনে তিন হাজার টাকা করে ভাগ করে নিই। বাতি এক হাজার টাকা দিয়ে সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি। তিনি বলেন, টার্গেট করা গাড়িতে আগুন দেওয়ার ক্ষেত্রে হানিফ কোরোসিন বা পেট্রোল ঢালে। হানিফ ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরায়। আর আমি বাইরে থেকে পাহারা দিই। সবুজ আরও বলেন, পার্কিং করা বা চলন্ত, যাত্রীবাহী বা যাত্রীবিহীন- যেকোনো গাড়িতে আগুন দিলেই আমরা টাকা পেয়ে যাই। তবে আগুন দেওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল করি গাড়িতে যাত্রী আছে কি না। যাত্রী থাকলে আমি বা আমার দলের কেউ আগুন দেয় না।

কেবল মারুফ, সবুজ, হানিফ বা সাগরই নয়, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিম্ন আয়ের এবং ভাসমান প্রকৃতির মানুষ জড়িয়েছে নাশকতার নতুন পেশায়। নাশকতার আগুনে প্রতিদিন গড়ে সাতটি করে যানবাহন পুড়ছে। এর মধ্যে বাস পুড়ছে পাঁচটি করে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতালে ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ২৯০টি যানবাহন ও ১৭টি স্থাপনাসহ ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ পর্যন্ত হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০ জনের বেশি। কুমিল্লায় অগ্নিসংযোগের সময় ৬টি ঘটনায় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় ১৭ জনকে ।

১ নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন পরিবহণের একটি বাসে যাত্রীবেশে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আল-আমিন নামে ভবঘুরে প্রকৃতির একজনকে গ্রেফতার করা হয়। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের হাতে গ্রেফতারের পর আল-আমিন জানান, বিএনপিকর্মী মিজানুর রহমান তাকে আগুন দিতে বলেন। বিনিময়ে তিন হাজার টাকা পেতেন আল-আমিন। আগ্নিসংযোগের সময় তিনিসহ চারজন একসঙ্গে ছিলেন।

মিরপুরে বিআরসিটি বাসে অগিগ্নসংযোগের অভিযোগে ১৪ নভেম্বর হাফিজুর রহমান, শহীদুল ইসলাম ও মো. শামীকে গ্রেফতার করা হয়। শহীদুল পুলিশকে বলেন, আমি বাসের হেলপারি করি। মাসুদ নামের একজন আমাকে টাকার বিনিময়ে গাড়ি পোড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন বলেন, টাকার বিনিময়ে পেট্রোল হাতে দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অন্য লোকদের দিয়ে আগুন দেওয়াচ্ছে।

এমন অনেক ব্যক্তিকে আমরা আইনের আওতায় আনছি। যাদের গ্রেফতার করেছি তাদের অনেকেই নিম্ন আয়ের লোক। আমরা এদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছি। যেখানেই নাশকতা, সেখানেই গ্রেফতার-এই নীতিতে আমরা কাজ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *