চূড়ান্ত আন্দোলন সফলে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ বিএনপির

চূড়ান্ত আন্দোলন সফলে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ বিএনপির

রাজনীতি স্লাইড

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩ ৯:২১ পূর্বাহ্ণ

চূড়ান্ত আন্দোলন সফলে ঢাকা মহানগরকে টার্গেট করে কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। এজন্য মহানগরের আশপাশের জেলার সাংগঠনিক শক্তি কাজে লাগাতে চায় দলটি।

রোববার রাতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে এসব জেলার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে কয়েকজন নেতা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলাগুলোর সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং নিরসনপূর্ব ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর জোর দেন নেতারা।

এদিকে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও দু-একটি জেলার শীর্ষ পদে থাকা নেতাদের পরিবর্তন করে পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হয়। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটের সঙ্গেও শিগগিরই বৈঠকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তাদের পরামর্শ নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য কর্মসূচি ঠিক করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘দলের সব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবগত আছেন। তিনি খুবই ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটান, যার পুরো সময়টাই সংগঠন এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচিসংক্রান্ত। ঢাকার গেটওয়েগুলোয় যেসব জেলা আছে, চূড়ান্ত কর্মসূচির আগে সেখানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বা কোনো দুর্বলতা থাকলে তা নিরসনে যা করার দরকার, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালনে আশপাশের জেলার নানা দুর্বলতা চিহ্নিত করে বিএনপি হাইকমান্ড। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় মেলে গাজীপুর জেলা ও মহানগরের। ১৩ আগস্ট গাজীপুর জেলার কর্মকাণ্ড নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর কেন্দ্রীয় দপ্তরে বিস্তর অভিযোগ দেন নেতারা। অনৈতিক, একতরফা এবং ব্যাপক সমালোচিত গাজীপুর জেলা বিএনপির কার্যক্রম স্থগিত করে গ্রহণযোগ্য ও আন্দোলনমুখী কমিটি গঠনের আবেদন করা হয় অভিযোগে।

বলা হয়, ‘অনেক যোগ্য, মেধাবী ও প্রবীণ নেতাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যাদের ইউনিয়ন কমিটিতে থাকার যোগ্যতা নেই, তারা জেলা কমিটির বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, সিনিয়রকে জুনিয়র, জুনিয়রকে সিনিয়র করা হয়েছে কমিটির ক্রমান্বয়ে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের কথা উঠে এসেছে, যা দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ও লজ্জার বিষয়।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি একই সঙ্গে দলের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন কিংবা ওয়ার্ড কমিটিতে সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না। এক্ষেত্রে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান একই সঙ্গে কাপাসিয়া উপজেলার সভাপতি পদেও রয়েছেন। জেলার এমন প্রায় তিন ডজন নেতা আছেন, যাদের পদ ২ থেকে ৫টি। জেলার পদ নিয়ে অনেকে কর্মসূচিতে আসেন না, স্থবির হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি পালন করা হয়, যেখানে ব্যাপকসংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুটি পদেই আমি নির্বাচিত। এখন কেন্দ্র যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আরও অন্য নেতাদের একাধিক পদে থাকার বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভবিষ্যতে আমরা চেষ্টা করব পুনর্বিন্যাস করে আরও লোকজনকে যেন জায়গা দেওয়া যায়।’

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই সদস্যের কমিটি রয়েছে। যারা যোগ্য ও পরীক্ষিত, তাদের বাদ দিয়ে সব কর্মকাণ্ড চলছে। এমনকি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনেক যোগ্যদের না রাখার জন্য নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করীম রনির বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ-তিনি ঢাকা বসবাস করেন, কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন না। মহানগরের অনিয়ম, শৃঙ্খলাপরিপন্থি কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিকবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিএনপি রক্ষায় সাবেক ছাত্রনেতা ও ত্যাগীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘জাগ্রত-নব্বই’ নামের একটি সংগঠনও।

জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগরের সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, বড় দলে গ্রুপিং কমবেশি থাকে। বিশেষ করে বড় পর্যায় থেকে যারা রাজনীতি করেন, তারা চান নিজস্ব লোকজন কমিটিতে থাকুক, তার গ্রুপ শক্তিশালী হোক। তবে আমি এতটুকু বলতে চাই-কে কার, তা বড় বিষয় নয়, যোগ্য ও পরীক্ষিতদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। দু-চার দিনের মধ্যে তা কেন্দ্রে জমা দেব।’

সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দূরত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কমিটি করার ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দূরত্ব আছে। এটা একটু তো হয়ই। সাধারণ সম্পাদক আজ পর্যন্ত কোনো কর্মসূচিতে উপস্থিত হননি। তিনি ঢাকা থাকেন। এর মধ্যে আমি জেলখানায় থাকাকালীন সালনায় একটি কর্মসূচি করেছিলেন। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গাড়িতে আসেন, আবার তাদের সঙ্গেই চলে যান।’

মহানগরের সাবেক সহসভাপতি ও কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ভিপি (ছাত্রদল থেকে) এএম আশরাফ হোসেন টুলু বলেন, ‘মহানগরের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। এ নিয়ে আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন সফল করা মুশকিল। যারা দলকে ভালোবাসেন, সাবেক এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্বকে নিয়ে অতি দ্রুত দলকে পুনর্গঠন করা দরকার। বর্তমানে সংগঠন শক্তিশালী হোক, তা চিন্তা করছে না, কে কার লোক অর্থাৎ পকেট কমিটি করা নিয়ে তারা ব্যস্ত।’

নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার কর্মকাণ্ড নিয়েও সন্তুষ্ট নন বিএনপি হাইকমান্ড। একজন নীতিনির্ধারক জানান, মূলত ঢাকার প্রবেশপথের কর্মসূচি সবার চোখ খুলে দিয়েছে। এসব জেলার সক্রিয় ভূমিকা থাকলে কর্মসূচি আরও সফল হতো। ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার কিছুটা ভূমিকা থাকলেও আশপাশের বিভিন্ন জেলার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

তাই রাজধানীর আশপাশের জেলাকে সাংগঠনিক শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকা জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে ঢাকা জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *