আমরা যখন গরুর মাংস খাই; তখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের সতর্কতার বার্তা দেয় প্রিয় জনেরা। কারণ, অনেকেরই ধারণা গরুর মাংস খেলেই বুঝি স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
গরুর মাংসে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকায় অনেকেই সেটি খাওয়া এড়িয়ে চলেন। আবার অনেকে মনে করেন, গরুর মাংসের কোনো উপকারিতা নেই। আসলে এটি একদমই ঠিক নয়। গরুর মাংসেরও আছে অনেক উপকারিতা।
ছবি: সংগৃহীত
পুষ্টিবিদদের মতে, গরুর মাংসের ক্ষতিকর দিক যেমন আছে, তেমনি এই মাংস অনেক উপকারও করে থাকে।
জানলে অবাক হবেন যে, গরুর মাংসে যতো পুষ্টিগুণ আছে সেগুলো অন্য কোনো খাবার থেকে পাওয়া কঠিন।
এখন এই মাংস আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না উপকারী, সেটা নির্ভর করবে আপনি সেটা কতোটা নিয়ম মেনে বা কী পরিমাণে খাচ্ছেন।
ছবি: সংগৃহীত
যতটুকু খেতে পারবেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খাওয়াটা হলো নিরাপদ মাত্রা। এতে কতটুকু মাংস থাকে? এটি একটি কম্পিউটারের মাউস বা একটি তাসের বাণ্ডিলের সমান টুকরা হবে। এই টুকরাতে যতটুকু মাংস থাকে তা খেতে পারবেন। এর বেশি খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে।
চর্বি ছাড়া মাংস
গরুর মাংস মানেই যে সবটা চর্বি, এমনটা নয়। গরুর শরীরের ২টি অংশে চর্বি ছাড়া মাংস পাওয়া যায়। এসব অংশে চর্বির পরিমাণ চামড়া ছড়ানো মুরগির থানের মাংসের চেয়েও কম থাকে। গরুর round এবং loin/sirloin অঞ্চলে এই মাংস থাকে। এসব অংশে চর্বির পরিমাণ ৪.২-৮.২ গ্রাম থাকে, যেখানে মুরগির থানের মাংসে চর্বির পরিমাণ থাকে ৯.২ গ্রাম। মাংস থেকে দৃশ্যমান সব চর্বি বাদ দিয়ে তবেই রান্না করবেন।
যতটুকু ক্যালরি থাকে
৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর মাংস খেলে তা দৈনিক ক্যালরির চাহিদার মাত্র ১০% পূরণ করে। ৮৫ গ্রাম মাংসে থাকে ২০০ ক্যালরি এবং একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ক্যালরি চাহিদা থাকে ২০০০ ক্যালরি।
ছবি: সংগৃহীত
কোলেস্টেরলের মাত্রা
৮৫ গ্রাম sirloin অঞ্চলের মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৪৭ মিলিগ্রাম এবং round অঞ্চলের মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৫৩ মিলিগ্রাম। সুস্থ কারো জন্য কোলেস্টেরলের দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হলো ৩০০ মিলিগ্রাম, হার্টের রোগীর ক্ষেত্রে এটি ২০০ মিলিগ্রাম। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বিপদ সীমা পার হয়ে যায় না। যেখানে একটি ডিমের কুসুমে থাকে ২১২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল।
গরুর মাংসের পুষ্টি
শরীরের জন্য দরকারি ৯টি পুষ্টি মিলবে গরুর মাংস খেলে। সেসব পুষ্টি উপাদান হলো প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং রিবোফ্লেভিন। আমাদের শরীরের পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে প্রোটিন, জিঙ্ক বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়াতে কাজ করে ফসফরাস, আয়রনের কাজ হলো শরীরের পেশিগুলোতে অক্সিজেন প্রবাহে সাহায্য করা, খাদ্য থেকে শক্তি যোগান দিতে কাজ করে ভিটামিন বি১২।
যেভাবে খাবেন
গরুর মাংস রান্নার সময় খুব বেশি তেল-মসলার ব্যবহার করে ভুনা করার বদলে গ্রিল, বারবিকিউ, কাবাব ইত্যাদি তৈরি করে খেতে পারেন। তেল-ঝোল বাদ দিয়ে মাংস খেতে পারলে ক্ষতির ভয় অনেকটাই কমবে।