গণভবনে আ.লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা শনিবার

গণভবনে আ.লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা শনিবার

রাজনীতি স্লাইড

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪ ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে বেড়ে যাওয়া দ্বন্দ্ব দ্রুত মেটাতে চায় আওয়ামী লীগ। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের আগেই এর সমাধান করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এ লক্ষ্যে গণভবনে তৃণমূল নেতা এবং দলীয় জনপ্রতিনিধিদের ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন তিনি। দল ও সরকারের ভাবমূর্তি যেন কোনো ভাবেই ক্ষুণ্ন্ন না হয় সে বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া বিএনপি সামনের দিনে কর্মসূচি দিলে তা মোকাবিলায় করণীয় নিয়েও দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় তৃণমূলের নেতারা দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তার কাছে তুলে ধরবেন নিজেদের নানা সমস্যা ও অভিযোগের কথাও। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ এবং সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) দিকনির্দেশনা দেবেন। সরকারের নানা উন্নয়ন এবং সামনের দিনে যেসব পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানাবেন। নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থাকতে বলবেন। এখনো নানা ধরনের ষড়যন্ত্র আছে, এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে বলবেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা-উপজেলায় দলের মধ্যে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে এটার বিষয়ে একটা কড়া নির্দেশনা থাকবে। কোনো ভাবেই যেন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। নির্বাচন শেষ। এখন সবাই মিলেমিশে কাজ করে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। দল ও সরকারের ভাবমূর্তি যেন কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয় সে বিষয়টিও খুব গুরুত্ব দিয়ে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচন কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র আছে, তাই নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, এ কারণে কিন্তু নৌকাও তুলে দেওয়া হয়েছে। এটা বিরোধীদের জন্যই বার্তা যে-সরকারের সদিচ্ছা আছে ভালো নির্বাচন করার। তারা চায় নির্বাচন আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক হোক।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের তিনি ধন্যবাদ জানাবেন, কৃতজ্ঞতা জানাবেন। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার সংগ্রামে কাজ করার আহ্বান জানাবেন। নিজেদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে সেগুলো ভুলে গিয়ে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলীয় এমপি ও স্বতন্ত্র এমপি এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সংঘাত বেড়েছে। এটি দ্রুত নিরসন করতে না পারলে ভবিষ্যতে এই সংঘাত চরম আকার ধারণ করবে। এছাড়া সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীক থাকছে না। স্থানীয় এমপিরা তাদের নিজস্ব লোক যাতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, সেই চেষ্টা করবেন। এমপি-বিরোধীরাও নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়ে ভোটের মাঠে নামছেন। এতে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এর সুবিধা নেবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা। তাই দলের স্থানীয় নেতারা যেন এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে না জড়ান, বর্ধিত সভায় এমন নির্দেশনা দেবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে, নিজেদের মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। সেটা নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা আসবে। এছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে নানা বার্তা আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা দেবেন। সামনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা এবং জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে যে ভুল বোঝাবুঝিটা হয়েছিল, তা নিরসন করাই লক্ষ্য।

শনিবার ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের এই বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, মহানগর, জেলা-উপজেলার দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় এমপি, জেলা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন।

এছাড়া দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার কৌশলে দলে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা মেটানোর উদ্যোগের অংশ হিসাবে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যদের বিশেষ বর্ধিত সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই বৈঠকে সারা দেশ থেকে তিন হাজারের বেশি দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধি অংশ নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *