খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত মামলা

রাজনীতি স্পেশাল

এপ্রিল ১১, ২০২২ ১২:২৩ অপরাহ্ণ

দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা ৩৭ মামলার ৩৫টিতেই জামিনে আছেন তিনি। বাকি দুই মামলায় তার সাজা হয়েছে। তিনি তার স্বামীর নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট থেকে দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি মামলায় সাজা ভোগ করছেন।

২০০৮ সালে এ মামলা করা হয়। এছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে সেগুলো একনজরে দেখে নেয়া যাক-

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা

ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে ঐ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করলে তা খারিজ হয়ে যায়। একই সঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫।

রায়ে খালেদা জিয়াসহ অন্য তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

নাইকো দুর্নীতি মামলা

কানাডার প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চুক্তি করে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বিচারাধীন।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা

ঢাকার কমলাপুরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গ্যাটকো নামে একটি কোম্পানিকে দেওয়ার অভিযোগে এই মামলাটিও হয় ২০০৭ সালে।

বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলা

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এ মামলা করা হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে দায়ের করা এই মামলার অভিযোগ ছিল- চুক্তিবদ্ধ কোম্পানি শর্ত ভেঙে সরকারের চোখের সামনে অতিরিক্ত এলাকায় কয়লা খনন করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছে এবং খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন।

গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা

২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে হামলার ঘটনায় খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা ইসমাইল হোসেন। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের অপেক্ষায় রয়েছে।

রাজধানীর দারুসসালাম থানায় ১১ মামলা

রাজধানীর গাবতলী বালুর মাঠ ও মিরপুর মাজার রোড সংলগ্ন এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধাদানসহ নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় ১১টি মামলা হয়। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলো বিচারের জন্য উঠলেও হাইকোর্টের আদেশের ফলে এর কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় চার মামলা

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোল বোমা দিয়ে চারজনের গায়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও হতাহতের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা করা হয়। এ মামলাগুলোও হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হয়ে আছে।

কুমিল্লায় গাড়ি ভাঙচুরের মামলা

২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের হায়দারপুল এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং নাশকতার অভিযোগে দুটি মামলা হয়। খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে চলমান এ মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে স্থগিত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *