অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার তিন বছরে বেড়েছে ৩২ শতাংশ

অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার তিন বছরে বেড়েছে ৩২ শতাংশ

স্বাস্থ্য স্লাইড

অক্টোবর ৩০, ২০২৩ ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। গত তিন বছরেই আগের তুলনায় এই অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়েছে ৩১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ফলে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত পাঠ্যপুস্তকে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রসঙ্গ অন্তর্ভুক্তিকরণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে প্রতি এক হাজার জনে দৈনিক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ছিল ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে প্রতি এক হাজার জনে দৈনিক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার কমে আসে ২১ দশমিক ২৬ শতাংশে। ২০১৮ সালে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৯ সালে ২৪ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশে এসে পৌঁছায়। তবে ২০২১ সালে প্রতি হাজারে দৈনিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার এসে দাঁড়ায় ৫২ শতাংশে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি জানান, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের প্রভাবে মারা যায়। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা ৪৯ লাখ ৫০ হাজার জন। যার মধ্যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ সরাসরি রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার কারণেই মারা গেছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ সম্পর্কে জানানোয় তাদের মধ্যে সফলতা এসেছে ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সফলতা পাওয়া গেছে মাত্র ৬ শতাংশ। আর সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চেয়ে কার্যকর হয়েছিল ১২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইউসুফ জানান, সাধারণ মানুষ যাতে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেখলেই চিনতে পারে সেজন্য ওষুধের পাতায় লাল রং ব্যবহারের নিয়ম করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পাতায়ই লাল রং ব্যবহার হয়ে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিক্রিতে ২০ হাজার টাকা জরিমানার আইন করা হয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা আরও অনেক বেশি প্রয়োজন।

মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, শিক্ষা কারিকুলামে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বিষয়ক পাঠ যুক্ত করার জন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠাবো। প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না, এটা শিশুদের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সে সবার আগে পরিবারে শিক্ষাটা প্রচার করবে। ধীরে ধীরে তাদের শেখাতে হবে। এজন্য আমি মনে করি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দিলে ভালো হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স নিয়ে সচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তকে এর অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের প্রভাব, অপব্যবহার, কীভাবে দিন দিন অ্যান্টিবায়োটিক মাটি-পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, এ বিষয়গুলো নিয়ে শিশুদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *