অব্যাহতির পরও অফিস সামলাচ্ছেন সাতক্ষীরা এলজিইডির আব্দুর রহিম

অব্যাহতির পরও অফিস সামলাচ্ছেন সাতক্ষীরা এলজিইডির আব্দুর রহিম

দেশজুড়ে

জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ ১১:২৮ অপরাহ্ণ

মনিরুজ্জামান মনি, সাতক্ষীরা

অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে চাকরি থেকে অব্যাহতির পরেও নিয়মিত অফিস করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সাতক্ষীরা নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসের দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক (মাস্টার রোল) এক কর্মচারী। হিসাব সংরক্ষণ থেকে শুরু করে তার পূর্বের দায়িত্বের সকল কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

পাশাপাশি পূর্বের ন্যায় অনিয়ম ও দুর্নীতির চর্চাও অব্যহত রেখেছেন বলে অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। চাকরিচ্যুত হওয়ার পরেও প্রভাব বিস্তার আর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে তিনি বহালতবিয়তে অফিস করে যাচ্ছেন।

তবে এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জানা গেছে, বিগত ২০২২ সালের ৩ জুলাই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, আগারগাঁও, শেরেবাংলানগর ঢাকার প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন স্বাক্ষরিত এক স্মারকে আব্দুর রহিম হাওলাদারসহ মোট তিন জনকে অব্যহতি দেওয়া হয়।

ওই স্মারকে উল্লেখ করা হয়, ‘সাতক্ষীরা এলজিইডি অফিসের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে সূত্রস্থ স্মারক মারফত দাখিলকৃত প্রতিবেদন অনুযায়ী সাতক্ষীরা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে মাস্টাররোল ভিত্তিক হিসাব সহকারী আব্দুর রহিম হাওলাদার এবং অফিস সহায়ক (মাস্টার রোল) মো. আলমগীর হোসেন ও মো. আহাদুজ্জামান দীর্ঘদিন যাবৎ একই কর্মস্থলে কর্মরত থাকায় অফিসের গোপনীয়তা ফাঁস হওয়া, দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজে জটিলতা সৃষ্টি হওয়াসহ তারা বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় তাদেরকে মাস্টাররোলের চাকরি হতে অব্যহতি প্রদানের সীদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করার জন্য বলা হয়’।

উক্ত নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী ৫ জুলাই সাতক্ষীরা এলজিইডির তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র সরকার স্বাক্ষরিত এক স্মারকে তাদের অব্যহতি কার্যকর করা হয়। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে অব্যহতিপ্রাপ্ত ওই কর্মচারী নিয়মিত অফিসে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও দেখা গেছে আব্দুর রহিম হাওলাদার চাকুরিচ্যুত হওয়া সত্বেও এলজিইডি সাতক্ষীরা অফিসের ঢাকা মেট্রো-হ-৩৩-৬৩৯০ নম্বরের মোটরসাইকেলটিও নিয়মিত ব্যবহার করছেন। এলজিইডি সাতক্ষীরার মাস্টাররোলে হিসাব সহকারী পদ থেকে অব্যহতিপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুর রহিম হাওলাদার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, তিনি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার জামালকাঠী গ্রামের মৃত জমির উদ্দীন হাওলাদারের ছেলে। তিনি ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি তারিখে এলজিইডি/সিই/ই-৪৮/২০০২/১১১০ নং স্মারকে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কাজে যোগদান করেন। মাস্টার রোলে চাকরি করে মাত্র ২০ বছরের চাকুরি জীবনে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি।

এছাড়া নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার সম্পদের সূত্র খুঁজতে দুদকের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা এলজিইডি অফিসে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব বিষয়ে এলজিইডি সাতক্ষীরার মাস্টাররোলে হিসাব সহকারী পদ থেকে অব্যহতিপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুর রহিম হাওলাদার জানান, ‘পূর্বের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়ে সমস্যা ছিলো। সেটা মিটে গেলেই আমাকে পুনরায় বহাল করা হবে। সে মোতাবেক সবকিছু প্রক্রিয়াধীন আছে বলেই অফিসে কাজ করছি’।

এ ব্যাপারে এলজিইডি সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুজায়েত হোসেন অব্যাহতির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় যদি সে অফিসে আশা-যাওয়া করে তাতে কি বা বলা থাকে’। তবে অব্যাহতির পরেও স্ব-পদে কাজের বৈধতা-অবৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা একজন মানুষের রুজির বিষয়। বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার অনুরোধ করে এড়িয়ে যান তিনি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *