এপ্রিল ২৬, ২০২৩ ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ
অভিযুক্তকে বহিষ্কারসহ কমিটি বিলুপ্ত
মুরাদ শাহ জাবাল, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে এক আদিবাসী (গারো) কলেজ পড়ুয়া তরুণী (১৯) কে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খান শাওন (৩০) কে গ্রেপ্তার করেছে ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ। তরুণীর (১৯) লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে শনিবার (২২ এপ্রিল) দিনগত রাতে তরুণীর বসত বাড়ির পাশে ঘটনাটি ঘটে। ভিকটিম শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।
তরুণী জানায়, ঈদের দিন শনিবার রাতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খান শাওন তাদের বাড়িতে এসে তার মায়ের কাছে পান খেতে চায়। এরপর সে তার বাবা মায়ের সাথে ঘরে বসে কথা বলে। ভিকটিম তখন বাড়ির উঠানে বসে ফেসবুক চালাচ্ছিল। এসময় শাওন ঘর থেকে বের হয়ে উঠানে এসে ভিকটিমকে জোর করে টেনে হিচড়ে বাড়ির উত্তর পাশে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়। এরপর তাকে জাপটে ধরে ধ্বস্তাধস্তি শুরু করে এবং মুখ চেপে ধরে পরনের কাপড় খুলে ফেলতে চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ভিকটিমের ডাকচিৎকারে তার বাবা-মা ঘর থেকে বের হয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতার কবল থেকে মেয়েকে উদ্ধার করেন।
ওই কলেজ ছাত্রী আরও জানায়, ঘটনার পর থেকেই তাকে ও তার পরিবারকে ঘটনা জানাজানি না করতে অব্যাহতভাবে হুমকি দিতে থাকে শাওন ও তার পরিবারের লোকজন। পরে সে নিজে এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশিকে ঘটনা জানানো হয়।
এদিকে নিরাপত্তার অভাবে ওই কলেজ ছাত্রী রবিবারই ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও আদিবাসী নেত্রী, উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, ময়মনসিংহ বিভাগীয় এসডিজির সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মিস রবেতা ম্রং এর বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
এদিকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানাভাবে পাঁয়তারা শুরু করে। একইসঙ্গে ঘটনার আপোষ মিমাংসার জন্য চাপ দিতে থাকে বলে জানান ওই কলেজ ছাত্রীর পরিবার। বর্তমানে পরিবারটি নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। ওই কলেজ ছাত্রী এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়ার নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসারসহ পুলিশের একটি দল সোমবার বিকেলে শাহরিয়ার খান শাওন কে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেস খকসী বলেন, ভিকটিম ও তার পরিবারের কাছে তিনি ঘটনা শুনেছেন। ভিকটিম অভিযোগ করায় পুলিশ শাওনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।
আদিবাসী নেত্রী মিস রবেতা ম্রং বলেন, ঘটনার পর নানামুখী চাপে ভিকটিম আমার কাছে এসে আশ্রয় চায়। আমি বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় মহলের সাথে যোগাযোগ করি। শেরপুরের পুলিশ সুপার মহোদয়কে ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছি।
তিনি আস্বস্ত করেছেন ঘটনার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলে। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মেয়েটি সাহসী বলে আজ বেঁচে গেছে এবং প্রতিবাদ করতে পেরেছে। টাকা গেলে টাকা আসে কিন্তু সম্মান গেলে তা আর ফিরে আসেনা। মেয়েটি সবেমাত্র প্রস্ফুটিত হচ্ছে। এমন ঘটনা যেন কারো জীবনে না ঘটে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সংগঠন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড দলের জন্য এবং সমাজের জন্য কলঙ্কের। আমরা কোন অনিয়মকে প্রশ্রয় দেইনা। ঘটনা তদন্তপূর্বক বিচার হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শাওনের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। বর্তমানে সে পুলিশের হেফাজতে আছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে।
শাওনকে বহিষ্কার, কমিটি বিলুপ্ত
এদিকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঝিনাইগাতী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে শাহরিয়ার খান শাওনকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই সাথে কমিটি বিলুপ্তের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
২৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠন বিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ঝিনাইগাতী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খান শাওনকে বহিষ্কার করা হলো। একইসঙ্গে, সাংগঠনিক নিস্ক্রিয়তার কারণে ছাত্রলীগের ঝিনাইগাতী উপজেলা শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হল।
শাওন উপজেলা সদরের শাজাহান খানের ছেলে।