অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে সাংবাদিকদের বক্তব্য দেন না কক্সবাজার জেলা রেজিস্ট্রার!

অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে সাংবাদিকদের বক্তব্য দেন না কক্সবাজার জেলা রেজিস্ট্রার!

দেশজুড়ে

মার্চ ২০, ২০২৩ ১:৪১ অপরাহ্ণ

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন (২)

স্টাফ রিপোর্টার

কক্সবাজার জেলা রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম লোকাল পত্রিকা পড়েন না! এমনকি লোকাল পত্রিকার কাজ কি -একথা বলেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। কক্সবাজারের স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে হয়রানি, অনিয়ম-ঘুষ ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ফলোআপ নিউজের বক্তব্য নিতে গেলে সাংবাদিকদের তিনি অনেকটা দম্ভ নিয়ে একথা বলেন।

এসময় রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি অনেকটা মারমুখী ও উত্তেজিত কণ্ঠে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য প্রদান করেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এছাড়াও সরকারী ল্যান্ড ফোন ছাড়া নিজের ব্যক্তিগত নাম্বারে উল্লেখযোগ্য না হলে কারো ফোন রিসিভ করেন না বলেও জবাব দেন এই কর্মকর্তা।

জানা যায়, কক্সবাজারের রামুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ-হয়রানি, অনিয় ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। উপরি টাকা ছাড়া এ অফিসে কোন মানুষ সরকারী সেবা পায় না। রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক, অফিস সহায় বাবলা পাল ও সাব-রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমানের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে আছেন রামুর জনসাধারণ।

দলিলের মোট মূল্যের প্রতি লাখে গ্রহীতাকে দিতে হয় দেড় হাজার টাকা। এছাড়া অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নিতে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ক্ষেত্রবিশেষে অধিক টাকা ঘুষ দিতে হয়। সাব-রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান তার চাহিদা মোতাবেক অর্থ না পেলে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করেন না। এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করা যায় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আর এসমস্ত ঘুষ আদায় থেকে শুরু করে যাবতীয় দেন দরবার করেন অফিস সহায়ক বাবলা পাল। ঘুষের এসব টাকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতনের মাঝে ভাগবাটোয়ারা হয় বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। মূলত জেলা রেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করেই রামু সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দিনের পর দিন এসব অনিয়ন-দুর্নীতি করে যাচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।

জানা যায়, রেজিস্ট্রি দলিলে সরকারীভাবে প্রতি লাখে পে-অর্ডার করতে হয় সাড়ে ৬%, কিন্তু দলিল গ্রহীতার কাছ থেকে ৯ থেকে ১০% হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর একটি অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নিতে পে-অর্ডার করতে হয় মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার। অথচ গ্রহীতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ টাকা বা তার অধিক। এছাড়া কমিশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করতে ৪০-৫০হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র আরএস পর্চার সাথে নামের একটা অক্ষর ভুল থাকলেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। নাহলে সাব-রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান দলিল রেজিস্ট্রি করেন না।

সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক বাবলা পালের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের ঘুষের মাধ্যমে চলছে দলিল সম্পাদনের কাজ। তার ইশারা ছাড়া এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ফাইল আদান প্রদানও হয় না বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ রয়েছে।

জমি রেজিস্ট্রি বাবদ সাব রেজিস্ট্রারের বেধে দেয়া নির্ধারিত অংকের টাকা না পেলে দলিলে স্বাক্ষর করেন না। সচেতন মহলের কেউ অতিরিক্ত টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে ডকুমেন্টপত্রে ভুল-ত্রুটি সহ নানা অজুহাতে দলিল প্রত্যাখান করেন তাই উপায় না বুঝে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দলিল সম্পাদন করতে হয় ভুক্তভোগীদের।

জোয়ারিয়ানালা এলাকার ভুক্তভোগী দিদারুল আলম অভিযোগ করে বলেন, সরকারীভাবে সাড়ে ৬% পে-অর্ডার জমা করে দলিল সম্পাদনের বিধান থাকলেও অফিসের চাহিদার কথা বলে অফিস সহায়ক বাবলা পাল তার কাছ থেকে দলিল মূল্যের লাখ প্রতি দেড় হাজার করে অর্থ আদায় করেছে। লম্বরী পাড়া এলাকার আবুল কাসেমও একই অভিযোগ করেছেন।

ফতেখাঁরকুলের বাসিন্দা ফিরোজ আহমদ জানান, ফতেখাঁরকুল মৌজার ২০শতক নাল জমির অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নির জন্য তার কাছ থেকে অফিস সহায়ক বাবলা পাল পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করায় সেটি আর পক্ষে করা সম্ভব হয়নি।

মোঃ শহিদ নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, কমিশনের মাধ্যমে তেচ্চিপুল এলাকায় একটি দলিল সম্পাদন করতে তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন রামু সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। সাব-রেজিস্ট্রার স্ব-শরীরে না গিয়ে মুহুরী পাঠিয়ে উক্ত দলিল সম্পাদনের কাজ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

সাব রেজিস্ট্রার ও অফিস সহায়কের এসব কর্মকাণ্ডে দলিল লেখক থেকে শুরু করে দলিল দাতা ও গ্রহীতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। ফলে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছেন।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক বলেন, দলিলমুল্যে লাখ প্রতি ৯-১০% আদায়কৃত অর্থে সাড়ে ৬% সরকারী পে-অর্ডার, দেড়% সাব-রেজিস্ট্রারকে দিতে হয়।

সচেতন মহলের দাবী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনেকটা অপেন সিক্রেট। টাকার নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রামুর সাধারণ মানুষ।

এদিকে দলিল রেজিস্ট্রিকারী ভূমি মালিকরা দুপুর ৩টার মধ্যে না আসলে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত ফি নিয়ে থাকেন। শুধু কি তাই, বাড়তি টাকা আয় হলে কাজের নির্ধারিত সময় গড়িয়ে রাত সাতটা থেকে আটটা নাগাদ অফিস করেন বলে জানা যায়।

জানতে চাইলে রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক বাবলা পাল সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে রামু সাব-রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করেই দলিল সম্পাদন করা হয় বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *