বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ মসজিদ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ মসজিদ

ফিচার স্পেশাল

মে ২৪, ২০২৩ ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

মুসলিম উম্মাদের কাছে ইবাদতের জন্য উত্তম স্থান হলো মসজিদ। এটি মুসলমানের মিলনকেন্দ্র, যেখানে তারা প্রতিদিন পাঁচবার মিলিত হয়ে রবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। পাশাপাশি তাদের পারস্পরিক খোঁজ-খবর রাখে এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলে। বিশ্বে মোট স্বীকৃত দেশের সংখ্যা ১৯৫টি। এর মধ্যে মুসলিম প্রধান দেশ রয়েছে  ৫৬টি এবং বর্তমানে বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩% মুসলিম রয়েছে। এই মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে মোট ৩৬ লাখ মসজিদ রয়েছে। এতো মসজিদের ভিড়ে চলুন জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি মসজিদ সম্পর্কে।

মসজিদ আল হারাম

মসজিদ আল হারাম

মসজিদ আল হারাম

মসজিদে আল হারাম হলো সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত একটি মসজিদ যা মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় স্থাপনা। মসজিদটি বড় মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদটি মুসলিমদের হজ্জযাত্রার সফরের একটি স্থান, যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য জীবনে কমপক্ষে একবার পালনীয়। মুসলিমদের হজের চেয়ে ছোট তীর্থযাত্রা, ওমরাহর একটি প্রধান অংশ হিসেবেও মুসলিমদের সেখানে ভ্রমণ করতে হয়। হজ ও ওমরা উভয়ের অংশ হিসেবে মুসলিমদের মসজিদটি থেকে কাবাকে প্রদক্ষিণ করতে হয়। মসজিদটির আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে রয়েছে কালো পাথর, মাকামে ইব্রাহিম, সাফা ও মারওয়া এবং জমজম কূপ। বর্তমানে মসজিদটি পৃথিবীর বৃহত্তম মসজিদ এবং অষ্টম বৃহত্তম স্থাপনা হিসেবে অক্ষত রয়েছে। মসজিদটি খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ইমাম রেজা সিন্নি

ইমাম রেজা সিন্নি

ইমাম রেজা সিন্নি

ইমাম রেজার মাজার ইরানের মাশহাদে অবস্থিত দ্বাদশবাদী শিয়া মুসলমানদের বারো ইমামের অন্তর্ভুক্ত অষ্টম ইমাম আলী রেজার মাজার শরিফ। মাজার শরিফের ভবনটিতে একটি জাদুঘর রয়েছে। আয়তনের দিক থেকে এই মসজিদটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মসজিদ। ভবনটির সঙ্গে ঘোহারশাদ মসজিদ, একটি জাদুঘর, একটি পাঠাগার, চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি সমাধি ক্ষেত্র, রাজাভী ইউনিভার্সিটি অব ইসলামিক সায়েন্সেস, জিয়ারতকারীদের জন্য খাবার ঘর, সালাত আদায়ের জন্য বিশাল কক্ষ এবং আরো অনেক ভবন রয়েছে।

মসজিদে নববী

মসজিদে নববী

মসজিদে নববী

মসজিদে নববী রাসূল (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর এই মসজিদ নির্মিত হয়। রাসূল (সা.) এর  বাসগৃহের পাশে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমানে  মসজিদটি খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ইস্তিকলাল মসজিদ

ইস্তিকলাল মসজিদ

ইস্তিকলাল মসজিদ

ইস্তিকলাল মসজিদ বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনার রাজধানী সারায়েভো শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ওটোকাতে অবস্থিত দেশটির অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। মসজিদটি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার জন্য ইন্দোনেশিয়ার জনগণ এবং সরকারের পক্ষ থেকে দুই দেশের সংহতি ও সৌহার্দ্যের উপহার ছিল। তাই ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মসজিদ ইস্তিকলাল মসজিদের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। ইস্তিকলাল একটি আরবি শব্দ। এই শব্দের অর্থ ‘স্বাধীনতা’ এই অর্থে মসজিদটি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্বাধীনতার অর্জনের স্মারক হিসেবে গণ্য হয়। মসজিদটি নির্মাণে ইন্দোনেশিয়দের ভূমিকা থাকায়, অনানুষ্ঠানিকভাবে এটি ইন্দোনেশিয়ার মসজিদ ও সুহার্তো মসজিদ নামেও পরিচিত।

বাদশাহী মসজিদ

বাদশাহী মসজিদ

বাদশাহী মসজিদ

বাদশাহী মসজিদ পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে একটি মুঘল যুগের মসজিদ। এটি পাকিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ এবং পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মসজিদ। ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৭১ সালে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং ১৬৭৩ সালে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এই মসজিদ সৌন্দর্যের দিক থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহন করে। পাকিস্তানের লাহোরের ইকবাল পার্কে অবস্থিত মসজিদটি একটি অন্যতম প্রধান পর্যটক আকর্ষণকারী স্থান।

দ্বিতীয় হাসান মসজিদ

দ্বিতীয় হাসান মসজিদ

দ্বিতীয় হাসান মসজিদ

দ্বিতীয় হাসান মসজিদ মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম সক্রিয় মসজিদ এবং বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম মসজিদ। এর ২১০ মিটার (৬৮৯ ফু) উঁচু মিনারটি বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার। রাজা দ্বিতীয় হাসানের নির্দেশনায় মিশেল পিনসো কর্তৃক নকশাকৃত এবং সমগ্র রাজ্যের মরোক্কীয় কারিগরদের দ্বারা নির্মিত এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৩ সালে। ৬০ তলা উঁচু মিনারটির শীর্ষে রয়েছে একটি লেজার, এটি থেকে আসা আলো মক্কার দিকে নির্দেশিত হয়। মসজিদটি আটলান্টিক মহাসাগরের দিক থেকে দৃষ্টিগোচরীয় একটি শৈলান্তরীপে অবস্থান করছে। প্রার্থনাকারীরা সমুদ্রের ওপর প্রার্থনা করতে পারে কিন্তু সমুদ্রের অভ্যন্তর গোচরীভূত করার মতো কোনো কাচের মেঝে নেই। দেয়ালগুলো হাতে কারুকাজ করা মার্বেলের তৈরি এবং ছাদটি সংকোচনযোগ্য। সর্বাধিক ১০৫,০০০ জন প্রার্থনাকারী প্রার্থনার জন্য একত্রিত হতে পারেন। ২৫,০০০ জন মসজিদের ভেতরে এবং আরো ৮০,০০০ জন মসজিদের বাইরের প্রাঙ্গণে একত্রিত হতে পারেন।

জামে মসজিদ, দিল্লি

জামে মসজিদ, দিল্লি

জামে মসজিদ, দিল্লি

মসজিদ-ই জাহান-নুমা দিল্লিতে অবস্থিত ভারতের অন্যতম বৃহত্তম একটি মসজিদ। সাধারণভাবে এই মসজিদটি জামে মসজিদ নামে পরিচিত। মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৪৪ থেকে ১৬৫৬ সালের মধ্যে মুঘল রাজধানী শাহজাহানাবাদে এই মসজিদটি তৈরি করেন এবং মসজিদটির প্রথম ইমাম সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারী মসজিদটির উদ্ভোধন করেন। ১৮৫৭ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত এটি ছিল সাম্রাজ্যের প্রধান মসজিদ।

ফয়সাল জামে মসজিদ

ফয়সাল জামে মসজিদ

ফয়সাল জামে মসজিদ

ফয়সাল মসজিদ পাকিস্তানের বৃহত্তম মসজিদ। যা পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত। মসজিদটি ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তুর্কি স্থপতি ভেদাত ডালোকে এর ডিজাইন করেন। মসজিদটি দেখতে অনেকটা মরুভূমির বেদুঈনদের তাঁবুর মতো। সারা পৃথিবীতে এটি ইসলামাবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সৌদি বাদশাহ ফায়সাল বিন আব্দুল আজিজ এই মসজিদ নির্মাণে সমর্থন এবং অর্থ সাহায্য প্রদান করেন। তাই এই মসজিদটি শাহ্‌ ফয়সালের নামে নামকরণ করা হয়।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদটি  বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। মসজিদটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত। ১৯৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়। মসজিদে একসঙ্গে ৩০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। ফলে ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। তবে মসজিদটিতে জুমার নামাজ ছাড়াও বিশেষত রমজানের সময় অত্যধিক মুসল্লির সমাগম হয় বিধায় বাংলাদেশ সরকার মসজিদের ধারণক্ষমতা ৪০ হাজারে উন্নিত করে।

শেখ জায়েদ মসজিদ

শেখ জায়েদ মসজিদ

শেখ জায়েদ মসজিদ

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম একটি উপাসনালয়। মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে আরব আমিরাত এর প্রয়াত রাষ্ট্র প্রধান শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাইয়ানের নামানুসারে। মসজিদটিতে সাতটি বিভিন্ন ভিন্ন ধরনের মোট ৪০টি গম্বুজ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *