টিটেনাস বা ধনুষ্টঙ্কার পৃথিবীর সব জায়গায় দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গরম এবং আর্দ্র জলবায়ুতে যেখানে মাটি উচ্চ জৈব উপাদান সমৃদ্ধ। এক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কেননা শিশুকে ধনুষ্টঙ্কার থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের এ টিটি টিকা নিতে হয়। যদি আগে কোনো টিকা না নেয়া হয় তবে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সবগুলোই নিতে হবে।
ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস হলো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। যার প্রধান লক্ষণ হলো মাংস পেশীর খিঁচুনি। সাধারণত খিঁচুনি চোয়ালে শুরু হয় এবং তারপরে শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি খিঁচুনির স্থায়ীত্ব কয়েক মিনিট হয়। প্রায়ই তিন থেকে চার সপ্তাহ ঘনঘন খিঁচুনি হতে থাকে। কখনো কখনো খিঁচুনির দমক এতই তীব্র হয় যে তা হাড় ভাঙার জন্যও যথেষ্ট।
টিটেনাসে এ ছাড়াও জ্বর, ঘাম, মাথাব্যথা, গিলতে সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদস্পন্দন ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের তিন থেকে একুশ দিন পর দেখা যায়। সুস্থ হতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। প্রায় দশ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুও হয়ে থাকে। তাই অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের গর্ভাবস্থায় টিটি টিকা নেয়া জরুরি।
তবে টিটেনাসের ৫টি টিকার ডোজ সম্পন্ন করা থাকলে আর গর্ভাবস্থায় এ টিকা নেয়ার প্রয়োজন নেই। আর যদি কেউ কোনো টিকা না নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ৫ মাস পর ১ মাসের ব্যবধানে পর পর দুটি টিটি টিকা নিতে হবে। আর যদি আগে দুই ডোজ টিকা নেয়া থাকে তাহলে প্রতি গর্ভাবস্থায় মাত্র একটি বুষ্টার ডোজ নিতে হবে।
টিকা কেন নেবেন
এই টিকা মা ও শিশু উভয়েরই ধনুষ্টঙ্কার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। প্রসবকালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতায় অসতর্কতা, অপরিষ্কার, ছুরি, ব্লেড বা কাঁচি ব্যবহার করলে (নবজাতকের নাভী কাটার সময়) অথবা নাভীর গোড়ায় নোংরা কিছু লাগিয়ে দিলে নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার রোগ হয়। তাই এসব প্রতিরোধে মায়েদের সময়মত টিটেনাস টিকা নেয়া অবশ্যই জরুরি।
লেখক: ডা. কিশোয়ার পারভীন, সহকারী অধ্যাপক, গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগ, সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল