১০ খাবারে কমবে উচ্চ রক্তচাপ

স্বাস্থ্য

মে ২৩, ২০২২ ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে বলা হয় ‘নীরব’ ঘাতক। কেননা অনেকের মধ্যেই এ রোগ ধরা পড়ে না। আবার ধরা পড়লেও সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেকের এ রোগ জটিল আকার ধারণ করে। এখন শুধু বয়স্ক মানুষই নয়, যেকোনো বয়সী মানুষের মধ্যেই উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা দেখা দিতে পারে। সাধারণত বেশি ওজন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ঘাটতির কারণে এমনটা হয়। এ সমস্যায় চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি।

বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। ‘বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮’-এর হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ ভুগে থাকেন। আর সারা বিশ্বে প্রতি বছর এ সমস্যায় প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যান।

উচ্চ রক্তচাপ কী?

হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দুটি মানের মাধ্যমে এ রক্তচাপ রেকর্ড করা হয় – যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার, আর যেটার সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার।

প্রতিটি হৃৎস্পন্দন অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক প্রেশার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কারো ব্লাড প্রেশার রিডিং যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়।

যেসব খাবার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে

বেশ কিছু খাবার রয়েছে; যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপকারী ভূমিকা রাখে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু খাবার সম্পর্কে—

টক জাতীয় ফল: উচ্চ রক্তচাপ থাকলে খাদ্যতালিকায় টক জাতীয় ফল রাখুন। এসব ফলে ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর থাকে। যা মানুষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এমনি ফলও খেতে পারেন।

ধনে পাতা: সহজলভ্য ধনে পাতাও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকায় ধনে পাতা রাখুন। এ ছাড়াও খেতে পারেন বিভিন্ন সবুজ শাক।

চিয়া ও তিসির বীজ: ছোট, দানাদার শস্যবীজ চিয়া ও তিসি। এই খাবারের পুষ্টিগুণ কিন্তু কম নয়। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবারের মতো উপকারী উপাদান। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ব্রকোলি: ফ্ল্যাভানয়েডস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে ব্রকোলিতে। এ উপাদানগুলো রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ব্রকোলি খেলে রক্তনালী ও নাইট্রিক অক্সাইডের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

গাজর: ক্লোরোজেনিক, পি কিউমেরিক, ক্যাফেইক অ্যাসিডের মতো ফেনোলিক যৌগ রয়েছে গাজরে। রক্তনালিকে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে এই উপাদান; এমনকি কমায় প্রদাহ। ফলে কমে রক্তের চাপ।

পেস্তা বাদাম: হালকা সবুজ রঙের এই বাদাম রক্তচাপ কমাতে পারে। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান হৃদপিণ্ড ভালো রাখে। উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কয়েকটি পেস্তা বাদাম রাখতে পারেন।

কুমড়ার বীজ: অনেকেই কুমড়া খেলেও এর বীজ ফেলে দেন। কিন্তু বীজেও ভালো পুষ্টি রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিরা কুমড়ার বীজ খেতে পারেন। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

বিনস ও ডাল: প্রোটিন ও ফাইবারের অন্যতম উৎস বিনস ও ডাল। এর অন্যান্য পুষ্টিগুণও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এমন ব্যক্তিরা বিনস ও ডাল খেতে পারেন। এত অল্প সময়েই ব্লাড প্রেশার কমে।

টমেটো: টমেটোতে রয়েছে পটাশিয়াম ও ক্যারোটিনাইলয়েড পিগমেন্ট লাইকোপিন। এ উপাদান হৃদপিণ্ডের জন্য খুব ভালো। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যতালিকায় টমেটো রাখুন।

ফ্যাটি ফিশ: মাছের চর্বি দেহের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্তচাপ কমাতে স্যালমন ও ফ্যাটি ফিশ খেতে পারেন। মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো।

পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাসে দেহ থাকবে সুস্থ এবং রক্তচাপ থাকবে নিয়ন্ত্রণে।

সূত্র: এইসময়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *