কম বয়সি ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ইনস্টাগ্রাম

কম বয়সি ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ইনস্টাগ্রাম

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্পেশাল

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

সামাজিক মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা ও তরুণ ব্যবহারকারীদের সুরক্ষার নিশ্চিত করার জন্য একটি যুগান্তকারী উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছে ইনস্টাগ্রাম। প্ল্যাটফর্মটিতে ১৮ বছরের কম বয়সি ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টগুলোকে ‘টিন অ্যাকাউন্ট’ সেটিংস যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে লাখ লাখ কিশোর-কিশোরীর অ্যাকাউন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাইভেট করা হবে এবং অ্যাপটিতে তারা কোন ধরনের কনটেন্ট দেখতে পারবে তা সীমিত করা হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

কিশোর–কিশোরীদের অ্যাপের মাধ্যমে অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে আসতে উৎসাহিত করার জন্যও নতুন বিধিনিষেধগুলো তৈরি করা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৮ বছরের নিচের সব ব্যবহারকারীর জন্য নতুন ‘টিন অ্যাকাউন্ট’ সেটিংস প্রয়োগ করবে ইনস্টাগ্রাম। নতুন আপডেটের পরে ১৬–১৭ বছর বয়সী ব্যবহারকারীরা অ্যাপটিতে সেটিংস নিজেদের পছন্দমতো সাজাতে পারবে। কিন্তু ১৩–১৫ বছর বয়সী ব্যবহারকারীদের জন্য এ ধরনের পরিবর্তনের জন্য অভিভাবকের অনুমতি বাধ্যতামূলক হবে।

গত কয়েক বছরে চালু করা ৩০টির বেশি স্বাস্থ্য বিষয়ক ও ‘প্যারেন্টাল ওভারসাইট’ টুলসের ওপর ভিত্তি করে নতুন ‘টিন অ্যাকাউন্ট’ সেটিংস তৈরি করেছে মেটা। এর আগের আপডেটগুলোর পরেও কোম্পানিটি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। কারণ তারা নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব অভিভাবকদের এবং কিছু ক্ষেত্রে কিশোর–কিশোরীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্যারেন্টাল সুপারভিশন টুলগুলো কিশোর–কিশোরীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এর মাধ্যমে তারা অ্যাপে রয়েছে তা অভিভাবকদের জানানো হয়।

গত নভেম্বরে সিনেট সাবকমিটির শুনানিতে আর্টুরো বেজার নামের নতুন এক ফেসবুক কর্মী মেটার বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় কিশোরদের সুরক্ষায় কোম্পানিটির আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ আবারও বেড়ে যায়। তিনি অভিযোগ করেন, সিইও মার্ক জাকারবার্গসহ মেটার উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহীরা বছরের পর বছর ধরে কিশোর–কিশোরীদের প্ল্যাটফর্মগুলোর কীভাবে ক্ষতি করছে সে বিষয়ে সতর্কতা উপেক্ষা করেছেন।

‘টিন অ্যাকাউন্ট’ আপডেটের ফলে ১৮ বছরের নিচে নতুন এবং বিদ্যমান ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাইভেট করা হবে এবং সবচেয়ে কঠোর ম্যাসেজিং সেটিংসে রাখা হবে। এই সংশোধনের মাধ্যমে কিশোর–কিশোরীরা কেবল ফলো করা অ্যাকাউন্টের কাছ থেকে মেসেজ পাবেন। আরা কেবল সেই সব ব্যক্তিরা কিশোর–কিশোরীদের ছবিতে বা মন্তব্যে ট্যাগ করতে পারবে যাদের কিশোর–কিশোরীরা ফলো করে।

এসব পরিবর্তন আগামী সপ্তাহ থেকে কিশোর–কিশোরীদের জানাতে শুরু করবে ইনস্টাগ্রাম। এছাড়া কিশোর–কিশোরীদের ইনস্টাগ্রাম সবচেয়ে কঠোর কনটেন্ট কন্ট্রোল সেটিংসে রাখা হবে। এই পরিবর্তনের ফলে তাদের এক্সপ্লোর পেজ ও রিলসে ‘সংবেদনশীল’ কনটেন্ট কম দেখাবে। যেমন–প্লাস্টিক সার্জারির প্রচারমূলক পোস্ট।

এই ধরনের কৌশল সীমিত আকারে বছর শুরুর দিকে বাস্তবায়ন শুরু করেছিল ইনস্টাগ্রাম। কিশোর–কিশোরীরা প্রতিদিন অ্যাপে ১ ঘণ্টা কাটানোর পর বের হওয়ার জন্য একটি নোটিফিকেশন পাবে। এছাড়া অ্যাপটি রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ‘স্লিপ মোড’ থাকবে। মোডটি যা নোটিফিকেশন বন্ধ করে এবং ডাইরেক্ট মেসেজে স্বয়ংক্রিয় বার্তা পাঠাবে। অর্থাৎ এই সময়ে অন্য কারও মেসেজ অ্যাপে আসবে না। মেসেজগুলো এই সময়সীমার পরে দেখাবে।

আগামী সপ্তাহ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ নির্বাচিত দেশগুলোতে সব কিশোর অ্যাকাউন্টের জন্য পরিবর্তনগুলো প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছে ইনস্টাগ্রাম।

অ্যাপটিতে নতুন প্যারেন্টাল সুপারভিশন টুল ফিচারও যোগ করা হবে। এর মাধ্যমে সন্তানেরা সম্প্রতি কী কী অ্যাকাউন্টে মেসেজ পাঠিয়েছে তা অভিভাবকেরা দেখতে পারবেন। এ ছাড়া ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের জন্য মোট দৈনিক সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারবেন, রাতে বা নির্দিষ্ট সময়ে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার থেকে সন্তানদের ব্লক করতে পারবেন এবং কিশোর–কিশোরী যেসব ধরনের কনটেন্ট দেখতে চায় সেগুলো সম্পর্কে তথ্য পাবেন অভিভাবকেরা।

আগামী ৬০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার সব কিশোর–কিশোরীদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পরিবর্তনগুলো কার্যকর হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশেও তা কার্যকর করা হবে।

মেটা দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। সমালোচকেরা দাবি করেন, নিরাপত্তা সীমাবদ্ধতা এড়ানোর জন্য কিশোর–কিশোরীরা নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরির সময় বয়স সম্পর্কে মিথ্যা বলার বিরুদ্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

কোম্পানিটি বলেছে, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি প্রয়োগ করছে যা ভুল জন্মতারিখ উল্লেখ করা কিশোর–কিশোরীদের অ্যাকাউন্ট শনাক্তে সাহায্য করবে।

নতুন ফিচারগুলো তাদের সেফটি অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের সঙ্গে পরামর্শ করে তৈরি করা হয়েছে। এই কাউন্সিলে স্বাধীন অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং সংগঠন, যুব পরামর্শদাতা গোষ্ঠী, এবং অন্যান্য কিশোর, অভিভাবক ও সরকারি কর্মকর্তা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *