প্রিয়জনের মৃত্যু হলেই আঙুল কাটা হতো নারীদের

প্রিয়জনের মৃত্যু হলেই আঙুল কাটা হতো নারীদের

ফিচার স্পেশাল

মার্চ ১৪, ২০২৩ ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর আনাচে-কানাচে রয়েছে বিভিন্ন রকমের রীতিনীতি। কোনো দেশের নাগরিকরা শোকপালনে কালো রঙের পোশাক পরেন। আবার অনেক দেশে একই কারণে দেশে একই কারণে রং পাল্টে সাদা হয়। কোথাও কোথাও আবার কাছের মানুষের প্রয়াণের পর রীতি মেনে মস্তক মুণ্ডন করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার একটি উপজাতি এলাকায় আবার পরিজনের মৃত্যুতে নারীদের আঙুল কাটা হতো! হ্যাঁ, একটা সময় এমনই প্রথা চালু ছিল।

 ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া প্রদেশের ওয়ামেনার একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাস দানি উপজাতির। কাছের মানুষের প্রয়াণে আঙুল কাটার রেওয়াজ নিয়ে এক সময় বেশ আলোচিত ছিল। পরিবারের সদস্যের প্রয়াণে শোকপালন হিসাবে আঙুল কাটার রীতি ছিল দানি উপজাতির মধ্যে। অধিকাংশ সময়ই প্রিয়জনের প্রয়াণের পর আঙুল কাটা হতো উপজাতির নারীদের।

ভারতে একটা সময় সতীদাহ প্রথা চালু ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর তার চিতায় প্রাণ দিতে হতো স্ত্রীকে। রাজা রামমোহন রায় ভয়ংকর সেই প্রথা রদ করেছিলেন। তেমনই এক ভয়ংকর প্রথা চালু ছিল ইন্দোনেশিয়ায়। প্রিয়জনের মৃত্যুর পর শোক হিসাবে ইন্দোনেশিয়ার দানি উপজাতির নারীদের আঙুল কেটে ফেলা হতো।

পরিজনের প্রয়াণের পর শোকপালন হিসাবে আঙুল কাটার রীতিকে বলা হয় ‘ইকিপালিন’। কবে এই প্রথা চালু হয়েছিল তা জানা যায় না। কেনই বা শুধুমাত্র নারীদের আঙুল কাটা হতো, সেই কারণও স্পষ্ট নয়। শোনা যায়, অনেক সময় নাকি পুরুষদেরও আঙুল কাটা হতো। তবে সেই সংখ্যাটা খুবই কম।

শোকপালন হিসাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের অঙ্গচ্ছেদ করতে হতো নারীদেরই। প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকের প্রতীক হিসাবে আঙুল কাটা হতো নারীদের। দানি উপজাতির মানুষদের বিশ্বাস ছিল যে, আঙুল কাটলে মৃতের আত্মা শান্তি পাবে।

অঙ্গচ্ছেদ করতে হতো নারীদেরই। ছবি: সংগৃহীত

অঙ্গচ্ছেদ করতে হতো নারীদেরই। ছবি: সংগৃহীত

কীভাবে কাটা হতো আঙুল? এই পদ্ধতিও বেশ অন্যরকম। পুরো আঙুল কিন্তু কাটা হতো না। আঙুলের অগ্রভাগের অংশ শুধুমাত্র কাটা হতো। আঙুল কাটার আগে বিশেষ পদ্ধতি মানা হতো। আঙুল কাটার আগে আধ ঘণ্টা ধরে সংশ্লিষ্ট আঙুলটি দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা হতো। আঙুল কাটার সময় যাতে যন্ত্রণা না হয়, সে কারণেই এই পদ্ধতি মেনে চলা হতো।

পাথরের পাত বা পাথরের তৈরি ধারালো অস্ত্র দিয়ে দানি উপজাতির নারীদের আঙুলের অগ্রভাগ কাটা হতো। প্রাচীন কালে ধারালো পাথর দিয়েও আঙুলের অগ্রভাগ কাটা হতো। আঙুলের কাটা অংশটি পরে পুড়িয়ে ফেলা হতো। না হলে তা পুঁতে দেওয়া হতো। মূলত নারীদের আঙুল কাটতেন তাদের পরিবারের সদস্যরাই।

এই রীতি পালন থেকে ছাড় দেওয়া হতো না উপজাতির শিশুকন্যাদেরও। তবে তাদের ক্ষেত্রে আঙুল কাটা হতো না। পরিবর্তে আঙুল কামড়ে দিতেন তাদের মায়েরা। এটা অনেকটা হিন্দু সমাজে মায়েদের মতো। কুদৃষ্টি থেকে সন্তানকে রক্ষা করতে হিন্দু সমাজে বাচ্চাদের কড়ে আঙুল কামড়ে দেন মায়েরা।

দানি উপজাতি। ছবি: সংগৃহীত

দানি উপজাতি। ছবি: সংগৃহীত

দানি উপজাতির নারীরা বিশ্বাস করতেন, তাদের শিশুকন্যার আঙুল কামড়ে দিলে তারা দীর্ঘায়ু হবে। তবে পরিজনের প্রয়াণে বাড়ির নারীদের আঙুল কাটার এই রীতি অনেক আগেই নিষিদ্ধ করেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। এখন আর এই রীতি পালন করা হয় না।

শোনা যায়, সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গোপনে অনেক সময়ই নাকি এই প্রাচীন প্রথা পালন করা হয়। দানি উপজাতির এমন অনেক প্রবীণ নারীকেই দেখতে পাওয়া যায় যাদের আঙুলের অগ্রভাগ কাটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *