নাকুগাঁও স্থলবন্দর উন্নয়নে আওয়াজ তুলতে হবে : বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান

নাকুগাঁও স্থলবন্দর উন্নয়নে আওয়াজ তুলতে হবে : বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান

জাতীয়

নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ৯:১২ অপরাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টার।।

শেরপুর জেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর বাংলাদেশ-ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে বাণিজ্যিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দর। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নানা সমন্বয়হীনতা এবং অবহেলার কারণে বন্দর থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব তুলে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অবিলম্বে স্মার্ট নাকুগাঁও স্থলবন্দর বিনির্মাণে কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন শেরপুর জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত ‘স্মার্ট নাকুগাঁও স্থলবন্দর বিনির্মাণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি সুনামগঞ্জের সন্তান। জুতা ছাড়া স্কুলে যেতাম। এখন উন্নয়ন হয়েছে। তারপরও পিছিয়ে। আপনাদের শেরপুরও তুলনামূলক অনেক পিছিয়ে আছে। ব্যক্তিগতভাবে শেরপুর গিয়েছিলাম। দেখেছি আসলেই পশ্চাদপদ একটি জনপদ। মূলত কথা বলতে হবে, আওয়াজ তুলতে হবে। কবি বলেছেন, ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে’। আপনাদেরও জাগতে হবে সংশ্লিষ্টদের সাথে বারবার আলোচনা করতে হবে। নিজেদের দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে৷

জিল্লুর রহমান বলেন, এশিয়ান হাইওয়ে, সাসেক, বিমস্টেক হচ্ছে। সেখানে শেরপুর কানেক্টেড হতে পারছে না। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার সাথে আপনাদের সড়ক যোগাযোগ উন্নত করতে হবে। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান আরো বলেন, আমি সম্প্রতি নাকুগাঁও স্থলবন্দর সফর করেছি। বন্দর পরিস্থিতি ভালো দেখিনি। আমরা ভারতের সাথে সম্প্রতি কথা বলেছি। আমি স্পেশালি বলেছি আপনাদের মেঘালয়ের পাশে আমাদের নাকুগাঁও বন্দর। আপনাদের নেই কেন। এই বন্দরে সারাবছর আমাদানি-রপ্তানি এবং পর্যটন যোগাযোগ হতে পারে।

তিনি ফসলি জমি রক্ষায় গ্রাম সম্প্রসারণরোধে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া করে আলাদা বাড়ি করা যাবে না। গ্রাম বড় করা যাবে না। একই পরিবারের সন্তান আলাদা কেন থাকবে? সবাইকে এক বাড়িতে থাকতে হবে। নতুন বাড়ি করে ফসলি জমির ক্ষতি করা যাবে না। জমি নষ্ট না করে উপরের দিকে উঠতে হবে। প্রয়োজনে কাঠের বাড়ি দোতলা করতে হবে। তবুও জমি নষ্ট করে আলাদা থাকা যাবে না।

পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লি. এর ডিরেক্টর মার্কেটিং ও সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির) এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব দিলদার আহমেদ এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক যুগ্মসচিব এবং ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল প্রফেসর ড. রিয়াজুল হাসান সম্রাট, শেরপুর জেলা সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শফিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল আদিল রূপস, শেরপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক শুভ সাদী, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র অফিসার সুলতান মাসুদুজ্জামান, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসনে মালিহা হায়াত।

স্বাগত বক্তব্যে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ এর আহ্বায়ক ও প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে স্মার্ট রাষ্ট্র গঠনের যে প্রচেষ্টা চলছে সেজন্য দরকার স্মার্ট অর্থনীতি ও কানেক্টিভিটি। নাকুগাঁও স্থলবন্দর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কানেক্টিভিটি কেন্দ্র। বাংলাদেশ-ভারত-ভুটানের ত্রিপাক্ষিক সমঝোতার অভাবে সম্ভাবনাময় এ বন্দরটি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। আমরা চাই সুষ্ঠু এবং সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই স্থলবন্দরকে কার্যকর করে তোলা হোক।

মহিউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ভুটান বাংলাদেশ থেকে পোশাক, ঔষধ ও শিল্প কারখানার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করতে চায়। সেখান থেকে ফলমূল ও কিছু পণ্য আমরা আনতে পারি। এছাড়া মেঘালয়, শিলিগুড়ি ও আসামে যাতায়াতসহ আমদানি-রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

আলোচনা সভায় লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও ইজি গ্রুপের উপদেষ্টা দিলদার আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে মেঘালয়সহ ভারতের পূর্বাঞ্চলে এবং ভুটানে রপ্তানিযোগ্য অনেক পণ্য রয়েছে। নাকুগাঁও স্থলবন্দর এই অঞ্চলের বিশাল এরিয়া কভার করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে বন্দরটি দিনদিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

দিলদার আহমেদ বলেন, নাকুগাঁও স্থলবন্দরে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনায় আবাসন, বিনোদন, নিরাপত্তা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং পর্যটন খাতে নজর দিতে হবে। বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বিত পদক্ষেপ এবং ভারত-ভুটানের সাথে যৌথ সমন্বয় সম্ভব হলে বার্ষিক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করা সম্ভব।

শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, শেরপুর পর্যটনসমৃদ্ধ একটি জেলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের বেশ কিছু বিষয়ে সমন্বয়হীনতার কারণে আমরা এখনও পশ্চাদপদ। বিগত পনের-বিশ বছরে যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা পরিলক্ষিত হয়নি। তবে সীমান্তের ওপারে যে দেশগুলো আছে তাদের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক উন্নত। আমরা তাদের সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি করে দেশের রাজস্ব খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি। ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটানের সাথেও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এক্ষেত্রে নাকুগাঁও স্থলবন্দর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত হবে আর সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত স্মার্ট নাকুগাঁও স্থলবন্দর বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল প্রফেসর ড. রিয়াজুল হাসান সম্রাট বলেন, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বিত উদ্যোগে ভারত ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ভুটান একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় তারা অনেক পিছিয়ে। সেজন্য দেশটিতে আধুনিক অনেক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা আমাদের দেশ থেকে শিল্পপণ্য নিতে চায়। আমরা দিতে পারছি না। এজন্য কানেক্টিভিটি দরকার। ভারতের সাথে সমন্বয় দরকার। সুতরাং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

আলোচনা সভায় সহকারী অধ্যাপক মো. মাকছুদুর রহমান, সুমন আহাম্মেদ, মো. আনোয়ার, মো. সোবহান, হাসান মাহমুদ, শামীম হায়দান হৃদয়, মশিউর রহমান, মো. নজরুল, মো. আব্দুল মন্নান, খালিদ রহমান খুশবু, মো. শেখ ফরিদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবী এলিজা রহমান অদিতি, মো. সেলিম রেজা, আসলাম ইকবাল, রাশিদুল ইসলাম, মো. ফরিদ মন্ডলসহ শেরপুর জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *