মনিরুজ্জামান মনি, সাতক্ষীরা
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-২৭৬২) ব্যক্তিগত কাজের ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. মানিক হোসেনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি খুলনায় ব্যক্তিগত কাজ সেরে সাতক্ষীরায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যায় ওই গাড়িটি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি সিনিয়র সহকারী প্রেকৌশলী মো. মানিক হোসেন নিজে চালাচ্ছিলেন।
তবে বিষয়টি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সাতক্ষীরা এলজিইডির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তাদের দাবি গত শনিবার (৭ অক্টোবর) সরকারি কাজ পরিদর্শন করে ফেরার পথে গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তারা আরও দাবি করেন ছুটির দিনে হলেও গাড়িটি সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী নিজে নয় ড্রাইভার চালাচ্ছিলেন।
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এ বিষয়ে কথা হয় সাতক্ষীরা এলজিইডির গাড়ী চালক রজিবুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, ‘গাড়ি দুর্ঘটনার দিন গত শনিবার (৭ অক্টোবর) তিনি অফিসে ছিলেন না। এমনকি সাতক্ষীরা এলজিইডির কোন কর্মকর্তাকে তিনি গাড়িতে কোথাও নিয়ে যাননি। তিনি সাপ্তাহিক ছুটিতে ছিলেন’।
সাতক্ষীরা এলজিইডির অপর গাড়ি চালক আনোয়ার হোসেন জানান, ‘তিনি ছুটিতে আছেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না’।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাতক্ষীরা এলজিইডির এক কর্মচারী জানান, ‘সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে প্রায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা অথবা রাতে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. মানিক হোসেন নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি গাড়ি নিয়ে স্ত্রী সন্তানসহ বাড়িতে যান। আবার শনিবার সাতক্ষীরায় ফিরে আসেন। নিয়মবহির্ভুত হলেও ছুটির দিন হওয়ায় কোন ড্রাইভার ছাড়াই নিজে গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে যান ওই কর্মকর্তা’।
এদিকে দুর্ঘটনা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গাড়িটি মেরামত করতে দেয়া গ্যারেজে সরজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা এলজিইডির (ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-২৭৬২) নম্বরের গাড়িটি মেরামতের কাজ চলছে। গ্যারেজ মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, ‘গাড়িটি দুর্ঘটনার কারণে হেডলাইট ও ব্যাকলাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া গাড়ির সামনের বেশ কিছু অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে’। গাড়িটি কবে গ্যারেজে নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রবিবার গ্যারেজে নেওয়া হয়েছে। তবে গ্যারেজে কর্মরত শ্রমিকরা জানান গাড়িটি শনিবার গ্যারেজে নেওয়া হয়েছে। তারা শনিবার থেকেই ওই গাড়ি মেরামতের কাজ করছেন’।
অভিযুক্ত সাতক্ষীরা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. মানিক হোসেন জানান, ‘তিনি তালা উপজেলায় একটি কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে তালা উপজেলার মাগুরা ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছালে বৃষ্টির কারণে ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে গাড়ির হেডলাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়’। তবে তালা উপজেলার কোন জায়গায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এবং কোন ড্রাইভার গাড়িটি চালাচ্ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে অফিস কক্ষের বাইরে চলে যান।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী গাড়িটি নিয়ে কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে’। সরকারি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্টিং করেছেন কি’না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা জানান, ‘যেহেতু ছোট দুর্ঘটনা ঘটেছে তাই রিপোর্টিং করা হয়নি। আমি গাড়িটির হেডলাইট মেরামত করে নিতে বলেছি’।
সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি হজ্বে গিয়েছিলাম। গত ১ তারিখ থেকে যোগদান করেছি। এ সময়ের মধ্যে এমন কোন ঘটনা আমার সামনে পড়েনি’।