নগদ-রকমারি বেস্ট সেলার অ্যাওয়ার্ড পেলেন যারা

ফিচার শিল্প ও সংস্কৃতি স্পেশাল স্লাইড

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ ১:১১ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন বই বিপণন সংস্থা রকমারি ডট কমের উদ্যোগে দেওয়া হলো ‘নগদ-রকমারি বইমেলা বেস্টসেলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’। পুরস্কার দেওয়া হয় ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত রকমারি থেকে সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের লেখকদের।

ফিকশন, নন ফিকশন, ধর্মীয় এবং ক্যারিয়ার ও একাডেমিক- এ চার শাখায় রকমারিতে সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া বইয়ের ৪ জন লেখক ও ৪টি বইকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া একইসঙ্গে ২১টি ক্যাটাগরির ২১ জন লেখক ও ২১টি বইকেও সম্মাননা জানানো হয় এ অনুষ্ঠানে।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধায় রাজধানীর খামার বাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত ঝমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

  • ফিকশন বিভাগে কিংবদন্তী পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত ‘বাইশের বন্যা’ বইয়ের জন্য বেস্টসেলার লেখক হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জনপ্রিয় তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। নন-ফিকশন শাখায় আদর্শ প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত ‘বিজনেস ব্লুপ্রিন্ট’ বইয়ের বেস্টসেলার লেখক হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মুহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চন।
  • ধর্মীয় বিভাগে সত্যায়ন থেকে প্রকাশিত ‘কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ’ বইয়ের জন্য অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন আরিফ আজাদ। ক্যারিয়ার ও অ্যাকাডেমিক বিভাগে ইনফিনিটি পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ‘ম্যাজিক ম্যাথ’ বইইয়ের জন্য অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মোত্তাসিন পাহলভী।

অনুষ্ঠানে লেখকদের পাশাপাশি বেস্ট সেলার বইয়ের প্রকাশকদেরও অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

এ ছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বেস্টসেলার হয়েছেন উপন্যাসে সাদাত হোসাইন, সায়েন্স ফিকশনে মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কমিক ও রম্যতে অস্তিক মাহমুদ, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধে আসিফ নজরুল, জীবন ইতিহাসে মহিউদ্দিন আহমদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন ফকির, আত্ম-উন্নয়ন ও মোটিভেশনে প্রিতম মুজতাহিদ, বিবিধ শাখায় ড. আমিনুল ইসলাম, কুরআন ও হাদিসে জোবায়ের আল মাহমুদ, ইসলামি ইতিহাস-ঐতিহ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ, ইসলামী আদর্শ ও মতবাদে মিরাজ রহমান, ভাষা ও অভিধানে সাইফুল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ভর্তি শাখায় বিজ্ঞানবিদ্যা টিম।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানের শুরুতে লাইভ কুইজের মাধ্যমে ৩০ জন দর্শককে পুরস্কৃত করা হয় এবং আয়োজনের শেষে অনুষ্ঠিত হয় র‍্যাফেল ড্র। র‌্যাফেল ড্রতে অনুষ্ঠানে আসা দর্শক ও অতিথিদের মধ্য থেকে ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

রকমারির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. সৌমিত্র শেখর ও পুথিনিলয় প্রকাশনীর প্রকাশক ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বইয়ের মত বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারা পরম আনন্দের বিষয়। রকমারি মানেই বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান। একসময় বাংলাদেশে বই বিক্রির জন্য লেখক ও প্রকাশকদের যে দুশ্চিন্তা ছিল সেই দুশ্চিন্তা দুর করেছে রকমারি ডট.কম। রকমারি প্রতিবছর যে বেস্ট সেলার এয়ার্ড দেয় এটি লেখক ও প্রকাশকদের আরো উৎসাহিত করে। এমন প্রোগ্রামের জন্য রকমারিকে ধন্যবাদ জানাই।

মন্ত্রী বলেন, এখন মাত্র ৩০ টি দেশে রকমারি বই পৌঁছে দিচ্ছে। সামনের দিনে রকমারি সারা পৃথিবীর মানুষেরর কাছে বাংলা বই পৌছে দিতে কাজ করবে আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী আরো বলেন, রকমারির এই প্রচেষ্টাকে দুঃসাহসী বললেও কম হবে যে, একটা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বইকে তাদের ব্যবসার পণ্য নির্ধারণ করেছে। রকমারি সবচেয়ে বড় কাজ করেছে যেটা, সেটা হলো প্রকাশকদের বই বিক্রির চ্যালেঞ্জকে সহজ করে দিয়েছে। এমনকি লেখক, পাঠক, প্রকাশক সবার জন্যই সহজ মাধ্যম এনেছে রকমারি। এখন রকমারি বললেই বুঝা যায় এটা বই ব্রিকির একটি আস্থাশীল অনলাইন প্লাটফর্ম। তবে ই-বুক, অডিও বুক আমার কাছে চ্যালেঞ্জ মনে হয়েছে। কারণ এই দুটো জিনিস বস্তুগত কোনো বিষয় নয়। একবার যখন ডাউনলোড করে নিয়ে যায় তারপর সেটা যত ইচ্ছে কপি করবে; সেক্ষেত্রে বিজনেস কীভাবে হবে সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। এই পাইরেসি কীভাবে রোধ করা যাবে সেটা আমি জানি না। আমার মনে হয় এক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কার হয় ১৪৫৪ সালে। ভারতে আসে ১৫৫৪ সালে। এরপর ১৭৭৮ সালে বাংলাদেশ সীমান্তে আসে। ১৮৬৩ সালে সেটা দেশের ভিতরে আসে। এর থেকে বুঝা যায় আমরা কতটা পিছিয়ে ছিলাম। আমাদের সময়ে বাংলাদেশের লেখকের বই কতটা খুঁজে পেতাম সেটা আমার বয়সীরা বলতে পারবে। যদি ওপার বাংলা থেকে বই না আসতো আমাদের সময়ই কাটতো না। সেই জায়গা থেকে এখন যে রুপান্তর হয়েছে সেটা আজকের রকমারির এই প্রোগ্রাম থেকেই প্রমাণিত হয়।

‘প্রযুক্তি হবে মানুষের জন্য, মানুষের বিকল্প নয়’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছে। দিন দিন প্রকূশ্যে আসার সুযোগ বেড়েছে। বর্তমানে মানুষের নিজেকে প্রকাশ করার যে সুযোগগুলো আছে আগামী দিনে প্রযুক্তি সেটার পরিধি আরো বাড়িয়ে দিবে। তবে প্রযুক্তিকে যেন আমরা প্রতিস্থাপন না করি। প্রযুক্তি হবে মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য, মানুষের বিকল্প যেন না হয়।

এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বরগুনায় ৪টা লাইব্রেরি করে দিয়েছি। আমরা যদি সবাই মিলে চেষ্টা করি তাহলে বই পড়ার ধারা সারাদেশে পৌঁছে যাবে। ‘বইয়ে বইয়ে সয়লাব হোক ৫৬হাজার বর্গমাইল’ খুবই চমৎকার একটি আহ্বান। আমার খুবই ভালো লেগেছে। এই আহ্বান এখন থেকে আমিও সব জায়গায় পৌঁছে দিবো। রকমারিকে ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাই তাদের এই মহৎ প্রচেষ্টার জন্য। এই স্লোগানের মত আমিও বলতে চাই সারাদেশের মানুষের কাছে খুব সহজেই বই পৌছে যাক। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক সারা দেশের মানুষ। সমৃদ্ধ হোক সকলের চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞানের ভান্ডার।

অধ্যাপক ডা.আনোয়ারা বেগম চৌধুরী (আনোয়ারা সৈয়দ হক) বলেন, রকমারি আমাদের বইয়ের জগতকে এত দূর নিয়ে গেছে যে, এখন কেউ বইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলি রকমারি ডটকমকে বলো। রকমারি আমাদের কত কাজ কমিয়ে দিয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বই প্রকাশ নিয়ে কত চিন্তা, বইটি মানুষের কাছে পৌঁছলো কিনূ, বিক্রি হয় কিনা; কিন্তু রকমারি সেই চিন্তা দূর করে দিয়েছে। যারা আমাদের বই বাজারে আনে। তাদের মুখ দেখে মনে হয় তারা আমাদের বই প্রকাশ করে ভুল করে ফেলছে। কিন্তু রকমারি ডটকম দেখিয়ে দেয় ভুল ছিলো না। বই বিক্রির জন রকমারি ডটকম বিশাল সম্মাননাও জানায়।

ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, একটা বইয়ের জন্য বাংলাবাজার যাবো, এই চিন্তায় যখন বিমর্ষ হওয়ার উপক্রম হলো ঠিক সেই সেই সময় রকমারি আমাদের কাছে এসেছে স্বপ্নের মতো। এত চমৎকার, এত চমৎকার, যেকোনো বই রকমারি ডটকমে পাওয়া যায়। এমনকি বিদেশী বইও পাওয়া যায়। আপনাদের যেই পরিকল্পনা সেটাকে সাধুবাদ দেই। কিন্তু একটা শঙ্কা। স্টেডিয়াম মার্কেট দেখেছি বই হারিয়ে গেছে, আজিজ সুপার মার্কেটে দেখেছি বইয়ের বদলে এটা-ওটা। রকমারিতে যদি এটা ওটা চলে আসে তাহলে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবে বই। আমি আহ্বান জানাবো বইয়ের সাথে এটা-ওটা যুক্ত না করে সেটা যেন আলাদা রাখা হয়।

প্রকাশক শ্যামল পাল বলেন, রকমারি ফটোকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন দেখে বলতাম লগোটা সুন্দর কিন্তু এটা কী? আস্তে আস্তে জানলাম রকমারি ডটকম আমাদের প্রকাশনা জগতে অনেক উপরে নেয়ার জন্য একটা সিঁড়ি তৈরী। এখন আমরা সেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি।

নগদ-রকমারি বেস্ট সেলার অ্যাওয়ার্ড পেলেন যারা

সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন, বাংলাদেশে আমাদের স্কেলে যে কয়টা কোম্পানী টিকে আছে তাদের মধ্যে একমাত্র আমাদের কোনো একস্ট্রা ইনভেস্টর নেই। এমনকি আমাদের কোনো ব্যাংক লোন নেই। এতদিনে সারা পৃথিবীর ব্যবসার যে মডেল তৈরি হয়েছে সেটা কিন্তু পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখনকার স্টার্টআপ মডেলগুলোর লাভ করার কোনো পরিকল্পনাই অনেক সময় থাকে না। এই যেমন ফুডপান্ডা লস করেছে। শুধু বাংলাদেশে সাড়ে ৮ শ কোটি টাকা লস করেছে। কারণ আমরা ধারণা করি একজন কম্পিউটার নিয়ে বসে আছে, বিজ্ঞাপন দিচ্ছে আর পণ্য বিক্রি করছে। বিষয়টা কিন্তু অত সোজা না। পাঠাও, উভার, বিক্রয় ডটকম লসে আছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া আমরা আমাদের স্ব অর্থায়নে টিকে আছি। আমাদের এখন ১১টা প্রতিষ্ঠান আছে।

রকমারি চেয়ারম্যান বলেন, পাবলিশাররা একসময় আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করত, কিন্তু এখন তারা আমাদের বন্ধু মনে করেন, এটিই আমাদের সফলতা। গত ১২ বছর ধরে আমরা যে চেষ্টা করছি সেই চেষ্টার সফলতা বিফলতা দুটি বিষয়ই আছে। তবে আগামীতে পাবলিশার ও লেখকদের নিয়ে পাঠকদের দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দেওয়ার জন্য যত রকম চেষ্টা করার দরকার আমরা করে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতায় রকমারি আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

অনুষ্ঠানের টাইটেল পার্টনার ছিল ডাকবিভাগের ডিজিটাল লেনদেন নগদ। পাওয়ার্ড বাই ইস্পাহানি এবং গিফট পার্টনার ছিল কেয়ার নিউট্রিশন, ন্যাচারালস, অর্গানিকাওন, সেভেন ডেজ নোটস ও যাদরো ডট কম ।

এসময় রকমারি ডটকম এর সহ প্রতিষ্ঠাতা জুবায়ের বিন আমিন ও মো. খায়রুল আলম রনি উপস্থিত ছিলেন।

/এসএস/শীখ/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *