৩৫ কাঠুরিয়ার গণহত্যার বিচারের দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

দেশজুড়ে

সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩ ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টার, শেখ জাহাঙ্গীর আলমঃ

৯ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি জেলা পাকুয়াখালী ৩৫ কাঠুরিয়া গণহত্যার বিচারের দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।

আজ ৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) শিশু কল্যাণ পরিষদের ভিআইপি কনফারেন্স হলে রাঙ্গামাটি জেলা পাকুয়াখালী ৩৫ কাঠুরিয়া গণহত্যার বিচারের দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাকুয়াখালীতে ১৯৯৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ৩৫ কাঠুরিয়াকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (তথাকথিত শান্তিবাহিনী) হত্যা করে। সেই থেকে পার্বত্য এলাকায় বাঙ্গালীরা এ দিনটিকে পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস হিসেবে পালন করে।

১৯৯৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর শান্তিবাহিনী লংগদুর ৩৬ জন কাঠুরিয়াকে ব্যবসায়িক লেনদেনের কথা বলে পাকুয়াখালী নামক গহীন অরণ্যে ডেকে নিয়ে যায় এবং তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেখান থেকে ইউনুস আলী নামের এক কাঠুরিয়া সেদিন কোন ভাবে পালিয়ে বেঁচে যায়। পরে তিনি গ্রামে ফিরে এসে গ্রামবাসীকে বিস্তারিত জানালে আমবাসী সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় পাকুয়াখালী গহীন অরণ্যের একটি দুইশ ফুটের খাপ থেকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ২৮টি লাশ উদ্ধার করেন। বাকী ৭জন কাঠুরিয়ার লাশের কোন হদিস মিলে নি।

মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে আসা কাঠুরিয়া ইউনুস আলী বলেন, “সন্তু লারমার সন্ত্রাসীরা ৩৬ জন কাঠুরিয়াকে ৫/৬ জন ভাগ করে বেঁধে ৭টি গ্রুপে পাকুয়াখালীর গহীন অরণ্যে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের সবার হাতে ছিল অস্ত্র, ধারালো দা ও ভারতীয় ১ ফুট লম্বা ছুরি।” প্রত্যক্ষদর্শী ও ইউনুস আলী আরো বলেন, প্রতিটি বাঙ্গালী কাঠুরিয়াকে দা ও ভারতীয় ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে আঘাত করে। শরীরের প্রতিটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। লাশ উদ্ধারের সময় দেখা যায়, লাশগুলো পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো পঁচে গেছে। কোন রকম ভাবে পঁচে যাওয়া লাশগুলো লংগদুতে নিয়ে আসা হয় ৯ থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

১৯৯৬ সালে এই ট্রাজেডি হলেও আজ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার হয়নি। বিচারের আর কোন আশাও দেখা যাচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা সন্তু লারমা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার প্রতিশ্রুতি তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী এমপি’রা দিলেও তার ১ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের পার্বত্য চুক্তির শর্ত তা ব্যাহত করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সকল হত্যাকাণ্ড ও মামলা থেকে সন্ত্রাসীদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এমনকি দায়মুক্তিও দেওয়া হয়। যার ফলে স্বজনহারা পরিবারগুলো যেমন বিচার পায়নি, তেমনি ক্ষতিপূরণও পায়নি। স্বজনহারা মানুষগুলোর সরকারের কাছে একটাই দাবি যেনো তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিচারের কাঠগড়ায় মুখামুখি করা হয়।

লংগদু পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযুদ্ধা মোঃ মনিরুজ্জামান মনির, সহ-সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রিয় কমিটি, প্রধান বক্তা মোঃ মো শেখ আহমেদ (রাজু) সহ-সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রিয় কমিটি বিশেষ অতিথি এডভোকেট আলম খান আইন বিষয়ক সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রিয় কমিটি, মোঃ ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ সিঃ সহ-সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখা, ইব্রাহিম খলিল অপি, আহ্বায়ক পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পারষিদ, ঢাকা মহানগর শাখা, দিদারুল আলম, সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখা, রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয় শাখা, সভাপতিত্ব করেন আব্দুল হামিদ রানা, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, ঢাকা মহাননগর শাখা ও সঞ্চালনা করেন রাসেল মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখা এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের ঢাকা মহানগর, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের, ঢাকা মাহানগর, ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইবেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *