২০২৪ সালে এআই’র ভবিষ্যৎ নিয়ে যা ভাবছেন বিল গেটস

২০২৪ সালে এআই’র ভবিষ্যৎ নিয়ে যা ভাবছেন বিল গেটস

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্পেশাল

জানুয়ারি ২, ২০২৪ ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের নানা প্রান্তের বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনসংক্রান্ত গবেষণার বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। নতুন উদ্ভাবন বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা ও ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির গতিপ্রকৃতি কেমন হবে, তা-ও নিজের ব্লগসাইট ‘গেটস নোটস’-এ প্রকাশ করেন তিনি। সম্প্রতি চলতি বছরের অর্জন আর আগামী বছরের গতিপ্রকৃত নিয়ে লিখেছেন তিনি।

পাঠকদের জন্য লেখাটি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো। আজ রইলো প্রথম পর্ব-

২০২৩ সালে আমরা যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছি, তা ভবিষ্যতে আরও দূরে যাবে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ আর ইথিওপিয়ায় যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি সুদানের জনগণের অব্যাহত দুর্ভোগের জন্য আমার মন খারাপ হচ্ছে। একই সময়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের জন্য অনেক মানুষ কষ্ট সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কারণে সব পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৷ এই চ্যালেঞ্জিং সময় নিয়ে আমার কোনো দ্বিধা নেই, কিন্তু তারপরও আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রচণ্ড আশাবাদী। উদ্ভাবনের কাজ কখনোই দ্রুত হয় না। আমরা কঠিন সমস্যার বিরুদ্ধে বড় বড় কাজ করছি। আলঝেইমার, স্থূলতা ও সিকল সেল রোগের বিরুদ্ধে গবেষণা লাখ লাখ মানুষের জীবনকে উন্নত করবে।

আমার বন্ধু প্রয়াত হ্যান্স রোজলিং বলতেন, ‘কোনো বিষয় খারাপ হতে পারে, আবার তা ভালোও হতে পারে।’ যেকোনো ক্ষেত্রে অগ্রগতি একবারে হয় না, বরং প্রতিদিন একটু একটু করে ঘটে। এ কারণেই আমি নানান বিপর্যয়ের মুখেও দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নানা কাজ করছি। আমার সহকর্মীরা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লিঙ্গসমতা এবং আরও অনেক কিছুর উন্নতির জন্য নিবেদিত আছে। তাদের সম্পর্কে আমি হাজার পৃষ্ঠা লিখতে পারি। এই চিঠিতে আমি শুধু কয়েকটি উত্তেজনাপূর্ণ সাফল্যের কথা লিখছি।

এআই উদ্ভাবনের বিস্তারে চোখ

আমরা এ মুহূর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর উদ্ভাবনের বিস্তৃতির দিকে নজর দিচ্ছি। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে জীবন উন্নত করতে নানান প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি। কতটা সৃজনশীলতা আনা যায়, তা নিয়ে আমরা অপেক্ষা করছি। বর্তমানে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি আমরা। এই যেমন, এআই কি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধে লড়াই করতে পারে? অ্যান্টিবায়োটিক যদি আপনি বেশি ব্যবহার করেন, তাহলে নানা ধরনের প্যাথোজেন অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। একে বলা হয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর। সারা বিশ্বে এটি একটি বিশাল সমস্যা। বিশেষ করে আফ্রিকায় এর কারণে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।

ঘানার অরুম ইনস্টিটিউটের নানা কফি কুয়াকি একটি এআই-চালিত টুল নিয়ে কাজ করছেন। এটি স্বাস্থ্যকর্মীদের এমন অ্যান্টিবায়োটিকের ধারণা দেয়, যা এএমআর নয়। এই টুলটি স্থানীয় ক্লিনিক্যাল নির্দেশিকা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ডেটার বিশ্লেষণ করে কোন রোগজীবাণু প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঝুঁকিতে রয়েছে, তা জানতে সহায়তা করে। সর্বোত্তম ওষুধ, ডোজ ও সময়সীমার জন্য পরামর্শ দিতে পারবে এই এআই টুল।

আমাদের আরও প্রশ্ন আছে। এআই কি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে? প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী সন্তান প্রসবের সময় মারা যায়। এটি একটি ভয়ংকর পরিসংখ্যান। আমি আশাবাদী, এ ক্ষেত্রে এআই সাহায্য করতে পারে। এআইচালিত আলট্রাসাউন্ড গর্ভাবস্থার ঝুঁকি শনাক্ত করার বিষয়ে গত বছর আমি লিখেছিলাম। এ বছর আমি আর্মম্যানের গবেষকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। তারা ভারতে নতুন মায়েদের জন্য সেবা উন্নত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে। তারা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) উচ্চঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণের চিকিৎসায় ব্যবহার করছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কো-পাইলট হিসেবে এটি কাজ করবে। ইংরেজি ও তেলেগু উভয় ভাষাতেই এই টুলটি ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো এই এআই টুলটি যিনি ব্যবহার করবেন, তার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হবে।

আমরা জানতে চাই, এআই কি এইচআইভি ঝুঁকি নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে কি না। অনেকের জন্য যৌন ইতিহাস ডাক্তার বা নার্সের কাছে বলা অস্বস্তিকর। এইচআইভির মতো রোগের ঝুঁকি নির্ণয় ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা নির্ধারণের জন্য এসব তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন একটি দক্ষিণ আফ্রিকান চ্যাটবট এইচআইভি ঝুঁকি মূল্যায়নকে অনেক সহজ করছে। এই টুলটি নিরপেক্ষ ও কোনো ধরনের নেতিবাচক ধারণা ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা পরামর্শ দিতে পারে। সোফি প্যাস্কো ও তার দল প্রান্তিক ও দুর্বল জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করছে। এই উদ্ভাবনী টুলটি নারীদের নিজেদের ঝুঁকি বুঝতে ও নিজেদের রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করতে পারে।

কীভাবে এআইকে আরও ন্যায়সংগত করা যায়, তা সম্পর্কে আমরা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। এআইকে অবশ্যই যারা ব্যবহার করবে, তাদের জন্য উপযোগী করে বানাতে হবে। একটি মেডিকেল অ্যাপের কথা বলতে পারি। সেই অ্যাপের মাধ্যমে পাকিস্তানের মানুষেরা একটি টেক্সট বা ই-মেইল পাঠানোর পরিবর্তে একে অপরকে ভয়েস নোট পাঠাতে পারে। দীর্ঘ প্রশ্ন টাইপ করার পরিবর্তে ভয়েস কমান্ডের ওপর নির্ভর করে একটি অ্যাপ তৈরি করা বেশ কাজের। অ্যাপটি উর্দুতে তৈরি করা হয়েছে বলে অনুবাদের কোনো সমস্যা হয় না। আমরা যদি এখনই স্মার্ট বিনিয়োগ করি, তাহলে এআই-বিশ্বকে আরও ন্যায়সংগত হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

এআই ধনী বিশ্বের যেকোনো উদ্ভাবনকে দ্রুত সময়ে দরিদ্র বিশ্বে নিয়ে যেতে পারে। একটি শিশুর জন্মের আগে তার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম উন্নত করার সম্ভাবনা নিয়েও আমি বেশ উত্তেজিত। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, একটি শিশুর মাইক্রোবায়োম তাদের মায়ের সঙ্গে সংযুক্ত। গর্ভাশয়ের প্রদাহের চিকিৎসা করলে প্ল্যাসেন্টা ও বিকাশমান ভ্রূণের চিকিৎসায় সুবিধা আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *