চলমান তীব্র ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ১০ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৮ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাত হাজার ৩০০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে। এ হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ৭৩০ কোটি ৬১ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, মার্চ মাসের প্রথম ১০ দিনে মোট ৬৮ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলার এসেছে দেশে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫৭ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৪ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এর আগে চলতি বছরের সদ্য বিদায়ি ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। সে হিসাবে চলতি মাসে প্রতিদিন আসছে প্রায় ৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা প্রায় ৫৯৬ কোটি টাকার বেশি। আগের মাস জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার কম এসেছে। তবে গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার বেশি এসেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
এদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ। তবে আগামীতে দুটি বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা রয়েছে। এ কারণে রেমিট্যান্স বেশি পরিমাণ আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে ডলার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার বিক্রি করেছে। দেশের ইতিহাসে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি। মূলত জরুরি আমদানির দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে এসব ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। এর পরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে টানা পাঁচ মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থেমে যায়। অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
দুই মাস দুই বিলিয়ন ডলার করে এলেও পরের মাস থেকে কমতে থাকে রেমিট্যান্স প্রবাহ, যা দেড় বিলিয়ন বা তার কাছাকাছি চলে আসে। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে প্রায় ১৭০ কোটি ডলার বা ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।