হ্যট্রিক চ্যাম্পিয়নদের বিজয় কথন নিয়ে খালিদ রায়হানের লেখা ” আভিধানিক বিজয় কেতন”

ইত্যাদি

অক্টোবর ১৮, ২০২৩ ৬:০০ অপরাহ্ণ

জীবনের অপূর্ব গতিবিন্যাসের ধারায় এমন কিছু গল্প সৃষ্টি হয়, যে গল্পের সতত সত্য প্রকাশ করতে না পারলে শব্দের সাথে বোধহয় কলঙ্ক জর্জরিত বিচ্ছেদ ঘটে। এই বিচ্ছেদ থেকে মুক্তির প্রয়াসেই আমার এই সমতল কথন। যে আলাপচারিতা মিশে একাকার হয়ে গেছে গোধূলির শেষ সীমানায়—যেখানে আকাশ কাঁদা মাটি স্পর্শ করেছে।।
আসুন একটা গল্প শুনি। নিরন্তর গলা ফাটানো গল্প। যে গল্প ঐতিহাসিক, যে গল্প নতুন ঐতিহ্যের ধারক, যে গল্প হৃদয়ে কম্পন তৈরি করে, যে গল্প হাজার জনের ভীরেও চাক্ষুষ কাঁদায়, যে গল্পের প্রতিক্ষণে বিজয়ের সুবাস মাখা, যে গল্প রাতের ঘুম মুছে ফেলে, যে গল্প আত্মত্যাগের, যে গল্প জীবন বিসর্জনের, যে গল্প সন্ধ্যা তারার মতো প্রোজ্জ্বল, যে গল্প অনুপ্রেরণার বাহক, যে গল্প গণিতের জটিল ক্যালকুলেশনকেও ভুল প্রমাণ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে, যে গল্পের জীবনী অন্তিম সীমাহীন। যে গল্পের নায়ক, খলনায়ক কিংবা স্রষ্টা একদল নারী! আসুন— এমনই গা শিহরিত হয়ে ওঠা একটা গল্প শুনি…….
☞গল্প-১কীর্তনখোলার অববাহিকা থেকে নবগঙ্গার মোহনায় জীবন খরচ করে বেড়ে ওঠা আমাদের সমাজকর্মের কাপ্তানে দরিয়া “কথা”। বরিশালের মুগ্ধতা ছড়ানো ভয়ংকর বাতাসে জীবনের শুরুটা হলেও এর পূর্ণতা মিলেছে ঝিনাইদহ এসে। নদীর পরতে পরতে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো স্বভাবতই নদীর মতো হয়— চঞ্চলতা, ছুটাছুটি, এসবের একটা ভার থেকে যায় দেহে। কিন্তু ‘কথা’ তার সম্পূর্ণ বিপরীত। তার মধ্যে চাঞ্চল্যের লেশ টুকুও প্রতিয়মান নেই।
এই মানুষটার সবচেয়ে মধুর এবং ভালো সময়টা কেটেছে ঝিনাইদহ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজে। সেখান থেকেই পড়াশোনার প্রতি তুমুল আগ্রহ এবং অল্পস্বল্প খেলাধুলার শুরু। স্কুল জীবনেই প্রথমবার ভলিবলের স্পর্শ লাগে তার গায়ে। অবশ্য এরপর থেকে ভালো খেলোয়ার তকমাটা তার নামের পাশে লিখা হয়ে যায়।  তারপর থেকে পড়াশোনা, মাঝেমধ্যে একটু খেলাধুলা আবার পড়াশোনা এভাবেই চলতে থাকলো আমার কাপ্তানের সুন্দর সময়।।

তারপর একদিন সে শাবিপ্রবি সমাজকর্মের শিক্ষার্থী হয়ে আসে। ঘোড়া নাকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে!! এখানেও ঠিক তাই হলো- পড়াশোনা আর পড়াশোনা।  ইতোমধ্যে সে ক্লাসের ১ম সারীর শিক্ষার্থী হয়ে উঠেছে। সাস্টের চিরসবুজের মাঝে স্পোর্টসের একটা অসম্ভব মোহ আছে, যা নিরন্তর আপনাকে স্পর্শ করবে, হ্যাঁ, অবশ্যই করবে।

কালেজের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পাশাপাশি সে ধরেই নিয়েছিল, তার স্পোর্টসের সাথে সম্পর্কটাও বোধহয় শেষ হয়ে এলো কিন্তু শাবিপ্রবি তার ভাবনার ইতি ঘটালো এবং বহুদিন পড়ে শুরু করলো নারী ভলিবল টুর্নামেন্ট। অতপর আমাদের কাপ্তান নিজ মেধা আর মননে যা করে দেখিয়েছেন তা রীতিমতো নতুন ইতিহাস। যে ইতিহাসের অংশ আমরাও, যে ইতিহাস সমাজকর্মের মর্যাদাকে বহুদূর প্রসারিত করেছে।

ক্রিকেট সম্পর্কে অল্পস্বল্প ধারণা রাখা ‘কথা’ এখন ক্রিকেট মাঠেও বিশাল বিশাল ছক্কা হাঁকায়। ফুটবলের নিয়মিত দর্শক সে। হ্যান্ডবলের কঠিন নিয়মের একেবারেই ধার ধারে না। সর্বোপরি তুখোড় পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে মাঠের পরিস্থিতিগুলো গুছিয়ে নিয়েছে সে। সমাজকর্মের যত জায়গায় হাত দিয়েছেন, নিরন্তর সোনা ফলেছে।

সমাজকর্ম ভলিবলের সমৃদ্ধির পিছনের তারকারাজির মধ্যে পশ্চিম আকাশে জ্বলজ্বল করা শ্রেষ্ঠ তারকাটিই আমাদের প্রিয় ‘কথা’। মনুষ্য জাতির হাসি যে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কত বড় একটা উপাদান- তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ‘কথা’। অতিরিক্ত চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই, অত্যাধিক চঞ্চলতা নেই, হিংসে নামের ভয়ংকর বস্তুটাও তার দেহের আনাচে কানাচে ঘেষতে পারে না। কথার কথায় আমি নিরন্তর মুগ্ধ হই- অবশ্য আপনিও হতে বাধ্য!

ভার্সিটি লাইফের শেষ সময়টুকুতে এসে মানুষের অনেক শখই মৃত্যু বরন করে। অল্পস্বল্প খাওয়া তার পছন্দ, তার থেকে বেশিই পছন্দ বোধহয় শাড়ি! মানুষটার আবৃত্তি শুনে আপনার দেহ কম্পিত হবে। আবারও নতুন কোন মোহ তৈরি হবে। “কথারা” যতই সাধারণ থাকুক— আমাদের কাছে তারা অসম্ভব “অসাধারণ”

☞গল্প-২

ঐতিহাসিক ভৈরব নদীর কুল ঘেষে বেড়ে ওঠা অসম্ভব স্নিগ্ধ প্রাণী আমাদের “মমতা”। স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রবিন্দু, ঐতিহাসিক মুজিবনগরের স্পর্শ তার দেহে। সম্পূর্ণ গ্রামের সুবাসে বড় না হয়ে উঠলেও প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা অদ্ভুত সুন্দর। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া অন্য দশটা মেয়ের মতই তার জীবনের পথচলা, তার স্কুল জীবন সুন্দর, গাংগী মডেল হাই স্কুল থেকে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ পর্যন্ত কোমল প্রকৃতির মমতা আজ বড্ড চঞ্চল।।  ক্যান্টনমেন্টের ভিতরের বৈরী
আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিয়ে জীবন চালাতে হয়েছে তাকে। খেলাধুলার প্রতি বিন্দু মাত্র আগ্রহ না থাকা মেয়েটা স্পোর্টসে আসে ইনডোর গেমস এর মাধ্যমে, যা আমরা সবাই করি। দুএকবার সে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশও নিয়েছিলো, যা কেবলই সময়ের প্রয়োজনে।
২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি —
আমার স্পষ্ট মনে আছে, ২০০৬ নম্বর রুমে কৃত্তিবাস স্যারের সঞ্চালনায় আমাদের ২৫তম ব্যাচের নবীন বরন।  মেয়েটার সাথে ঐদিনই পরিচয়, খুব অল্পতেই বুঝেছিলাম ” মমতারা” বহুদূর পথ চলতে এসেছে। এরা হয়তো একদিন বিশ্ব জয় করবে।

আমি খেলাধুলার মানুষ, খেলাধুলার সকল আয়োজনে ‘মমতা’ সর্বদাই পাশে থাকতো।  ও ক্রিকেট বুঝে না, ফুটবলের সংজ্ঞা বুঝে না।  তার আত্মবিশ্বাস, মনোনিবেশ, ইচ্ছা আজ তাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।। এখন সে ক্রিকেট বুঝে, ক্রিকেট মাঠের বাউন্ডারির দূরত্বও মাপতে পারে।  সর্বোপরি এখন ‘মমতা’ একজন দক্ষ ক্রিকেটার বনে গেছে। ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন তার কাছে অতসব কিছুর উর্ধ্বে ভলিবলের ইতিহাস!!  খেলার ধরণ, রোটেশন কৌশল এসব কিছু না জানা মেয়েটাই সময়ের ব্যবধানে নিজ ইচ্ছা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে আজকে আমাদের গর্ব হয়ে উঠেছে, শাবিপ্রবির ইতিহাস হয়েছে, চ্যাম্পিয়নদের অন্যতম কান্ডারী হয়েছে। আমরা তাকে নিয়ে সীনা টান দিয়ে কথা বলি। আমরা তাদের নিয়ে গর্ব করি- এবং এটাই সত্য!

লম্বা একটা সময় কেটে গেছে শাবিপ্রবির চিরসবুজের মোহে। ক্যাম্পাসের সকলের কাছেই সে অসম্ভব সুন্দর, ভালোবাসার পাত্র।  পড়াশোনাতেও যথেষ্ট গুছানো মেয়েটা বর্তমানে একটু ছন্নছাড়া।। সম্ভবত সকলের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা পেতে পেতে পাঠ্যবইয়ের সাথে তার ভালোবাসা একটু হলেও কমে গেছে।  তাতে কী!! দিনশেষে স্নেহ আর মায়ার বন্ধনটাই সবকিছু, (অন্তত আমার কাছে তাই)।

খাবার তার ভিষণ প্রিয়।  কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলে সে আজন্ম সুখী। সর্বোপরি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সেরাদের সেরা বললেও নিছক বাড়িয়ে বলা হবে না। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সে তুমুল আগ্রহী। অসম্ভব দায়িত্ববান মানুষদের একজন সে। মুখে হাসি লেগেই আছে সেই সাড়ে পাঁচটি বছর ধরে। এভাবেও ভালো থাকা যায়—এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের ‘মমতা’। সবাইকে ভালো কাজে সর্বদা উৎসাহ প্রদান করায় সে নিরন্তর পটু। মাঝেমধ্যে তার অট্ট হাসিতে আমাদের সবাইকে মুগ্ধ হতে হয়।

সমাজকর্ম ভলিবলের সোনালি সময়ের সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল তারকারাজির মধ্যে অন্যতম একজন আমাদের সকলের প্রিয় মানিকের “মমতাদি” তার কথায় আপনি নিরন্তর মুগ্ধ হবেন। সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ বাংলায় সে কথা বলে। আমি রিতীমত মুগ্ধ হই, আবারও এই বচন শুনবার মনে চায়, বারবার মনে চায়! মাতৃভাষা বাংলার কি মোহ— তা তখন আরও স্পষ্ট বুঝা যায়।

পরিশ্রম, ডেডিকেশন, শ্রদ্ধা, কিংবা মায়া থাকলে যে সবকিছুকেই জয় করা সম্ভব এর প্রকৃত উদাহরণ হলো আমাদের সকলের প্রিয় “মমতাদি” সমাজকর্ম পঁচিশের অন্যতম ভালো মনের মানুষ।  সমাজকর্মের এতসব সাফল্যের পিছনে সেরা চাবিকাঠি ছিল মমতা।  আমাদের মমতারা ভালো থাকুক সবসময়। চন্দ্রের প্রস্তর ফলকের মতো নিশ্চুপ জ্যোতি ছড়াতে থাকুক অনাগত ভবিষ্যতের অন্তীম সময় পর্যন্ত।  আমাদের মমতারা সবার কাছে “অসাধারণ স্মৃতি” হয়েই বেঁচে থাকুক।।।

☞গল্প-৩

সুদূর কুশিয়ারার অববাহিকা আর চা বাগানের মুগ্ধতায় বড় হওয়া আমাদের মুগ্ধ বালিকা “স্বর্ণা” প্রকৃতির নৈসর্গিক লীলাভূমির বুকে অন্তহীন ছুটে চলা পথিক কিংবা ঐতিহ্য সমৃদ্ধ “চা কন্যার” আশীর্বাদের জন্ম এই বিজয়লক্ষী নারীর!

শৈশবের আলী আমজাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কিংবা মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ সবকিছুর ভেতরেই একজন পেশাদারিত্ব সম্পন্ন অস্তিত্বের অধিকারী সে।  অন্য দশটা জেলার মতো এখানেও সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই হয়তো করার ছিল না তার।  “মর্নিং সোজ দ্য ডে” যে ফুলটা প্রস্ফুটিত হবে তার আন্দাজ ছোটবেলাতেই পাওয়া যায়। খেলাধুলার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ আর বোঝাপড়া থাকার পরও সুযোগের অভাবে মাঠে নামা হয়নি আমাদের মিডফিল্ড ময়েস্ট্রোর। বাহুকাল এভাবেই অতিক্রান্ত হলো।

তারপর সমাজকর্মের সাথে তার পথচলা শুরু সেই ২০১৯ এর প্রথম থেকে। ২০২০-এ কোভিড-১৯ সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করে ফেলে। থামিয়ে দেয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি কিন্তু স্বর্ণাদের থামতে নেই। এরা থেমে থাকার পাত্র নয়। আমাদের সকলের প্রিয় (এক বাক্যে বলতে গেলে মাইয়ো, ফিনল্যান্ড) মাস্টার্স করতে যখন সমাজকর্ম বিভাগে আসে ঠিক তখন থেকেই আমাদের মেয়েদের আত্মবিশ্বাস শূন্য থেকে বহুদূর গড়িয়েছে। মাইয়োর অনুপ্রেরণাতেই প্রথম স্বর্ণার ভলিবলের প্রতি আগ্রহ জন্মে। ভেতরে ইচ্ছাটাকে ফুটিয়ে তোলার স্বয়ংক্রিয় রুপরেখা তৈরি হয়। তারপর, আজকের ইতিহাস……….!!!

শ্রদ্ধা, মোহ আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে বিশ্বকেও অল্পতেই জয় করা যায় এর জ্বলন্ত উদাহরণ স্বর্ণা। ক্রিকেটে বেট ধরার কৌশল না জানা মেয়েটা যখন বড় কোন টুর্নামেন্টের ইনিংসের প্রথম বলেই বিশাল ছক্কা হাঁকায়, তখন আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে যে, তার ভিতরের আগুন কতখানি।  সমাজকর্ম ক্রিকেট দলের কাপ্তানে দরিয়া আমাদের “স্বর্ণা”। হ্যান্ডবলের জাদুকরী রোটেশন মাস্টার, থ্রো অন টার্গেটে অসম্ভব পটু এক সৈনিক সে।

আমাদের তৈরি করা ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য পালক স্বর্ণা। স্বর্ণারা হারতে আসেনি, এদের ডেডিকেশন এদের বিজয়ী করে তোলে। ছোট ছোট টিলা আর চা বাগানের ভিড়ে ছুটে চলা বহু প্রতিকূলতার মাঝে নিজেকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসাটা কেবলই ইতিহাস। আমাদের ‘পাহাড়ি কন্যা’ আমাদের নতুন পাওয়া। আমাদের ভবিষ্যৎ কাপ্তান নিজেকে বারবার ছাড়িয়ে যাবে, এই বিশ্বাস আমরা সবাই হৃদয়ে লালন করি।। স্বর্ণারা আমাদের পরিশ্রম করতে শেখায়— বিজয়ী হওয়ার নেশা জাগায়।  সে সর্বদাই নিশ্চুপ-চুপচাপ। পড়াশোনায় বেশ সিরিয়াস। ব্যাচের সামনের সারির ছাত্রীদের মধ্যে তার নাম। সবকিছু গুছিয়ে চলার এক দুর্দান্ত সম্ভাবনা ফুটে ওঠে তার ব্যবহারে। সাইকেল তার খুব প্রিয়। প্রিয় সখগুলোর মধ্যে অন্যতম রাইডিং।  ছোট মেয়ে, তাই খাবারের মোহটা এখনো জ্বলজন্ত, সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় তার সাময়িক বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। নিরন্তর হাসতে সে ভালবাসে, তার প্রমাণ আমরা মাঠেও দেখেছি বারবার।

কুশিয়ারা থেকে সুরমা, চায়ের রাজ্য থেকে শাবিপ্রবির ৩২০ একর তার কাছে খুবই আপন।  সমাজকর্মের সোনালী প্রজন্মের এই নিশ্চুপ প্রাণকে আমরা সামনে থেকে  বিজয়ী হতে দেখেছি,  স্বর্ণার মতো তুখোর মেধাবীরা আমাদের সম্পদ— দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের বুকে লেখা থাকুক আমাদের ভবিষ্যৎ কাপ্তানের বিজয় গাঁথা।।

☞গল্প-৪

বৃষ্টির মায়ায় ভিজতে ভিজতে বড় হয়ে ওঠা আমাদের ইতিহাসের সফল আরেক যোদ্ধা “নওরীন”। আমার এই গল্পের সর্বাধিক প্রতিভাবান পালকটি হলো সে।  অসম্ভব প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা ‘নওরীন’ শুধু নিজেকে প্রমাণ করার মঞ্চটুকুর অপেক্ষায় ছিল। তারপর সময় হলো—সামনে সুযোগ আসলো এবং সে প্রমাণ করলো।। সুরমার গা ঘেষা বালাগঞ্জের অলিতে গলিতে দৌঁড়ে বেড়িয়ে চলা মেয়েটার খেলাধুলার প্রতি মোহ সেই শৈশব থেকেই, যখন সে নিজেকে চিনতেই শিখেনি।  চান্দেইর পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ইভেন্টে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সকলকে মুগ্ধ করত।

আজকের গল্পটা বাকি তিনটা গল্পের থেকে একটু ভিন্ন। আর এই ভিন্নতা হলো স্পোর্টসের প্রতি প্রেম, অসম্ভব প্রেম। অন্য দশটা মেয়ে যেখানে সামাজিক বিষণ্ণতার বেড়াজালে আটকে থাকে, সেখানে ব্যতিক্রম ‘নওরীন’।  আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কঠিন নিয়মে আবদ্ধ ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবল কিংবা ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট—সব কিছুই আয়ত্ত করেছে সে স্কুল জীবনেই। সিলেট কমার্স কলেজে থাকাকালীন সময়টায় এগুলো থেকে দূরে থাকতে হয়েছে—পিছনের কারণটা পড়ালেখা।। বাবা মায়ের অত্যন্ত আদরের মেয়েটা তারপর  শাবিপ্রবির ৩২০ একরে এলো,  দেখলো এবং খুব অল্পতেই পুরো ক্যাম্পাস জয় করল।।

ভলিবলের সাথে একেবারেই বিচ্ছেদ ঘটানো নওরীন আবারও সম্পর্কে জড়ায় ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে এসে। সমাজকর্ম নারী দলের প্রথম বার চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিল আমাদের  “নওরীন” তার সার্ভিসের একুইরেসি এবং বোস্টারিং এর সৌন্দর্যে সবাই মুগ্ধ হত বারবার। সমাজকর্ম ভলিবলের সোনালী প্রজন্মের সর্বাপেক্ষা কনিষ্ঠ এবং প্রতিভাবান নারী ‘নওরীন’

অসম্ভব শান্ত স্বভাবের মিষ্টি একটা মেয়ে সে। অল্পতেই সকলের সাথে মিশে যাওয়ার গুণটা তার মধ্যে সয়ংক্রিয় পরিলক্ষিত হয়। দূর থেকে খালি চোখে দেখে একেবারেই তাকে নিশ্চুপ-চুপচাপ বলে মনে হলেও, আসলে সে যথেষ্ট চঞ্চল। মাটির প্রতি টান তার অনন্য সাধারণ গুণগুলোর একটি। পড়ালেখাতেও সে খুবই বিচক্ষণ এবং সিরিয়াস। সিলেটের অপরূপ সৌন্দর্য আর পাহাড়ি ঢলে গা ভেজাতে প্রায়শই সে পাড়ি জমায় প্রকৃতি কন্যা কিংবা চায়ের রাজ্যের বিষন্নতায়। অল্পসল্প খেতে সে নিরন্তর ভালোবাসে। সর্বোপরি তার দেহের অন্যতম একটা অংশ জুড়ে রয়েছে স্পোর্টসের প্রতি প্রেম। যে প্রেম নিরন্তর বয়ে চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

আমাদের নওরীনরা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। স্বপ্ন দেখায় নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। তার মুখে সহসাই লেগেই থাকে সেই মন ভোলানো চিরচেনা হাসি। এই হাসির মায়াতেই হয়তো হ্যান্ডবল, ভলিবল কিংবা ব্যাডমিন্টম তার প্রেমে পড়েছে। অতিরিক্ত চাওয়া-পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই, বেশ অল্পতেই সে সীমাহীন সুখী। খুব সাধারণ থাকাতেই তার প্রশান্তি। আর এই সাধারনতান্ত্রিকতাই তাকে সকলের কাছে “অসাধারণ নওরীন” হিসেবে তৈরি করেছে।।

লেখা: “আভিধানিক বিজয় কেতন”
লেখক: ~খালিদ রায়হান

উৎসর্গ: সমাজকর্ম নারী ভলিবল দলকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *