নাহিদ হাসান
সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকার নতুন লড়াই শুরু হলো। জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ মূল্য বৃদ্ধিতে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। মধ্য বিত্তের কপালেও পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। জ্বালানি তেলে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণায় হতভম্ব সারাদেশের মানুষ। দেশে আরেক দফা মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, লবণ তরি-তরকারির পাশাপাশি যাতায়াত ভাড়া, পোশাক, বই, খাতা, কলমসহ সব ধরনের খাদ্য পণ্য এবং খাদ্য বহির্ভূত সকল পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি পাবে। আয় না বাড়লে কিভাবে সংসার চলবে এই নিয়ে সংশয় আর দুশ্চিন্তায় নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষজন।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার প্রতিটি পদে পদে খরচ বাড়বে। আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন লাগামহীন দাম বৃদ্ধি আবারও নতুন করে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য সীমার নিচে নিয়ে যেতে পারে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফল কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যসহ সব খাতেই খরচ বাড়বে। উৎপাদন খরচ বাড়ার ফলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বাড়বে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে পরিবহন খাতে কেননা এই খাতে প্রায় ৬৫ শতাংশ ডিজেল তেল ব্যবহৃত হয়। বি আর টি এ এবং পরিবহন খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মিটিংয়ে পরিবহন ভাড়া সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। দূরপাল্লার বাসে ২২ শতাংশ ও মহানগরীর মধ্যে ১৬ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি ভাড়ার কারণে যাতায়াত ভাড়া এবং পণ্য পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পণ্য আনা নেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু বাড়তি এই ট্রাক ভাড়া যোগ হবে সব ধরনের পণ্যের সাথে। এতে বাজারে সকল ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বাজার থেকে বেশি দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হবে মানুষকে।
ইতোমধ্যে বাজারে প্রায় সব ধরনের শাক সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা। চাল, ডাল, আদা, রসুন, পেঁয়াজের দামও বাড়তি।
এখন আমনের মৌসুম চলছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষকেরা বাধ্য হচ্ছে ডিজেল চালিত সেচ জেনারেটর ব্যবহার করতে। আবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে কৃষকেরা এখনও ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করছে।লিটার প্রতি ৩৪ টাকা বাড়তি দামে ডিজেল কিনতে হবে তাদের ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে। আর উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাবে ফলে দাম বাড়বে তৈরি পণ্যের। পোশাক শিল্পে খরচ বৃদ্ধির ফলে বেশি দামে তৈরি পোশাক কিনতে হবে মানুষকে। বাড়তি এই দামের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হবে দেশের সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
করোনার কারণে গত দুই বছরে দেশে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দুই বছরে মানুষের আয় তেমন একটা বাড়েনি বরং অনেকের আয় কমেছে। এমন অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি দেশে বড় ধরনের মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি করবে।এতে আরও নতুন করে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাবে।