সাহিত্য রুচি নিয়ে সমরেশ মজুমদারের পক্ষ-বিপক্ষ

দেশজুড়ে

মে ৯, ২০২৩ ৮:২৪ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক,

সমরেশ মজুমদার মারা গেছেন। ৮১ বছরের এক মনোরম জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে এই দুঃসংবাদের মাধ্যমে। তার মৃত্যু সংবাদের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাহিত্যের রুচি, সাহিত্যবোধ ও সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষের আলাপ দেখতে পাচ্ছি।

সমরেশ মজুমদারের বইয়ের সংখ্যা অন্তত একশ। তার আলোচিত কিছু উপন্যাসও আছে, যা পাঠকের মুখে মুখে ফেরে। ধরেই নিলাম তিনি এত কিছুর পরও কোনো সাহিত্যরুচি তৈরি করতে পারেননি কিংবা তার লেখা পড়ে পাঠকের মনে কোনো সাহিত্যবোধ তৈরি হয়নি। একজীবনে এটি কি খুব গুরুতর পাপ! তবে তিনি তার পথেই হেঁটেছেন আজীবন, পথিক পথে হেঁটেছে; হয়ত পথের দেখা মেলেনি— দোষ কি তার? সাহিত্যের রুচি তৈরি করতে না পারার বিকল্প চিন্তায় সমরেশ মজুমদার কি অর্থপাচার করেছেন, কারও জমিদখল করেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, কখনো সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বলেছেন, সমরেশ মজুমদার কি কারও দালালি করেছেন, তাবেদারি করেছেন দুটো পয়সার লোভে? কিংবা মোহরের প্রলোভনে বিকিয়ে দিয়েছেন নিজেকে? যা আমরা করছি প্রতিনিয়ত, আমাদের আশেপাশের মানুষ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

এটি বলা কি খুব অন্যায় হবে, আমাদের অধিকাংশ সাহিত্যিক ভণ্ড-প্রতারক, এদের নীতি নেই। এদের মেরুদণ্ড নেই, মগজ নেই। এরা বোবা। এরা কথা বলতে ভয় পান কিংবা কথা বলেন না। এরা সাহিত্যের নামে সময় অপচয় করেন, দৌড়ান পুরস্কারের পেছনে। এরা ছোট মুখে বড় বড় কথা বলেন! তখন কোথায় থাকে আমাদের রুচিবোধ? কিংবা লেখার মধ্যে নতুন কিছু নেই! ঘুরে ফিরে সেই কল্পনার রঙিন বেলুন; আপনার দৌড় বড়জোড় চেতনা পর্যন্ত। লেখালেখিতে দেশপ্রেমের নামে বড় অধর্ম করে যাচ্ছেন।

এটি কেউ মানুক বা না মানুক যেকোনো বিষয়ে রুচি তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান থেকে। আপনি সমাজের কোথায় আছেন, কোন তলায় থাকেন তার ওপর এই রুচি নির্ধারিত হয়। আপনি কোনো বাসার নিচতলায় থাকলে বারান্দায় বেওয়ারিশ বেড়াল, বেপরোয়া ইঁদুর দেখবেন। একসময় দেখতে দেখতে ইঁদুর-বিড়াল দেখার অভ্যাসটি আপনার রুচিতে পরিণত হতে পারে। এটিই স্বাভাবিক, যদি অনন্য সাধারণ কিছু না হয়। কিংবা আপনি চিলেকোঠায় থাকলে সেখান থেকে প্রতি সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার রুচি তৈরি হবে কিংবা দেখতে চাইবেন শ্রাবণের ঝরঝর বৃষ্টি! এটিই আপনার রুচি। আপনার পকেটে টাকা থাকলে আপনি বার্গার কিনবেন, এটিই হবে খাওয়ার রুচি, আর না থাকলে আপনি কিনবেন বড়জোড় ১৫ টাকার পাউরুটি। জিনিস একই কিন্তু তা সামাজিক অবস্থান ভেদে রুচির পার্থক্যে তা হয়ে উঠেছে ভিন্ন ভিন্ন জিনিস।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’র কুবের-কপিলা’র সম্পর্ককেও নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায় রুচি দিয়ে। ‘আমারে নিবা মাঝি লগে’ —এই সংলাপটি আপনার রোমান্টিক রুচির কারণে হতে পারে অনবদ্য। আবার যদি বিকল্প রুচি ঠিক করেন তাহলে এই সংলাপটি একটি ‘জঘন্য আলাপ’ অসামাজিক কিছু। কুবের-কপিলার এই সম্পর্ক পাপ-পূণ্যের দৃষ্টিতেও ভালোমতো ব্যাখ্যা করা যাবে।

আমাদের দেশে বিশেষত যারা সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যনৈপূণ্য নিয়ে আলোচনা করছেন, তারা সাহিত্যের উঠানে অতটা সমাদৃত কিংবা গ্রহণযোগ্য না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারা পরিচিত। এরা সভা করেন, সেমিনার করেন, গালভরা আলাপ করেন। মাঝে মাঝে ‘ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া’ কিছু বিদেশি সাহিত্যিকদের নিয়েও আলোচনা করেন। শুনতে ভালোই লাগে। কিন্তু এদের অধিকাংশ ব্যক্তিগত ‘হতাশ’ বোধকরি মানসিক নানা রোগে ভুগছেন। এরা প্রণাম খুঁজে ফেরেন। কিন্তু ঘরে আদর নেই, বাইরে কদরও নেই। এর ফলে তারা ঈর্ষায় থাকেন, হিংসায় থাকেন। অন্যের ওপরে ওঠা দেখলে তারা অস্বস্তিতে ভোগেন। ফলে এরা সাপের লেজে পা দেন, কামড় খান। আবার বেঁচেও ওঠেন। এরা মরেন না।

সমরেশ মজুমদার ইস্যুতে বিতর্ক ওঠার প্রসঙ্গক্রমে মনে হলো এই সমালোচকরা তো সাহিত্যের উঠানে কিছুই করতে পারেননি। ধরেই নেওয়া যাক, সমরেশ মজুমদারও তাই। যে কাজটি ৪৫ বছর ধরে, ৫০ বছর ধরে করছেন সেই কাজটি সমরেশ মজুমদার ৮১ বছর ধরে করছেন। দোষের কিছু তো দেখছি না। বরং দোষ আপনাদের ঈর্ষা, ক্ষোভ দো
সমরেশ মজুমদার মারা গেছেন। ৮১ বছরের এক মনোরম জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে এই দুঃসংবাদের মাধ্যমে। তার মৃত্যু সংবাদের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাহিত্যের রুচি, সাহিত্যবোধ ও সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষের আলাপ দেখতে পাচ্ছি।

সমরেশ মজুমদারের বইয়ের সংখ্যা অন্তত একশ। তার আলোচিত কিছু উপন্যাসও আছে, যা পাঠকের মুখে মুখে ফেরে। ধরেই নিলাম তিনি এত কিছুর পরও কোনো সাহিত্যরুচি তৈরি করতে পারেননি কিংবা তার লেখা পড়ে পাঠকের মনে কোনো সাহিত্যবোধ তৈরি হয়নি। একজীবনে এটি কি খুব গুরুতর পাপ! তবে তিনি তার পথেই হেঁটেছেন আজীবন, পথিক পথে হেঁটেছে; হয়ত পথের দেখা মেলেনি— দোষ কি তার? সাহিত্যের রুচি তৈরি করতে না পারার বিকল্প চিন্তায় সমরেশ মজুমদার কি অর্থপাচার করেছেন, কারও জমিদখল করেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, কখনো সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বলেছেন, সমরেশ মজুমদার কি কারও দালালি করেছেন, তাবেদারি করেছেন দুটো পয়সার লোভে? কিংবা মোহরের প্রলোভনে বিকিয়ে দিয়েছেন নিজেকে? যা আমরা করছি প্রতিনিয়ত, আমাদের আশেপাশের মানুষ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

এটি বলা কি খুব অন্যায় হবে, আমাদের অধিকাংশ সাহিত্যিক ভণ্ড-প্রতারক, এদের নীতি নেই। এদের মেরুদণ্ড নেই, মগজ নেই। এরা বোবা। এরা কথা বলতে ভয় পান কিংবা কথা বলেন না। এরা সাহিত্যের নামে সময় অপচয় করেন, দৌড়ান পুরস্কারের পেছনে। এরা ছোট মুখে বড় বড় কথা বলেন! তখন কোথায় থাকে আমাদের রুচিবোধ? কিংবা লেখার মধ্যে নতুন কিছু নেই! ঘুরে ফিরে সেই কল্পনার রঙিন বেলুন; আপনার দৌড় বড়জোড় চেতনা পর্যন্ত। লেখালেখিতে দেশপ্রেমের নামে বড় অধর্ম করে যাচ্ছেন।

এটি কেউ মানুক বা না মানুক যেকোনো বিষয়ে রুচি তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান থেকে। আপনি সমাজের কোথায় আছেন, কোন তলায় থাকেন তার ওপর এই রুচি নির্ধারিত হয়। আপনি কোনো বাসার নিচতলায় থাকলে বারান্দায় বেওয়ারিশ বেড়াল, বেপরোয়া ইঁদুর দেখবেন। একসময় দেখতে দেখতে ইঁদুর-বিড়াল দেখার অভ্যাসটি আপনার রুচিতে পরিণত হতে পারে। এটিই স্বাভাবিক, যদি অনন্য সাধারণ কিছু না হয়। কিংবা আপনি চিলেকোঠায় থাকলে সেখান থেকে প্রতি সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার রুচি তৈরি হবে কিংবা দেখতে চাইবেন শ্রাবণের ঝরঝর বৃষ্টি! এটিই আপনার রুচি। আপনার পকেটে টাকা থাকলে আপনি বার্গার কিনবেন, এটিই হবে খাওয়ার রুচি, আর না থাকলে আপনি কিনবেন বড়জোড় ১৫ টাকার পাউরুটি। জিনিস একই কিন্তু তা সামাজিক অবস্থান ভেদে রুচির পার্থক্যে তা হয়ে উঠেছে ভিন্ন ভিন্ন জিনিস।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’র কুবের-কপিলা’র সম্পর্ককেও নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায় রুচি দিয়ে। ‘আমারে নিবা মাঝি লগে’ —এই সংলাপটি আপনার রোমান্টিক রুচির কারণে হতে পারে অনবদ্য। আবার যদি বিকল্প রুচি ঠিক করেন তাহলে এই সংলাপটি একটি ‘জঘন্য আলাপ’ অসামাজিক কিছু। কুবের-কপিলার এই সম্পর্ক পাপ-পূণ্যের দৃষ্টিতেও ভালোমতো ব্যাখ্যা করা যাবে।

আমাদের দেশে বিশেষত যারা সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যনৈপূণ্য নিয়ে আলোচনা করছেন, তারা সাহিত্যের উঠানে অতটা সমাদৃত কিংবা গ্রহণযোগ্য না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারা পরিচিত। এরা সভা করেন, সেমিনার করেন, গালভরা আলাপ করেন। মাঝে মাঝে ‘ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া’ কিছু বিদেশি সাহিত্যিকদের নিয়েও আলোচনা করেন। শুনতে ভালোই লাগে। কিন্তু এদের অধিকাংশ ব্যক্তিগত ‘হতাশ’ বোধকরি মানসিক নানা রোগে ভুগছেন। এরা প্রণাম খুঁজে ফেরেন। কিন্তু ঘরে আদর নেই, বাইরে কদরও নেই। এর ফলে তারা ঈর্ষায় থাকেন, হিংসায় থাকেন। অন্যের ওপরে ওঠা দেখলে তারা অস্বস্তিতে ভোগেন। ফলে এরা সাপের লেজে পা দেন, কামড় খান। আবার বেঁচেও ওঠেন। এরা মরেন না।

সমরেশ মজুমদার ইস্যুতে বিতর্ক ওঠার প্রসঙ্গক্রমে মনে হলো এই সমালোচকরা তো সাহিত্যের উঠানে কিছুই করতে পারেননি। ধরেই নেওয়া যাক, সমরেশ মজুমদারও তাই। যে কাজটি ৪৫ বছর ধরে, ৫০ বছর ধরে করছেন সেই কাজটি সমরেশ মজুমদার ৮১ বছর ধরে করছেন। দোষের কিছু তো দেখছি না। বরং দোষ আপনাদের ঈর্ষা, ক্ষোভ দোষের।

আমাদের দেশের এই কথিত সমালোচকদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই সমাজে। এরা মদের টেবিলে গিয়ে খিস্তি-খেউড় আওড়ান, টেবিল ভাঙেন। মাছের বাজারে গেলে মাছের দোকানির কাছে গালি খান। এরা সংসারে চরম অসুখি, এরা বঞ্চিত। কারও কারও খবর জানা আছে। কীভাবে কবিবন্ধুর বাড়িতে গিয়ে সেই নারীর হাত ধরতে গিয়ে অপমানিত হয়েছেন সেরকম কথা শুনেছি। সুতরাং এদের সমালোচনা বিভ্রান্তির জন্ম দেবে, আলোচনার খোরাক হবে কিন্তু ধোপে টিকবে না। ওরা সাহিত্যের নামে, কবিতার নামে-উপন্যাসের নামে; সমাজে খুব প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি বলে ‘সিঁড়ি দিয়ে অন্যকে ওপরে হাঁটতে’ দেখলে তাদের মনে ভয় জাগে!

সমরেশ মজুমদার শুধুই লিখেছেন। তিনি বৈষয়কি কোনো স্বার্থের কথা ভাবেননি, রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে তিনি নেননি কোনো সুবিধাও। তিনি তার লেখনিতে আলোর কথা বলেছেন, অন্ধকারের কথা বলেছেন, বিপ্লবের কথা বলেছেন, বিপ্লব ভঙ্গের কথা বলেছেন। তিনি নারীর কথা বলেছেন, পুরুষের কথা বলেছেন। সবমিলিয়ে তিনি মানুষের কথা বলেছেন। মানুষের জয়গান, মানুষের সংগ্রামই হয়ে উঠেছে তার লেখার বিষয়-আশয়।

সেই জীবন্ত দলিলই যেন উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ ট্রিলোজি। এই অনিমেষকে আপামর বাঙালির কাছে একটা রক্তমাংসের মানুষ করে তুলেছিলেন তার স্রষ্টা সমরেশ মজুমদার। যার লেখনীতে বার বার ফুটে উঠেছে অনিমেষের স্বপ্ন, অনিমেষের দ্বন্দ্ব, অনিমেষের ঠিক-ভুলে ভরা জীবন। বাম ছাত্র রাজনীতি থেকে নকশালবাড়ি আন্দোলন। সত্তরের সেই আগুনে ঝাঁপ। সমরেশের অনিমেষ চিনিয়েছে সত্তরের স্বপ্ন দেখা প্রজন্মকে। সমরেশের অনিমেষ যেন ওদেরই প্রতিনিধি।

উত্তরাধিকার, কালবেলা এবং কালপুরুষ। তিন প্রজন্মের গল্প হলেও, সুতাটি একই। অনিমেষ। তার জীবনের চড়াই-উৎরাই, প্রেম, সংসার, রাজনীতি ঘিরে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটা নিখুঁত ছবি।

সমরেশ মজুমদারের নারী চরিত্ররাও দৃঢ়। সে কালবেলার মাধবীলতাই হোক, কিংবা গর্ভধারিণীর জয়িতা, অথবা সাতকাহনের দীপা। সত্তরের দশকের লড়াকু তরুণী প্রেমিকা থেকে স্ত্রী এবং কালপুরুষে, অর্ক’র মা। জীবনের প্রত্যেক ভূমিকায় মাধবীলতাই যেন সংগ্রামী নারী। আর এদিকে নিজের আদর্শের খাতিরে আক্ষরিক অর্থেই গর্ভধারিণী হয়ে উঠেছিল যে মেয়ে, সেই জয়িতা, জয়িতাও যেন অন্য এক মাটিতে গড়া চরিত্র।

এমন খুব কম বাঙালি মেয়েই আছে যারা সাতকাহনের দীপাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়নি। বাল্যবিবাহের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা কাটিয়েও যে দীপা নিজের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। কোনো বাধা, কোনো বিপত্তিই যাকে ছুঁতে পারেনি। এই মাধবীলতা, জয়িতা, দীপা এরা প্রত্যেকেই যেন খুব বেশি জ্যান্ত। যেন এরা হতেই পারত আমাদের পাশের বাড়ির কেউ, আমাদের অত্যন্ত পরিচিত কেউ। যার লেখনিতেতে বারবার উঠে এসেছে নিপীড়িতদের কথা, সমাজের নিচু স্তরের মানুষের দাবিদাওয়ার কথা, সমাজ বদলে দেওয়ার স্বপ্নের কথা, ফাঁপা রাজনীতির কথা।

আমার মনে সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে যে বোধ বা ভাবনা জন্মেছে তাতে মনে করি, সাহিত্যচর্চা হলো একটি সাধনা। সাহিত্যের মহীরুহ সম্পর্কে যা রুচির জায়গা তৈরি হয়েছে তাতে মনে করি, সাহিত্যচর্চার বিষয়টি হলো মনের সুরে গান গেয়ে যাওয়ার মতো। সেই সাধনার কাজটি লেখককে করে যেতে হয়। লেখককে গাইতে হয় গান, সেই সুর কেমন, তা শ্রোতায় বলতে পারবে। সুতরাং রুচি-অভিরুচি ভেবে তো সাহিত্যচর্চা করলে হয় না, সেটি সময় নির্ধারণ করে দেবে। এটুকু তো মনে রাখতে পারি, কাউকে ছোট করতে চাইলে কারও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গেলে কখনো-সখনো নিজেকেও ছোট হতে হয়।

সমরেশ মজুমদার প্রয়াত হয়েছেন। সাহিত্যের রুচি-সাহিত্যবোধ নিয়ে পরে ভাবা যাবে, আপাতত মানুষটিকে শ্মশানে যেতে দিই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *