সাতক্ষীরা সীমান্তের চোরাই পথে আসছে ভারতীয় চিংড়ির রেনু

সাতক্ষীরা সীমান্তের চোরাই পথে আসছে ভারতীয় চিংড়ির রেনু

দেশজুড়ে

এপ্রিল ৯, ২০২৩ ৭:০৪ অপরাহ্ণ

সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব : দাম নিয়ে বিপাকে দেশীয় রেনু পোনা ব্যবসায়ীরা

মনিরুজ্জামান মনি, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসছে নিম্নমানের ভারতীয় গলদা চিংড়ির রেণু পোনা। জেলার কয়েকটি বাজারে এসব রেণু পোনা বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানীরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় গলদা রেণু পোনার রমরমা ব্যবসা পরিচালনার ফলে একদিকে যেমন বিপাকে পড়ছেন দেশীয় গলদা রেনু পোনা ব্যবসায়ীরা।

অপরদিকে বাজার ছাড়া কম দামে ভারতীয় নিম্নমানের এসব রেনু পোনা কিনে ঠকছেন চিংড়ি চাষিরা। তবে সাতক্ষীরার গলদা রেনু পোনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলছেন, ‘অবৈধভাবে ভারতীয় নিম্নমানের গলদার রেনু পোনা দেশে প্রবেশের ফলে স্থানীয় বাজার নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতারা যেমন ঠকছেন, তেমনি সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন’।

তবে চোরাই পথে ভারতীয় গলদা রেনু আমদানীকারকরা বলছেন, ‘বৈধ জিনিস অবৈধ পথে এনে তারাও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের দাবি ভারতীয় গলদা রেনু পোনা নিম্ন মানের নয়। দেশের বাজারে গলদা রেনুর চাহিদা মেটাতে বৈধ পথে আমদানির জন্য সরকারি পদক্ষেপ খুবই জরুরী’।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৈখালী সীমান্ত, কালিগঞ্জ সীমান্ত, দেবহাটা, সদরের ভোমরা ও কলারোয়া সীমান্তসহ পার্শ্ববর্তী যশোরের চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে গলদা রেনু পোনা আমদানি করা হচ্ছে। ভারতীয় রেনু পোনা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘এসব সীমান্ত দিয়ে মৌসুমে অন্তত শত কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে রেণু পোনা চোরাচালানিতে। বিপুল এই অর্থ আবার মধ্যস্বত্ত্বভোগী হয়ে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে ভারতে’।

এ বিষয়ে শ্যামনগরের কৈখালী সীমান্ত এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘ওই সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ পথে নিম্ন মানের গলদা চিংড়ির রেণু পোনা আমদানী করছেন মো. জামির আলী জামু, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. আব্দুল্লাহ, মো. আবুল কাশেম, শ্রী সাধন বাবুসহ কতিপয় ব্যক্তি।

অভিযোগের সত্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কথা হয় মো. জামির আলী জামু ও মো. দেলোয়ার হোসেনের সাথে। তবে মো. জামির আলী জামু এখন আর ভারতীয় রেনু পোনা আমদানির কাজ করেন না বলে জানান। অপরদিকে মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘তিনি বেশ কয়েকদিন যাবৎ অসুস্থ্ আছেন। ভারতীয় গলদার রেনু এখন আসছে কি-না তিনি বলতে পারেন না’।

আরো জানা গেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ সীমান্তে ভারত থেকে অবৈধ পথে নিম্নমানের গলদা চিংড়ির রেণু পোনা আমদানী করছেন মো. মালেক, মো. রোকন, মো. গুলে। দেবহাটা সীমান্তে ভারত থেকে অবৈধ পথে নিম্নমানের গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা আমদানী করছেন মো. আজগর, মো. মালেক, মো. রবিউল ইসলাম, মো. নুরুজ্জামান, মো. আদর আলী ও মো. রফিকুল ইসলামসহ কতিপয় ব্যক্তি। তাদের কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘শুধু সাতক্ষীরা সীমান্ত নয়, পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার চৌগাছা সীমান্ত দিয়েও এই গলদা রেনু পোনা (নবলি) অবৈধভাবে চোরাই পথে আসছে। যা বিক্রি হচ্ছে ঘের মালিকসহ সাতক্ষীরা ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বাজারে’।

চৌগাছা সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘ওই সীমান্তে ভারত থেকে অবৈধপথে রেনু আমদানি করছেন সাতক্ষীরা শহরের অদূরে থানাঘাটা এলাকার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং কলারোয়ার শ্রী সঞ্জয় বাবু’। ভারত থেকে অবৈধ পথে নিম্নমানের এসব গলদা চিংড়ির রেণু পোনা (নবলি) সাতক্ষীরা, খুলনা, পাইকগাছা, কয়রাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কলারোয়ার শ্রী সঞ্জয় বাবু বলেন, ‘তিনি নিজে আমদানি করছেন না। অন্যের আমদানি করা অল্প কিছু গলদার রেনু কিনে দেশের বাজারে বিক্রি করছেন’।

তিনি আরো জানান, ‘দেশের বাজারে গলদা রেনু পোনার যে চাহিদা আছে তা দেশীয় রেনুতে পূরণ হচ্ছে না’।

শ্রী সঞ্জয় বাবু আরো জানান, ‘সরকারিভাবে আমদানির অনুমোদন না থাকায় ঘাট মালিকরা সামান্য কিছু লাভের আশায় অল্প কিছু রেনু চোরাই পথে আমদানি করছেন। যদি সরকারি ভাবে ভারতীয় গলদার রেনু আমদানি করা যেত তাহলে সরকার রাজস্ব হারাতো না’।
হুন্ডিতে টাকা লেনদেনের ফলে সরকারের রাজস্ব হারানোর বিষয়ে সাতক্ষীরা রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিয়ামুল হাসান বলেন, ‘ভারতীয় গলদা রেনু কিনতে অবৈধপথে টাকার লেনদেন হওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে চোরাচালানের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর’।

এ বিষয়ে কথা বলতে সাতক্ষীরা বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *