নাহিদ হাসান
বাজারে চাল, ডাল, তেল, আটাসহ সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। চাহিদা অনুযায়ী নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু কিছুই করার নেই তাদের আয়ের মধ্যে যতটুকু সম্ভব তাই দিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।
রাজধানীর অন্যতম পাইকারী বাজার শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায় চাল, ডাল, তেল, আটা, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মশলাসহ সকল পণ্যের দাম বাড়তি। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা দরে যা একমাসে আগেও ছিল ৪০-৪৫ টাকা। চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা যা পূর্বে ছিল ১২০-১৩০ টাকা কেজি। বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা।
শ্যামবাজার কাঁচা বাজারে কথা হয় সবজি কিনতে আসা গৃহিণী রাশেদা বেগমের সাথে। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই জেনে হতাশ তিনি। বেগুন, পটল, বরবটি, করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। টমেটো ১৪০-১৫০ টাকা কেজি। মরিচের বাজারে যেন আগুন প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা দরে। বাজারে সকল মাছের দামও বৃদ্ধি। বড় আকারের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি দরে, মাঝারি আকারের গুলো বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা কেজি দরে। ইলিশ ৪০০-৫০০ গ্রাম সাইজের বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া, কই,পাঙাস,নলাসহ সকল মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা। গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে এবং বয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা দরে।
চালের বাজারে স্বস্তির কোনো খবর নেই। সরকারের পক্ষ থেকে চালের দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। প্রতি কেজি মোটা চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫৫ টাকা কেজি এবং চিকন চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭৫ টাকা কেজি।
বাজারে কথা হয় রিকশা চালক সবুর মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন,বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বেশি চাহিদা অনুযায়ী সব কিছু কিনতে পারি না। কোনোমতে ডাল ভাত খেয়ে দিন পাড় করতেছি।
সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেষ্ট, ব্রাশ, ডিটারজেন্ট পাউডার এসব পণ্য কিনতে মানুষকে বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। সংসার চালানোর জন্য বাজেট বাড়াতে হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা যায় সকল ব্র্যান্ডের সাবানের দাম ৬ মাসের ব্যবধানে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বড় আকারের লাক্স সাবানের বর্তমান মূল্য ৭৫ টাকা যা পূর্বে ছিল ৬৬ টাকা। ৩৫০ গ্রাম সানসিল্ক শ্যাম্পুর দাম ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৫০ টাকা। ক্লিন ক্লিয়ার ১০০ মিলি ফেস ওয়াশের দাম ১৮৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ২২০ টাকা। সকল প্রকার টুথপেষ্টের দাম আকারভেদে বৃদ্ধি পেয়েছে ১০-১৫ টাকা। কাপড় কাচার ডিটারজেন্ট পাউডারের দামও কেজি প্রতি বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। প্রতি কেজি রিন ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি এবং হুইল ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি।
বাজারে সকল প্রকার জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তিন বেলা ডাল-ভাত খেয়েও কষ্টে আছেন অনেক মানুষ। নিম্নবিত্তরা খাদ্য তালিকা থেকে গরুর মাংস এবং বড় মাছ বাদ দিয়েছেন। মধ্যবিত্তকেও হিসাব করে করতে হচ্ছে বাজার।
সরকারি হিসাব মতে দেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ যা ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার কম হওয়ায় মানুষকে বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
বাজারে মূল্য বৃদ্ধির চাপে পিষ্ট মানুষের জীবন। সীমিত ও মধ্য আয়ের মানুষের একটাই চাওয়া সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানে।