সঙ্গী কুকুর, সাত বছর হেঁটে বিশ্বভ্রমণ করলেন তরুণ

ফিচার স্পেশাল

জুলাই ৪, ২০২২ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চোখে ছিল বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল যাত্রা শুরু করেন। তখন তার বয়স মাত্র ২৬ বছরে পা দিতে বেশ কয়েক ঘণ্টা বাকি ছিল। ছোট ঠেলাগাড়িতে কয়েকটি জামাকাপড়, কিছু শুকনো খাবার, টেন্ট, টর্চ, ল্যাপটপ, ক্যামেরা ও হাইকিং-এর কিছু সামগ্রী নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি।

এরপর বাড়িতে ফিরলেন সাত বছর পর। স্বপ্নপূরণ করে তবেই। মার্কিন যুবক টম টারসিচ হেঁটে অতিক্রম করেছেন ৪৮ হাজার কিলোমিটার পথ। বিশ্বের ১০ম ব্যক্তি হিসেবে পদব্রজে বিশ্বভ্রমণ করে তৈরি করলেন এক নতুন রেকর্ড। তবে এই অ্যাডভেঞ্চারে একা ছিলেন না টম। সঙ্গী ছিল তার পোষা সারমেয় ‘সাভান’।

 টম টারসিচ

টম টারসিচ

টম বিশ্বের ১০ম ব্যক্তি হলেও কুকুর হিসেবে প্রথম এমন অভিযান করে গিনেস বুকে নাম তোলার অপেক্ষায় রয়েছে পোষা কুকুরটি। তবে নিছক বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়া নয়। প্রিয়জনের হঠাৎ মৃত্যুই টমকে ভাবিয়ে তুলেছিল এই বিশ্বভ্রমণের ব্যাপারে। ২০০৬ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে জেট-স্কি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অ্যান মেরি।

টম উপলব্ধি করেছিলেন, সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। হয়তো কাল হঠাৎ এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে তাকেও, নিজের অজান্তেই। তার আগে দুনিয়ায় নিজের ছাপ রেখে যেতে চেয়েছিলেন টম। দীর্ঘ আট বছর ধরে চলেছে তার সেই পরিকল্পনা। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করার সময় থেকেই কাজ করতেন টম। আয়ের সবটাই তিনি জমিয়ে রেখেছিলেন বিশ্বভ্রমণের জন্য। যদিও সেই টাকায় পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখা যায় না কোনোভাবেই। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে তার পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন নিউ জার্সিরই এক উদ্যোক্তা।

 কুকুর সাভানা

কুকুর সাভানা

টম শুরুতে একাই পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। তবে চার মাস পরেই নিঃসঙ্গতা চেপে বসে তাকে। পাশাপাশি পথে-ঘাটে বিপদের আশঙ্কা তো রয়েছেই। অরণ্যে ক্যাম্প করেও ঘুমাতে পারতেন না। বন্যপ্রাণী যদি আক্রমণ করে। টম এসব কথা ভেবেই পানামার একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সাভানাকে দত্তক নেন। তখন সাভানার বয়স মাত্র দুই মাস। কয়েক সময় সাভানাকে কার্টে চাপিয়েই হেঁটেছেন টম। তারপর সেও হয়ে উঠে তার মালিকের মতো পুরোদমে এক অভিযাত্রী।

টম উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া ছয়টি মহাদেশই পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন। বোটে চেপে ছুঁয়ে গেছেন অ্যান্টার্কটিকাও। কখনো পড়তে হয়েছে ডাকাতের খপ্পরে, আবার আজারবাইজান কিংবা কাজাখস্তানে রীতিমতো আপ্যায়নও পেয়েছেন স্থানীয় বিয়েবাড়িতে। সেইসঙ্গে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তুরস্কের বসফরাস সেতু হেঁটে পার হওয়ার স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা।

টম উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া ছয়টি মহাদেশই পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন

টম উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া ছয়টি মহাদেশই পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন

টমের হচ্ছে ছিল ঠিক সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে তার বিশ্বভ্রমণ সেরে দেশে ফেরা। তবে মহামারির কারণে তা হয়নি। সেসময় দীর্ঘদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত আজারবাইজানে আটকে থাকতে হয়েছিল তাকে। পাশাপাশি চীন, ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রবেশাধিকারও পাননি টম। বাধ্য হয়েই তাকে উড়ে যেতে হয় অস্ট্রেলিয়ায়। ফলে সবমিলিয়ে তার সময় লেগে যায় সাত বছর।

সম্প্রতি টম দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরে কিছুটা অবাকই হয়েছেন। এতদিন তিনি ভেবে এসেছিলেন এই লড়াই তার একার। তবে নিজের শহরে ঢুকতেই বদলে যায় পরিস্থিতি। তার অনেক বন্ধু, আত্মীয় এবং প্রতিবেশী শেষ দুই মাইল হাঁটলেন তার সঙ্গে। কমতি ছিল না উদযাপনেও। অবিশ্বাস্য এই অ্যাডভেঞ্চারের পর আবার প্রথাগত জীবনে ফিরবেন বলেই জানাচ্ছেন ৩২ বছর বয়সী তরুণ মার্কিনি। টম টারসিচের এই গল্প যেন মনে করিয়ে দেয় টম হ্যাঙ্কস অভিনীত ফরেস্ট গাম্প চরিত্রটির কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *