শেরপুরে নিলামের কাঠ হস্তান্তরে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছাড়পত্র বাণিজ্যের অভিযোগ

শেরপুরে নিলামের কাঠ হস্তান্তরে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছাড়পত্র বাণিজ্যের অভিযোগ

দেশজুড়ে

জানুয়ারি ৪, ২০২৩ ৫:২৭ অপরাহ্ণ

মোরাদ শাহ জাবাল, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)

শেরপুরে নিলামে বিক্রি বনের কাঠ হস্তান্তরে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছারপত্র বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ সামাজিক বনের অংশিদার ও ব্যবসায়ীদের । শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ীও শ্রীবনদী উপজেলার সীমান্তে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে বনভূমি ও বনাঞ্চল।

জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ময়মনসিংহ বনবিভাগের আওতায় শেরপুরে সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার গারো পাহাড়ে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম হাতে নেয় সরকার। গারো পাহাড়ে বসবাসকারী হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থে গড়ে তোলা হয় এ সামাজিক বনায়ন।

বনের উপর নির্ভরশীলদের করা হয় অংশিদার। প্রতি হেক্টর জমিতে বন সৃজন করে হেক্টর প্রতি একজনকে ১০ বছর মেয়াদে অংশিদার করে চুক্তি নামা দলিল দেয়া হয়। এভাবে শতশত হেক্টর জমিতে গড়ে তোলা হয় সামাজিক বনায়ন। ১০ বছর পরপর সৃজনকৃত বনের কাঠ মাপযোগ করে প্লট আকারে নিলামে বিক্রি করা হয়।

কাঠ বিক্রির টাকা ৪৫% অংশিদাররা পান। ৪৫% সরকার। আর ১০% রাখা হয় পুনরায় বন সৃজনের জন্য । জানা গেছে, সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরুর ১০ বছর পর থেকেই শতশত হেক্টর জমির উপর সৃজনকৃত নিলামে বিক্রি করা কাঠ স্থানান্তরিত করার ক্ষেত্রে স্থানীয় বন কর্মচারীরা ছারপত্র বানিজ্য চালিয়ে আসছে।

প্রতি ট্রাক কাঠ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিতে হলে ছারপত্রের প্রয়োজন হয়। নিয়ম অনুযায়ী নিলামে ক্রয়কৃত কাঠের ছারপত্র বিনা মূল্যে দেয়ার কথা। কিন্তু এখানে টাকা ছাড়া ছারপত্র দিচ্ছেন না বন কর্মচারীরা। প্রতি ট্রাক কাঠের ছারপত্র নিতে ব্যবসায়ীদের বন কর্মকর্তাকে দিতে হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। টাকা না দিলে ছারপত্র মিলছে না। নানা অজুহাতে ট্রাকে ভর্তি করা কাঠ ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হয়। এসব অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ব্যবসায়ীদের।

হতে হয় নানা বিড়ম্বনার শিকার। গত দুই যুগ ধরে এভাবেই চলছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বন কর্মকর্তাদের ছারপত্র বানিজ্য। লাখ লাখ টাকা ছারপত্র বানিজ্য চালিয়ে আসছে বন কর্মচারীরা। বন কর্মকর্তাদের এসব ছারপত্র বানিজ্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিবাদতো দুরের কথা মুখ পর্যন্ত খুলতে সাহস পায় না।

আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হতে হয় হয়রানীর শিকার । আর হয়রানি থেকে রেহাই পেতেই বন কর্মচারীদের দাবি মিটিয়েই নিরবে ব্যবসা চালিয়ে আসছে অর্ধশতাধিক কাঠ ব্যবসায়ী। গত দুই যুগে হাজার হাজার ট্রাক কাঠ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। হয়েছে ছারপত্র বানিজ্য। ছারপত্র বানিজ্য এখন আর গোপন নেই। প্রকাশ্যেই হচ্ছে এ বানিজ্য।

২০২০ সালে জনৈক বন কর্মকর্তা যোগদান করেন ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিসে। তিনি যোগদান করেই ছারপত্রের মূল্য দিগুণ করেন। এসময় এসময় ব্যবসায়ীরা ফুঁসে উঠতে শুরু করে। ব্যবসায়ীরা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ডাক যোগে অভিযোগ পত্র পোস্ট অফিসে রেজিষ্ট্রেশন ও করা হয়।

এসময় বন কর্মচারীরা ব্যবসায়ীদের সাথে আপোষ মিমাংসা করে অভিযোগ পত্র প্রত্যাহার করানো হয় বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি রাংটিয়া ও গজনী বিট এলাকায় ৪৬ প্লট নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।

এসব কাঠ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিতে বন কর্মকর্তাদের ছারপত্র বানিজ্য অব্যাহত রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বন কর্মকর্তারা কেউ স্বীকার করতে রাজি হননি। ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই।

শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক আবু ইউসুফ বলেন যারা টাকা নিচ্ছেন তাদের সাথে কথা বলুন। রাংটিয়া সদর বিট কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ বলেন ছারপত্র দিতে কোন টাকা নেয়া হয়না। যদি কোন ব্যবসায়ী বলে থাকেন সেটা ষড়যন্ত্র। রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন করা টাকা নিচ্ছেন তা আমার জানা নেই। যেনে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *