যেসব খাত থেকে মোটা অংকের আয় করে ফিফা

যেসব খাত থেকে মোটা অংকের আয় করে ফিফা

ফিচার স্পেশাল

ডিসেম্বর ২০, ২০২২ ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার হয়ে শেষে শটটা নিতে আসলেন গনজালো মন্টিয়েল। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাকি নয়জন। মন্টিয়েলের নেয়া মাটিঘেষা শটটা ফ্রান্স দলপতি হুগো লরিসকে পরাজিত করতেই ছট লাগালেন সবাই। কেবল একজন হাত দিয়ে চোখমুখ চেপে ধরে বসে পড়লেন।

তিনি মেসি। ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে আর্জেন্টিনার বিজয় উল্লাসের শুরুটা ছিল এমনই।

রাত যত বাড়তে লাগল, ততোই পৃথিবীর অজস্র সীমান্তে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো আনন্দ ঝড়ের সংকেত। সেই ঝড় ১৭০০০ কিলোমিটার দুরের বুয়েন্স আয়ারস থেকে পৌছে গেলো ছোট্ট সুন্দর এক ব-দ্বীপ বাংলাদেশে। কিংবা এই পৃথিবীর আনাচেকানাচে।

শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে লিওনেল মেসির হাতে উঠলো পরম আরাধ্য সেই শিরোপা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হলো বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা কাতার বিশ্বকাপ ২০২২। এবারের এই আয়োজন থেকে যেমন খরচ করেছে কাতার। ঠিক তেমনটাই আয় করেছে ফিফা। যা এ পর্যন্ত আয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড ।

তো সর্বকালের সেরা এই বিশ্বকাপ থেকে কেমন আয় করলো বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি? চলুন জেনে নেই।

ফিফার আয় আসে মূলত পাঁচটি ক্যাটাগরি থেকে, এর মধ্য টিভি সম্প্রচার স্বত্ত্ব, বিপণন অধিকার, সেবা অধিকার ও টিকিট বিক্রি, নিবন্ধন অধিকারসহ অন্যান্য লাভ। কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে কেবল বাণিজ্যিক চুক্তি থেকেই ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার আয় হয়েছে ফিফা। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের আয়ের তুলনায় এটি অন্তত ১০০ কোটি ডলার বেশি।

আলাদা করে বললে মূল আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ আসে সম্প্রচার স্বত্ত্ব থেকে। ফিফার মোট আয়ে এর অবদান প্রায় ৫৬ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ দেয় বিপণন খাত। আর বাকি ১৫ শতাংশ আসে অন্য খাতগুলো থেকে।

এবার যেসব খাত থেকে ফিফার আয়

মূলত কাতারিদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে ফিফার এই অতিরিক্ত আয় এসেছে। এবারের বিশ্বকাপ ঘিরে ফিফার শীর্ষস্থানীয় স্পন্সর হিসেবে নাম লিখিয়েছে কাতার এনার্জি। নতুন তৃতীয়-স্তরের স্পন্সরদের মধ্যে রয়েছে কাতারি ব্যাংক কিউএনবি এবং টেলিকমিউনিকেশন ফার্ম ওরেডু।

এ বছর আর্থিক প্ল্যাটফর্ম ক্রিপ্টো ডটকমের সঙ্গে দ্বিতীয়-স্তরের স্পন্সরশিপ চুক্তি করেছে ফিফা। এছাড়া, এক দশকেরও বেশি সময় পর মার্কিন স্পন্সর হিসেবে ব্লকচেইন সেবাদানকারী কোম্পানি অ্যালগোরান্ডকে পেয়েছে তারা।

রাশিয়া ও কাতার বিশ্বকাপের জন্য মূল সম্প্রচার চুক্তি সই হয়েছিল সেপ ব্ল্যাটার ফিফার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে। এছাড়া ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স ও কাতারি সম্প্রচারমাধ্যম বিইন স্পোর্টসকে চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে তারা।

ফিফার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের সময় টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ত্ব থেকে তাদের আয়ের লক্ষ্য ছিল ২৬৪ কোটি ডলার।

বিপণন অধিকার বিক্রি থেকে আয় ধরা হয়েছিল ১৩৫ কোটি ডলার। সেবা ও টিকিট বিক্রি থেকে ৫০ কোটি এবং নিবন্ধন অধিকার বিক্রি থেকে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছিল ১৪ কোটি ডলার।

কেলার স্পোর্টসের সমীক্ষা জানাচ্ছে, এ বছর বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে টিকিটের দামও ছিল সর্বকালের সর্বোচ্চ। অর্থাৎ এত দামি টিকিট কেটে আগে কখনো বিশ্বকাপের খেলা দেখতে হয়নি ফুটবলপ্রেমীদের।

জার্মান সংস্থাটির হিসাবে, ২০১৮ বিশ্বকাপের তুলনায় ২০২২ বিশ্বকাপে টিকিটের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। কাতার বিশ্বকাপে ফাইনাল ম্যাচে প্রতিটি টিকিটের গড় দাম ছিল ৬৮৪ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮৭ হাজার টাকারও বেশি।

ফলে, গোটা টুনার্মেন্টে প্রতিটি আসনের জন্য গড়ে ২৮৬ পাউন্ড হিসেবে ৩০ লাখের বেশি টিকিট বিক্রি থেকে ফিফার আয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ, এ খাতে পূর্বধারণার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আয় হয়েছে সংস্থাটির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *