ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক কূটনীতি জোরদারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক কূটনীতি জোরদারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জাতীয় স্লাইড

মে ১৩, ২০২৩ ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা জোরদার করা, অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য সামুদ্রিক কূটনীতি জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে টেকসই পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে প্রত্যাবাসনে সক্রিয় বৈশ্বিক সহায়তা কামনা করেছেন তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ২ দিনব্যাপী ৬ষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সহায়তা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সব দেশের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। আমি ৬ষ্ঠ ভারত মহাসাগর সম্মেলনে ৬টি অগ্রাধিকারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে চাই। আমরা সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক প্রণয়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক কূটনীতি গড়ে তুলতে হবে, যার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ অঞ্চলের অনেক দেশের জলবায়ু ঝুঁকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কমাতে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘শান্তি সংস্কৃতি’ এবং জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়ন জোরদারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেক নারীদের বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেওয়া উচিত। এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, নিয়মভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এ অঞ্চল ও অঞ্চলের বাইরে ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উন্নয়ন সহজ করবে।

সরকার প্রধান বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। এ দৃষ্টিভঙ্গি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি বড় মানবিক বিপর্যয় ঠেকিয়েছে। এখন আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও টেকসই উপায়ে তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন চাই।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে বহু শতাব্দী ধরে সামুদ্রিক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল এবং অনেক আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে সক্রিয়। বাংলাদেশ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দীর্ঘদিনের পুরনো ও অপ্রচলিত চ্যালেঞ্জে বিশ্বাস করে। আমরা এ অঞ্চলে শান্তির জন্য আমাদের ভূমিকা পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ এবং তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ এই অঞ্চলের মহাসাগর ও সমুদ্র পথে পরিচালিত হয়। বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রকৃত ব্যয় গত ১৫ বছরে তিনগুণ বেড়েছে। মহাসাগর সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে চমৎকার সুযোগ প্রদান করে। তবু অনেক সম্ভাবনা এখনো অব্যবহৃত রয়ে গেছে। এশিয়া-প্যাসিফিক ও আফ্রিকান অঞ্চলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব রয়েছে। এ অঞ্চলে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ এবং বৈশ্বিক জিডিপির ৬০ শতাংশ রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি এবং সার সংকটের ফলে বিশ্বের সকল মানুষের জীবনযাত্রার অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলও জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে, এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *