ভারত কার বন্ধু?

আন্তর্জাতিক স্পেশাল

এপ্রিল ২৫, ২০২২ ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ

কিছু দিন আগেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারতের ওপর কত আপত্তি ছিল পশ্চিমাদের। গত মার্চে ভারতের অবস্থান নিয়ে নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এপ্রিলেও দেশটি ইউক্রেন ইস্যুতে ভারত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খবর অনুযায়ী, গত ৬ এপ্রিল হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল ইকোনোমিক কাউন্সিলের পরিচালক ব্রিয়ান ডিস বলেন, ইউক্রেনে রুশ অভিযানে চীন ও ভারতের পদক্ষেপ আমাদের হতবাক করেছে। তিনি বলেন, মস্কোর সঙ্গে দিল্লির কৌশলগত সম্পৃক্ততার ব্যাপারে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু গত ১১ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফোনালাপের পর রাশিয়ার তেল নিতে কোনো বাধাই পাত্তা দিচ্ছে না ভারত। ইউক্রেনে অভিযানের জেরে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। এই সুযোগে ভারত রাশিয়া থেকে কম মূল্যে তেল আমদানি করছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্ট মতে, ২০২১ সালে রাশিয়া থেকে ভারত যে পরিমাণ তেল কিনেছে, ২০২২ সালের প্রথম চার মাস না যেতেই প্রায় সমপরিমাণ তেল আমদানি করে ফেলেছে দেশটি।

তবে মস্কোর ইউক্রেন অভিযানের ব্যাপারে এখনও মুখ খোলেনি ভারত। গত ৭ এপ্রিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ভোটদানে বিরত ছিল দেশটি। ফলে পশ্চিমাদের সঙ্গে দেশটির মতপার্থক্য স্পষ্ট। কিন্তু এরপরও পশ্চিমাদের নেক নজরে রয়েছে ভারত। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভারত সফর তার বড় প্রমাণ। গত ২১ এপ্রিল নয়াদিল্লি সফরে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।

রাশিয়া থেকে ৫০ শতাংশেরও বেশি সামরিক সরঞ্জাম কিনে থাকে ভারত। ইউক্রেন ইস্যুতে ন্যাটোর সমালোচনা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিমত এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার নিন্দা- কোনোটাই করেনি ভারত। এ সংকটে নরেন্দ্র মোদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি- দুজনের সঙ্গেই ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

রুশ অভিযান শুরুর পর জেলেনস্কির সঙ্গে কথাও বলেছেন মোদি। এছাড়া অভিযান শুরুর আগে তিনি পুতিনকে ‘প্রিয় বন্ধু’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। পুতিনের সামরিক সরঞ্জামে নির্ভরশীল থাকা নয়াদিল্লি সহজেই মস্কোর বিরুদ্ধে যেতে পারছে না। তবে রাশিয়া ভারতের পক্ষেই রয়েছে। ভারতকে কম দামে তেল দিচ্ছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মাসে দিল্লি সফর করেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রশংসা করেছেন।

শুধু রাশিয়া নয়, পশ্চিমাদের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক ঠিকঠাক রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতও পশ্চিমাদের সামরিক সরঞ্জামের ক্রেতা হয়ে উঠেছে। তবু মোদির সঙ্গে বাইডেনের বৈঠকে ভারতকে অন্য জাগয়া থেকে তেল কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ তেল আমদানি করে, যার মাত্র ৩ শতাংশ আনে রাশিয়া থেকে।

ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের মনোভাব খুব একটা কঠোর নয়। এর ফলে ভারত তাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমাদের চাপে না মচকে ভারতও বুঝিয়ে দিয়েছে, কূটনীতির মাঠে তারা কতটা এগিয়ে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক কূটনীতির ওপর পশ্চিমাদেরকে ‘মাস্টারক্লাস’ করিয়ে দিয়েছে ভারত।

লন্ডনের কিংস কলেজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হর্ষ ভি. পান্ত সিএনএনকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে ভারতকে তাদের কতটা প্রয়োজন। নতুন অংশীদার হিসেবে ভারতকে বিবেচনা করা উচিত। অধ্যাপক পান্ত আরও বলেন, আপাতদৃষ্টিতে ভারত খুব চমৎকারভাবে ভারসাম্যমূলক অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। ভারত আসলে এই সংকট থেকে শক্তভাবেই নিজেকে উতরে এনেছে। এই সংকটে আসলে তাদেরই জয় হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *