নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ-
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের ভিটাডুবি গ্রামে অবস্থিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে বিরাজ করছে জরাজীর্ণ অবস্থা। প্রায় তিন দশক আগে নির্মিত পুরোনো ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়েছে অনেক আগেই। এক যুগ আগে নির্মিত নতুন ভবনেও বিরাজ করছে বেহাল দশা। মেঝ দেবে গেছে। খসে পড়ছে দেয়ালের পলেস্তা। ছাদ ছুঁইয়ে পড়ে পানি। এ অবস্থায়ও দুটি ভবনে চলছে ক্লাস। টয়লেট থাকলেও ব্যবহারের অনুপযোগী। ছাত্রছাত্রীদের টয়লেট করতে ছুটতে হয় পাশের মাঠে। পানি খাওয়ার টিউবওয়েলটি অকেজো।পানির জন্য যেতে হয় গ্রামের ভেতরে । টয়রেট করতে যেতে হয় জমিতে অথবা নদীর পাড়ে। এমন বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিটাডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে।
ছাত্রছাত্রীরা জানায় বিদ্যালয়ে আসলে ভয় করে তাদের। কখন যে ছাদ ভেঙে পড়ে-এ ভয়ে থাকতে হয় তাদের। তাঁরা আরো জানায় বিদ্যালয়ে আসলে পানি খাওয়া যায় না। টয়লেট করতে হলে জমিতে যাইতে হয়। এ জন্য তাদের খুব খুব লজ্জা করে।’
জানা গেছে বিদ্যালয়টিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দীর্ঘদিন।নেই প্রয়োজনীয় ক্লাসরুম। স্থানীয়দের অভিযোগ,নতুন ভবন নির্মাণের সময় ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ নতুন ভবনে চলছে ক্লাশ।নেই শিশুদের জন্য বিনোদন ও খেলাধুলার মাঠ। শিক্ষক সংকটতো রয়েছেই।
স্থানীয়রা জানায় ১৮৭০ সালে ৩৬ শতাংশ জমির ওপর ভিটাডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় একচালা একটি টিনের ঘর ছিল। ১৯২০ সালে দুই কক্ষবিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মান করা হয়। ১৯৮৭ সালে তিন কক্ষবিশিষ্ট আধা পাকা টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। পরে সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও চলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান। বিদ্যালয়ে ১৭১ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র তিনজন।
২০০৯ সালে তিন কক্ষবিশিষ্ট একতলা নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এর ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে। মেঝে দেবে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। এ ভবনে প্রাক-প্রাথমিক ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলে। একটি কক্ষ শিক্ষকরা অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি পরিত্যক্ত ভবনটির টিন পরিবর্তন করে দুই লাখ টাকার নতুন টিন লাগানো হয়েছে।অথচ ওই টাকা দিয়ে নতুন ভবনের ছাদ মেরামতের কথা ছিল।
স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,২০০৯-১০ অর্থবছরে পিইডিপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় আট লাখ টাকায় নতুন ভবনটি নির্মাণ হয়। নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান আবু কালাম নামে একজন ঠিকাদার। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি যতীন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, নতুন ভবন করার সময় ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এখন এ অবস্থা।
ঠিকাদার মো. আবু কালামের সাথে কথা বলতে তার নাম্বারে একাদিক বার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইছাক মিয়া বলেন,বিদ্যালয়টি হাওর এলাকায় হওয়ায় বন্যার সময় ফ্লোরের নীচের বালু সরে যেতে পারে। দুই বছর আগে ভবনের ছাদ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর বলেন, বিদ্যালয়ে একটি ওয়াশ রুম রয়েছে। সেটিও পরিত্যক্ত। বড় মেয়েরা পরিত্যক্ত ওয়াশ রুমেই প্রয়োজন সারে। ছোটরা আশপাশে যায়। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চালাতে হচ্ছে।জরাজীর্ণ পুরোনে ঘরের টিন পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল মিয়া।
