বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠক: পূজার আগে ঢাকায় বড় সমাবেশ থেকে আলটিমেটাম

বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠক: পূজার আগে ঢাকায় বড় সমাবেশ থেকে আলটিমেটাম

রাজনীতি স্লাইড

অক্টোবর ৪, ২০২৩ ১:০৯ অপরাহ্ণ

চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিলের আগেই সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে শেষ ধাপের কর্মসূচিতে নামবে দলটি। ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া শারদীয় দুর্গাপূজার দু-এক দিন আগে ঢাকায় বড় সমাবেশ থেকে এই আলটিমেটাম দেওয়া হবে। দুর্গাপূজা শেষ হওয়া পর্যন্ত এ আলটিমেটাম চলতে পারে। দাবি না মানলে পূজার পর থেকে লাগাতার আন্দোলনে যাবে বিএনপি। যা নভেম্বরে তফশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত চলবে। ইতোমধ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন সফলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজার সময়ে বড় কোনো কর্মসূচি রাখবে না দলটি। সোমবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে ঢাকায় যুব ও ছাত্র কনভেনশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর স্মারকলিপির কর্মসূচিও রয়েছে।

সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার আগে চলতি মাসে পর্যায়ক্রমে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচিও চলতে থাকবে।

একদফা দাবিতে ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে এখন রোডমার্চ ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ের কর্মসূচি শেষ হবে। এরই মধ্যে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলায় আটটি সমাবেশ হয়েছে। রোডমার্চ হয়েছে চারটি। এছাড়া ঢাকায় মহিলা সমাবেশ, শ্রমিক কনভেনশন ও কৃষক সমাবেশ হয়েছে। আজ ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন হবে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে ১২ জুলাই আন্দোলন শুরু করে বিএনপি।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে কাল অনুষ্ঠেয় বিএনপির রোডমার্চ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। অথবা প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেও ঘোষণা করা হতে পারে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপের আংশিক কর্মসূচি। এর আগে গত কয়েকদিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপি। তাদের দেওয়া বিভিন্ন প্রস্তাব সমন্বয় করে চূড়ান্ত আন্দোলন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দলটি।

স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ৭ অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন শুরু হতে পারে। ১৮ অক্টোবরের দিকে সরকারকে পদত্যাগে আলটিমেটাম দেওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও কিছু কর্মসূচি হতে পারে। তবে আলটিমেটাম শেষে কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। তখন সারা দেশের নেতাকর্মীরা ঢাকার কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।

সূত্রমতে, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় একদফার যুগপৎ আন্দোলন বেগবান করবে বিএনপি। এ সময়ে যুব ও ছাত্র কনভেনশন করতে চায় দলটি। ছাত্র কনভেনশনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনের সামনের বটতলায় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’র আত্মপ্রকাশ হয়েছে। একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পৃক্ত করতে চায় বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা। তারা মনে করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে না পারলে চলমান আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা পাওয়া কঠিন। এদিকে যুব কনভেনশন সফলে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের সমন্বয়ে শিগগির ‘যুব ঐক্যজোট’র আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে।

এদিকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) বরাবর স্মারকলিপি দিতে পারে বিএনপি। স্মারকলিপিতে পুলিশকে চলমান হামলা-মামলা-গ্রেফতার বন্ধ এবং ইসিকে সম্ভাব্য একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ না নেওয়ার আহ্বান জানানো হতে পারে। অন্যদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা করতে পারেন, সেজন্য পূজা চলাকালীন বড় কোনো কর্মসূচি রাখছে না বিএনপি।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, সরকার আলটিমেটাম মেনে পদত্যাগ না করলে দুর্গাপূজার পরে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে নামবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। সেক্ষেত্রে ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে এ আন্দোলন শুরু হতে পারে। শুরুতেই সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাওসহ টানা অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে পারে। পাশাপাশি রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে। প্রয়োজনে হরতাল ও অবরোধের মতো ভিন্ন নামেও কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি।

বিএনপি নেতারা জানান, চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে বিএনপি ও তার মিত্রদের কর্মসূচি কেমন হবে, তা সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। সরকারের আচরণ কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তার মনোভাব কেমন হয়, তা পর্যবেক্ষণ করবেন বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা। তারা জানান, সরকারপ্রধান দেশে ফিরলে দেশের পরিস্থিতি কেমন হয়, তার ওপর নির্ভর করবে বিরোধী পক্ষের কর্মসূচির ধরন কেমন হবে। বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা জানান, চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি হবে লাগাতার এবং রাজধানী ঢাকার ওপর থাকবে আন্দোলনের মূল ফোকাস।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, দলের নীতিনির্ধারকরা সভায় বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসাকে ‘দাবার ঘুঁটি’ হিসাবে নিয়ে সরকার বিএনপিকে কাবু করতে চায়। তবে কোনো ধরনের ঘুঁটি হিসাবে তাদের চেয়ারপারসন ব্যবহৃত হবেন না। এছাড়া বৈঠকে পরিবারের আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে নাকচের পরে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত হয়, যা মঙ্গলবার দলের সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *