পুতিনের পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা

পুতিনের পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা

আন্তর্জাতিক

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩ ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

ঘুম ভাঙার পর থেকেই মৃত্যুভয়। চোখ বুজলেই হামলার আতঙ্ক। প্রতিদিনই স্বজন হারানোর শোক। থেমে থেমে বিমান হামলার সাইরেন। বুট-বুলেট- ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক-ড্রোন হামলার বিকট বিস্ফোরণ-২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাশিয়ার ‘বিশেষ অপারেশন’ শুরুর পর থেকে এটাই ছিল ইউক্রেনের দৈনন্দিন জীবনচিত্র।

সামনের দিনগুলোতে হয়ত আরও ভয়ংকর হবে এ দৃশ্য। রাশিয়ার পিতৃভূমি দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া বর্ষপূর্তির আগের দিনের বক্তব্যে সেই হুঁশিয়ারিই দিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পালটা বক্তব্য দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। বলেছেন, যুদ্ধে রাশিয়া হারবে। ইউক্রেনই জিতবে।

এক বছর হয়ে গেল থামার লক্ষণ নেই। উলটো আরও বড় হয়ে উঠছে। যুদ্ধ এখন আর দুই দেশে নেই। ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। ইউক্রেন-রাশিয়ার সেই ‘ছোট যুদ্ধে’ এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঙ্কার। ভেঙে খানখান হয়ে গেছে গত সাত দশকের বিশ্বব্যবস্থা। দুর্বল হয়ে পড়ছে পশ্চিমা আধিপত্য। রাশিয়া থামছে না, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ছে না। মাঝে পড়ে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হচ্ছে ইউরোপের ‘রুটির ঝুড়ি’ ইউক্রেন।

যুদ্ধের নতুন বছর শুরু হতে না হতেই যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। এ বছরই পশ্চিমাদের কাছে ‘শয়তান-২’খ্যাত সারমাত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পিতৃভূমি রক্ষা দিবসে ক্রেমলিনের প্রকাশিত একটি ভিডিও বার্তায় আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সারমাত মোতায়েনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

তিনি রুশ সামরিক বাহিনীকে জাতীয় স্থিতিশীলতার গ্যারান্টার বলে অভিহিত করেন। যুদ্ধের বর্ষপূর্তির ঠিক একদিন আগে অস্ত্র উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন পুতিন। রাশিয়ার আগামী প্রজন্মের ভয়ংকর এই ক্ষেপণাস্ত্রটি একাধিক পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।

পুতিন একে ‘অজেয়’ বলে সম্বোধন করেছেন। জানান, ‘আমরা পারমাণবিক ত্রয়ী (পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র-স্থল থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য, সাবমেরিন, কৌশলগত যুদ্ধবিমানসহ ত্রিমুখী সামরিক শক্তি কাঠামো) শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছি। এ বছর যুদ্ধে সারমাত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম লঞ্চারগুলো রাখা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন দুই কর্মকর্তা বলেন, সারমাত এই সপ্তাহে একটি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বুধবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বলেন, এটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষাধিকার।

পুতিন জানিয়েছেন, ভারী সারমাত ক্ষেপণাস্ত্র পৃথিবীর যে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এই অস্ত্র ক্রেমলিনের শত্রুদের দুবার ভাবতে বাধ্য করবে। একই ভিডিও বার্তায় সামরিক বাহিনীর উদ্দেশে পুতিন বলেন, একটি আধুনিক, দক্ষ সেনাবাহিনী-নৌবাহিনী দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তা দেয়। এ কারণে আগের মতো আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করাকে অগ্রাধিকার দেব। বিশেষ করে সৈন্যদের নতুন স্ট্রাইক সিস্টেম, রিকনেসান্স এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম, ড্রোন এবং আর্টিলারি সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত করা হবে।

এদিকে যুদ্ধের বর্ষপূর্তির আগের দিনের এক বক্তব্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে হারিয়ে জয় লাভ করবে দেশটি। বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ার এক বক্তব্যে তিনি বলেন, যারা এই মন্দ যুদ্ধ আমাদের দেশে নিয়ে এসেছে তাদের সবার হিসাব নেওয়া হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার জি-৭ নেতারা রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। স্থায়ী শান্তির আহ্বানের প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *