নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে বাংলাদেশ

নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে বাংলাদেশ

খেলা স্লাইড

অক্টোবর ৩০, ২০২২ ১:৪৬ অপরাহ্ণ

ম্যাচ শেষ, দুই দলের খেলোয়াড়রা চলে গেছেন ডাগ আউটে। হাত মেলানো শেষ, এ অবস্থায় জায়ান্ট স্ক্রিণে ভেসে এলো নো বল। সেই সঙ্গে আম্পায়ারের নির্দেশনা, ফের খেলতে হবে। জয় থেকে তখন এক শট দূরে জিম্বাবুয়ে।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের চোখেমুখে তখন হতাশার ছাপ। নিশ্চিত জিতে যাওয়া ম্যাচে যে আবারো মাঠে নামতে হবে তাদের। যেখানে আছে হারের শঙ্কাও। উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের ক্ষমার অযোগ্য ভুলে এমনই নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের লড়াই।

ব্রিসবেন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মাঠের লড়াইয়ে সব ছাপিয়ে শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশই। অষ্টম টি-২০ বিশ্বকাপের ২৮তম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। যদিও খুব সহজে জয় পায়নি সাকিব আল হাসানের দল। ম্যাচের প্রতি পরতে ছিল নাটকীয়তা।

আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৫০ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে আট উইকেটে ১৪৭ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ানরা।

শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। মোসাদ্দেকের করা ওভারটির প্রথম বলে আসে এক রান। পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে কাউ কর্ণারে আফিফের তালুবন্দী হন ব্র্যাড ইভান্স।

তৃতীয় বলে গারাভার ব্যাট থেকে আসে চার রান। পরের বলে ছক্কা হাঁকান তিনি। যা ছিল টি-২০ ক্রিকেটেই তার প্রথম ছক্কা। দুই বলে ৫ রান, এ অবস্থায় স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন গারাভা। ফলে শেষ বলে দরকার দাঁড়ায় ৫ রানে।

ইনিংসের শেষ বলে কোনো রান নিতে পারেননি ব্লেসিং মুজারাবানি। তিনি স্ট্যাম্পিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিত হয় আনন্দে ভাসে বাংলাদেশ। ম্যাচ জয়ের আনন্দে সবাই ফেরেন ডাগ আউটে।

এর পরই আসে নাটকীয় মুহূর্ত। শেষ ডেলিভারিতে স্ট্যাম্পের আগে সোহান বল ধরায় আম্পায়ার সেটি নো বল ঘোষণা করেন। তাই আবারো মাঠে নামতে হয় ক্রিকেটারদের। যদিও এই বলে আর রান আসেনি। আর বাংলাদেশ পায় রোমাঞ্চে ভরা জয়।

এর আগে জিম্বাবুয়ের হয়ে রান তাড়া করতে নামেন ওয়েসলে মাধেভেরে ও ক্রেইগ আরভিন। দুই ওপেনারকেই পরপর দুই ওভারে ফেরান তাসকিন আহমেদ। মাধেভেরে ৪ ও আরভিন ৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন।

পাওয়ার প্লে-র শেষ তথা ষষ্ঠ ওভারে এসে বড় আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। এ সময় মিল্টন শুম্বাকে আউট করার পরপরই সিকান্দার রাজাকে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরান তিনি। বলা যায় এ সময় ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় জিম্বাবুয়ে।

তবে দ্রুত চার উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন শন উইলিয়ামস ও রেগিস চাকাভা। দুজনে গড়েন ৩৪ রানের জুটি। আক্রমণে এসেই এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। তার তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে চাকাভা করেন ১৫ রান।

ষষ্ঠ উইকেটে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন শন ও রায়ার্ন বার্ল। দুজনে মিলে পাল্টা আক্রমণে দলকে জয়ের বন্দরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। শেষদিকে ৩ ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ৪০ রান। যা ২ ওভারে পরিণত হয় ২৬ রানে।

সাকিবের করা ১৯তম ওভারের প্রথম তিন বলে ৭ রান যোগ করেন বার্ল ও উইলিয়ামস। ওভারের চতুর্থ বলে দুর্দান্ত এক থ্রো থেকে শনকে রান আউট করেন সাকিব। জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটার ফেরেন ৬৪ রানে। মূলত এটাই ছিল ম্যাচে বাংলাদেশের টার্নিং পয়েন্ট।

দিনের শুরুতে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এ ম্যাচে এক পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে টাইগাররা। মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় খেলছেন ইয়াসির আলী রাব্বি।

দলের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম সাফল্য পায় জিম্বাবুয়ে। রানের খাতা খোলার আগেই ব্লেসিং মুজারাবানির বলে উইকেটকিপার রেগিস চাকাভার তালুবন্দী হন সৌম্য।

শুরুতেই উইকেট হারানোর পর দেখেশুনে খেলতে থাকেন লিটন দাস ও শান্ত। ধীরেসুস্থে ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলেন দুজন। তবে ষষ্ঠ ওভারে মুজারাবানিকে স্কুপ করতে গিয়ে চাতারার হাতে ধরা পড়েন তিনি। এর আগে করেন ১৪ রান।

চার নম্বরে নেমে শুরু থেকেই মেরে খেলার চেষ্টা করতে থাকেন সাকিব আল হাসান। অন্যপ্রান্তে ধীরগতির ইনিংস খেলতে থাকেন শান্ত। অনেকটা চাপের মুখে মারতে গিয়ে শন উইলিয়ামসের বলে মুজারাবানির তালুবন্দী হন সাকিব। এর আগে খেলেন ২৩ রানের ইনিংস।

একপ্রান্ত আগলে খেলা শান্ত ৪৫ বলে অর্ধশতকের দেখা পান। ফিফটির পর আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৫৫ বলে ৭১ রান করে সিকান্দার রাজার বলে আউট হন এ ওপেনার।

শেষদিকে আফিফ হোসেনের ২০ বলে ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংসে লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এর আগে মোসাদ্দেক হোসেন ৭ ও নুরুল হাসান সোহান ১ রানে আউট হন।

জিম্বাবুয়ের হয়ে গারাভা ও মুজারবানি দুটি এবং রাজা ও শন উইলিয়ামস একটি করে উইকেট শিকার করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *