নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল চান অভিভাবকরা

নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল চান অভিভাবকরা

জাতীয় স্লাইড

নভেম্বর ২৫, ২০২৩ ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের অভিভাবকদের বড় একটি অংশ নতুন শিক্ষাক্রম মেনে নিতে পারছেন না। এই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তাদের রয়েছে নানা অভিযোগ। ঐতিহ্যগত শিক্ষা কাঠামো থেকে সরে এসে শিক্ষার্থীদের বাসায় রান্না শেখা, তথ্য অনুসন্ধানের নামে ইউটিউব নির্ভর হওয়া, নাচ-গান, নবান্ন উৎসব, পিঠা তৈরি, সাজসজ্জাসহ অপ্রয়োজনীয় অনেক বিষয়কে শিক্ষাক্রমভুক্ত করা হয়েছে।

অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, যে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের আগের প্রজন্ম মেধাবী হিসাবে পাঠ শেষ করেছে এখনকার নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় একেবারে উলটো চিত্র। নতুন শিক্ষাক্রমে আঁকাবুঁকিতে ব্যস্ত হয়ে পড়া, বাসায় অ্যাসাইনমেন্টের জন্য দলগতভাবে আড্ডা করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বাসায় পড়াশোনা না করে ডিভাইস নিয়ে পড়ে থাকে।

এদিকে শিক্ষাবর্ষের শেষদিকে এসে শুরু হয়েছে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বার্ষিক মূল্যায়ন। নতুন শিক্ষাক্রমের শুরুতে পাশ-ফেল নেই বলে এনসিটিবি, মাউশি ও স্কুলের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে, বছর শেষে তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। এখানে ত্রিভুজকে সবচেয়ে দক্ষ বা ভালো, বৃত্তকে মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজকে খারাপ হিসাবে দেখানো হচ্ছে। শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে খারাপ করছে, কোন বিষয়ে ভালো করছে, তা জানার ভালো উপায় নেই। তিন বিষয়ে চতুর্ভুজ পেলে সন্তান পরের ক্লাসে উঠতে পারবে না। সামষ্টিক মূল্যায়নের মাত্র ৪ দিন আগে এগুলো জানানো হচ্ছে। এইসব নির্দেশিকা বাদ দিয়ে নম্বরভিত্তিক মূল্যায়নের পদ্ধতি চালু করা ও একইসঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল চেয়েছেন অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে শুক্রবার ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন। দাবিগুলো হলো- নতুন কারিকুলাম বাতিল; নম্বর ভিত্তিক দুটি সাময়িক লিখিত পরীক্ষা চালু ও ক্লাস টেস্টগুলোকে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হিসাবে গণ্য করা; নবম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচনের সুযোগ অথবা বিজ্ঞান বিভাগ রাখা; ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বাতিল করে নম্বর ও গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি বহাল রাখা; শিখন, প্রজেক্ট ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন করা; শিক্ষার্থীদের ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে তাত্ত্বিক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করা; নিবন্ধন ও সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বহাল রাখা এবং সব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রিপরিষদ এবং সংসদে উত্থাপন করা।

মানববন্ধনে শিক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক রাখাল রাহা বলেন, একটি কারিকুলাম প্রণয়নে বিভিন্ন মহলে আলোচনা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী কিনা সেটি ভাবার প্রয়োজন ছিল। সংসদে ও মন্ত্রিপরিষদে এ কারিকুলামে আলোচনা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এসব হয়েছে কিনা আমরা জানি না।

সমাবেশে অভিভাবকরা বলেন, যে ইন্ডিকেটর দিয়ে বাচ্চাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেটি তো প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রযোজ্য। নতুন এ কারিকুলামে আমাদের ব্যয়ও বাড়ছে। আমরা এত ব্যয় কুলিয়ে উঠতে পারছি না। প্রতিদিন কাগজ, কলম ও পেন্সিলের পাশাপাশি এখন নতুন নতুন সরঞ্জাম যুক্ত করা হচ্ছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির আহমেদ বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই শিক্ষা পদ্ধতিতে স্কুলের বাচ্চাদের মেধা ও যোগ্যতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই শিক্ষাব্যবস্থা অব্যশই বাতিল করতে হবে।

তবে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যারা জড়িত তারা বলছেন ভিন্ন কথা। শিক্ষাক্রম বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শিক্ষাক্রম ইউনিটের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, শুধু বাতিল চাইলে হবে না। এটার যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে। আমরা দীর্ঘ গবেষণা করে এই শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছি। যদি কেউ সুনির্দিষ্ট গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ দিতে এই পদ্ধতি ভুল। তাহলে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *