নগর উন্নয়ন ভাবনা

স্লাইড

জানুয়ারি ১৭, ২০২৪ ১১:১০ অপরাহ্ণ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :

নগর উন্নয়ন কথায় প্রথম যে বিষয়টি আসে তাহলো পরিবেশ। পরিবেশ সম্পর্কে সহজে বুঝি আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই আমাদের পরিবেশ। অর্থাৎ মাটি,পানি,বায়ু, গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, আকাশ ইত্যাদি সবই আমাদের পরিবেশের অংশ । পরিবেশ সম্পর্কে মাসটন বেটস বলেছেন, পরিবেশ হলো সেসব বাহ্যিক অবস্থার সমষ্টি যা জীবনের বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে ।মনোবিজ্ঞানী বোরিং, লংফিল্ড এবং ওয়েল্ড এর মতে, জিন ব্যতীত যা কিছু ব্যক্তির উপর প্রভাব ফেলে , তাই হলো পরিবেশ। অন্যদিকে পরিবেশ বিষয়টি তখনই সুখকর হয় যখন তা হয় পরিকল্পিত পরিবেশ। পরিকল্পিত পরিবেশ উন্নয়ন বা নগর উন্নয়ন বলতে বুঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি। যার সবকিছু হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। কোথায় স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল হবে, অফিস-আদালত কোথায়, কোথায় বসবাসের জায়গা সবকিছুই হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হলে প্রত্যেক নগরেই মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে।নগর সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ একটি আধুনিক নগরের কথা চিন্তা-ভাবনা করেছে। প্রায় ছয় হাজার বছর আগে যখন মেসোপেটোমিয়ার টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকায় ব্যবিলন, উর ইত্যাদি প্রাচীন শহরগুলোর পত্তন হয় বা তার পরে নীল অববাহিকায় কাহুন অথবা সিন্ধু অববাহিকায় হরপ্পা-মহেঞ্জেদারো ইত্যাদি শহর গড়ে ওঠে তার অনেকগুলোই গড়ে উঠেছিল এক একটি আদর্শ রূপকল্পকে ভিত্তি করে।একটি নগরীকে বসবাসের সুযোগ-সুবিধা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা, অপরাধের হার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোর গুণগতমান, পানি সরবরাহের মান, খাদ্য, বিদ্যুৎ, পানীয়, ভোক্তাপণ্য এবং সেবা, সরকারি বাসগৃহের প্রাপ্যতা ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে তাকে আদর্শ নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। এসব দিক থেকে আমাদের নগরগুলোর কী অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমাদের নগর উন্নয়নের ধাপ গুলো কেমন হতে পারে –

প্রথমত, যেসব পরিকল্পনা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে তার দ্রুত গেজেট প্রকাশ করা দরকার এবং যেসব শহরের মহাপরিকল্পনা এখনো প্রস্তুত করা হয়নি তা দ্রুত সম্পন্ন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে মহাপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নগর ও গ্রামীণ স্থানীয় সরকারগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা প্রয়োজন এবং পরিকল্পনার আওতায় প্রকল্প প্রস্তাবনাগুলোর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি ও আর্থিক সংস্থান সৃষ্টি করা দরকার।
দ্বিতীয়ত, পরিকল্পিত নগর, অঞ্চল ও গ্রামীণ উন্নয়নকে সঠিক নীতি ও আইনি কাঠামোর আওতায় আনা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে খসড়া ‘নগর উন্নয়ন নীতি’ এবং ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন’র চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে বর্তমান বাস্তবতায় নগর ও গ্রামীণ ব্যবস্থাকে অধিকতর পরিকল্পিত করার লক্ষ্যে প্রচলিত আইনগুলোর সংস্কার প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, মহাপরিকল্পনাভিত্তিক পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিকল্পনা পেশাসহ ও অন্যান্য কারিগরি পেশার সম্প্রসারণও শক্তিশালীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, নগর এলাকাগুলোর মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি অতি জরুরি। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় করে পরিকল্পনাসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডকে শক্তিশালী করা দরকার। এ লক্ষ্যে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরকে পরিকল্পনা কর্মকাণ্ডে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এর জনবল কাঠামোর সম্প্রসারণ প্রয়োজন।

সর্বোপরি পরিকল্পনা হতে হবে বাস্তবতা বান্ধব এবং মাঠপর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যেখানে প্রতিটা স্থানীয় পরিকল্পনা হবে বোটম টু আপ পদ্ধতিতে।

লেখক :
পবিত্র কুমার দাস, এম.এস.এস শিক্ষার্থী, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *