দ্বাদশ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের

দ্বাদশ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের

রাজনীতি স্লাইড

জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপিকে (জিএম কাদের) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপিকে করা হয়েছে বিরোধীদলীয় উপনেতা। রোববার জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, ‘সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতো দল বা অধিসংঘের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে (২১ রংপুর-৩) জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালিবিধির ২(১)(ট) অনুযায়ী বিরোধী দলের নেতা এবং ‘বিরোধী দলের নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১’ মোতাবেক ২৮২ চট্টগ্রাম-৫ হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে স্পিকার স্বীকৃতি প্রদান করিলেন।’ স্পিকারের আদেশক্রমে ওই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আব্দুস সালাম।

বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের বলয়ভুক্ত দল ও জোটের বর্জনের মধ্যে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১টি আসন পায় জাতীয় পার্টি। অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করে। এর বাইরে ৬২টি আসনে জয়ী হন স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা। এছাড়াও এবারের এ নির্বাচনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পায়। জাতীয় পার্টি না স্বতন্ত্র জোট-কারা হবে দ্বাদশ সংসদের বিরোধী দল, এ নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে নির্বাচনে আসন পাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের মর্যাদা দিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া দলটি এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসল।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে। নতুন সংসদ এবং বছরের প্রথম অধিবেশন হওয়ায় এদিন রীতি অনুযায়ী ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে তার দেওয়া এ ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবেন নতুন সংসদের সংসদ-সদস্যরা। এছাড়াও অধিবেশনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর।

এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। ইতোমধ্যে বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে দ্বিতীয় মেয়াদেও একই পদে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল। পরে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অবর্তমানে সাধারণত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা অধিবেশনে সভাপতিত্ব করে থাকেন। প্রথম দিন টানা চতুর্থসহ পাঁচ মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাবে জাতীয় সংসদ।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে অধিবেশনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংসদ সচিবালয়। আসনবিন্যাসের কাজও শেষ। স্পিকারের আসনের ডানদিকে ট্রেজারি বেঞ্চের সামনের সারিতে থাকছে সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন। পরের আসনে সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী; তাদের পাশের আসনে বসবেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। প্রথম সারিতে আসন আছে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের। সংসদনেতার পেছনের সারির প্রথম আসন চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরীর।

স্পিকারের বাঁদিকে সামনের সারিতে বসবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের, পরের আসনে বিরোধীদলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার। দ্বিতীয় সারিতে দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। এছাড়াও বিরোধী দলের প্রথম সারির পরের তিনটি আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে।

দ্বাদশ সংসদের অধিবেশন শুরুর দিনও রাজপথে থাকবে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এদিন লাল-সবুজের পতাকা মিছিল এবং সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে কালো পতাকা মিছিলের ডাক দিয়েছে বিএনপিসহ তাদের শরিকরা।

এ অবস্থায় সংসদ অধিবেশন চলাকালে জাতীয় সংসদ ভবন ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এক আদেশে এসব নিষেধাজ্ঞার কথা জানান। আদেশে সোমবার রাত ১২টা থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া যে কোনো ধরনের সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন প্রভৃতি নিষেধ করা হয়েছে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, যেসব এলাকায় এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে, এর মধ্যে ময়মনসিংহ রোডের মহাখালী ক্রসিং থেকে পুরোনো বিমানবন্দর হয়ে বাংলামোটর ক্রসিং পর্যন্ত, বাংলামোটর লিংক রোডের পশ্চিম প্রান্ত থেকে হোটেল সোনারগাঁও রোডের সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত এবং পান্থপথের পূর্বপ্রান্ত থেকে গ্রিন রোডের সংযোগস্থল হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত। মিরপুর রোডের শ্যামলী মোড় থেকে ধানমন্ডি-১৬ (পুরাতন-২৭) নম্বর সড়কের সংযোগস্থল ও রোকেয়া সরণির সংযোগস্থল থেকে পুরাতন নবম ডিভিশন (উড়োজাহাজ) ক্রসিং হয়ে বিজয় সরণির পর্যটন ক্রসিং, ইন্দিরা রোডের পূর্বপ্রান্ত থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পশ্চিম প্রান্ত, জাতীয় সংসদ ভবনের সংরক্ষিত এলাকা এবং এই সীমানার মধ্যে অবস্থিত সমুদয় রাস্তা ও গলিপথ। অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *