দেশের মানুষের অভিশাপ থেকে কেউ মাফ পাবেন না: জিএম কাদের

দেশের মানুষের অভিশাপ থেকে কেউ মাফ পাবেন না: জিএম কাদের

রাজনীতি স্লাইড

মার্চ ২৬, ২০২৪ ৫:৩০ অপরাহ্ণ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, নির্বাচন সঠিকভাবে হয়নি তা সংসদে বিস্তারিতভাবেই বলেছি। আইআরআই বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টের আগেই আমি সংসদে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। নির্বাচন ইস্যুতে খবরের কাগজে নিবন্ধও লিখেছি। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দলের কিছু লোক কথা বলে না। তাই দীর্ঘদিন ধরেই দল হিসেবে আমরা সংসদে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কারণ, সরকার আমাদের দলের মাঝে একটা বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে। সরকারের এটা করা উচিত না। আমাদের মতো দল ধংস হয়ে গেলে সরকারও সুখে থাকবে না।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, দেশের সব ক্ষমতা যদি জনগণের হয় তাহলে তারাই নির্বাচন করবে জনপ্রতিনিধি। দেশের মানুষের কি ভোটাধিকার আছে? আমরা বৈষম্যমুক্ত একটি সমাজ চেয়েছিলাম, যেখানে সবার জবাবদিহিতা থাকবে। কেন জিনিসপত্রের দাম কমছে না? কেন প্রতিদিনের লাগা আগুন বন্ধ করতে পারছে না? কেন ভেজাল বন্ধ করতে পারছে না? কারণ হচ্ছে, কোথাও জাবাবদিহিতা নেই। গণতন্ত্রের বড় অবদান হচ্ছে আইনের চোখে সবাই সমান হবে। এখন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। আইন করা আছে, সরকারের সমালোচনা করলেই আইন মাফিক মামলা হয়। বৈধভাবেই আমাদের দাবিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছে সরকার। এটা কোনো স্বাধীন দেশে হতে পারে? মানুষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাঙ্ক্ষিত সমাজ নির্মাণ হয়নি এবং আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। আমরা উলটোপথে চলছি। মানুষকে নেতা নির্বাচনের অধিকার দিতে হবে, দেশ পরিচালনায় জবাবদিহিতা থাকতে হবে। ৫ টাকার পণ্য ৫ হাজার টাকায় কেনার মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে, রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি চলছে। এগুলো দেখিয়ে বলা হচ্ছে, আমরা গরিব দেশ নই। অল্প সংখ্যক মানুষের জন্য দেশ গরিব নয়, দেশের বেশির ভাগ মানুষের জন্য বাংলাদেশ দেশ গরিব। বেশিরভাগ মানুষই অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। বেশির ভাগ মানুষ জানেন না, কাল তার বাড়িটি দখল হয়ে গেলে বিচারের জন্য কার কাছে যাবে। এমন অসংখ্য অভিযোগ আমরা জানতে পারছি।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, স্বাধীনতার গুণগান আমরা করব, যে স্বাধীনতার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে। সেই স্বাধীনতার জন্য আমরা এগিয়ে যাব, বাধা এলে মোকবাবিলা করব। যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা গেলে, বিপ্লবের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেখানে যুক্তির দাম নেই, আপসকামিতাকে দুর্বলতা মনে করা হয়- ছোট মনে করা হয়। সেখানে বিপ্লবের বিকল্প হয় না। যে প্রক্রিয়ায় দেশের রাজনীতি চলছে, তাতে দেশের কোনো আদর্শিক রাজনৈতিক দল টিকবে না। এতে যৌক্তিক রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। শুধু সরকার হিসেবেই আওয়ামী লীগ ঠিক আছে, কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের যে চরিত্র হওয়ার কথা তা থেকে তারা দূরে সরে গেছেন। সামনের দিকে পাপেট ছাড়া রাজনৈতিক দল থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যুক্তির বাইরে কিছু করতে চাই না, কিন্তু গায়ের জোরে কেউ দাবিয়ে রাখতে চাইলে সেখানে গায়ের জোরের বিকল্প নেই। সবাই মিলে সহনশীল হলে, যুক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব। দেশ ডুবিয়ে দিয়ে, কেউ বিদেশে গিয়ে সুখে থাকবেন- তা হবে না। দেশের মানুষের অভিশাপ থেকে কেউ মাফ পাবেন না। দেশকে বাঁচাতেই হবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে তাদের প্রতি সম্মান দেখানোর কথা ছিল। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রামে গ্রামে লোক পাঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা করেছিলেন। সেই তালিকায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া গেছে। এখন সেই তালিকা কয়েকগুন বড় হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের লোকের নাম ঢুকাতেই নতুন করে বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করেছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি যাকে ইচ্ছে তাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঢুকিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে তালিকা মানে, নতুন আরও কিছু লোক ঢোকানো হবে। দেশে নাকি পঞ্চাশ বছর বয়সি মুক্তিযোদ্ধা আছে। এগুলো বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করা হয়েছে। পল্লীবন্ধু এরশাদ মুক্তিযোদ্ধাদের সংসদ করতে প্রতিটি উপজেলায় জায়গা দিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির ব্যবস্থা করেছিলেন পল্লীবন্ধু। জাতীয় পার্টি মুক্তিযোদ্ধাদের দলীয়করণ করেনি। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের দলীয়করণ করেছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে সরকারের পক্ষে লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে। দেশে বৈষম্য ও লুটপাট চলছে। ব্যাংক খালি করে লুটপাট হচ্ছে। গ্লোবাল ফিনানসিয়াল ইন্ট্রেগ্রিটি (জিএফআই) বলেছে, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আর কোনো তথ্য দিচ্ছে না। তাই দেশ থেকে কত টাকা পাচার হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। এখনো পাচার হচ্ছে, আগে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও পাচার হতো। এখন বরং টাকা পাচার আরও বেড়েছে। বর্তমান সরকার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ব্যবসা করছে।

সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা জিএম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। কিছু মানুষকে উপরে তুলে ধরা হচ্ছে, আর কিছু মানুষকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। ইতিহাস বিকৃত করে তা ধরে রাখতে আবার আইন করা হচ্ছে। স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করেছিল। আমরা সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছিলাম। ভাষার মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছিল, তার প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলন হয়েছে। বৈষম্য লালন ও বিভক্তি সৃষ্টি করে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে লুটপাট চলছে। তাই শহিদ মিনারে দাঁড়িয়েই কথা বলতে হবে বৈষম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলেও ইংরেজিতে সব কাজ হতো। এতে গ্রামের সাধারণ ছেলেরা চাকরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। কারণ, গ্রামের ছেলেরা ইংরেজিতে কথা বলতে পারতো না। কিন্তু বড় লোকের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া ছেলেরা চাকরি পেতো। তাই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সব স্তরে বাংলাভাষা প্রচলনে আইন করেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন করেছিলেন।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অংশ নেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার, শেরীফা কাদের, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সুলতান আহমেদ সেলিম, জাতীয় যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ সোবহান, জাতীয় কৃষক পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি আল মামুন।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, মো. খলিলুর রহমান খলিল, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন, আনিস উর রহমান খোকন, কাজী আবুল খায়ের, সুলতান মাহমুদ, মাসুদুর রহমান মাসুম, এমএ রাজ্জাক খান, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, মিজানুর রহমান মিরু, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সাত্তার গালিব, বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, আবু তৈয়ব, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, দ্বীন ইসলাম শেখ, কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ, জামাল উদ্দিন, মোতাহার হোসেন, পারুল বেগম, আব্দুল কুদ্দুস মানিক, মো. আলমগীর হোসেন, মাহফুজ মোল্লা, রাজ মোহাম্মদ ওমর, আলতাফ মন্ডল।

অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের মধ্যে আশরাফুল ইসলাম খান, মো. আব্দুর রহিম, ইঞ্জিনিয়ার জুবায়ের, নাজমুল হাসান রেজা,ওমর ফারুক সুজন, চম্পা মন্ডল, আলাল মেম্বার, মারজান, এরশাদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *