দলেই গলাধাক্কা খেয়েছেন বরিসের যে পূর্বসূরিরা

আন্তর্জাতিক স্লাইড

জুলাই ৮, ২০২২ ১:০৩ অপরাহ্ণ

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন হলেন সর্বশেষ রক্ষণশীল নেতা, যিনি দলীয় চাপে পদত্যাগ করলেন।

সেই তালিকায় নাম লেখালেন বরিসও। ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই থেরেসা মের কাছ থেকে ক্ষমতা নেন বরিস। মেয়াদ শেষের আগেই মাত্র ২ বছর ৩৪৮ দিনের মাথায় পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের সবথেকে স্বল্পমেয়াদি প্রধানমন্ত্রীর তকমা পেলেন তিনি।

মার্গারেট থ্যাচার : বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। মার্গারেট থ্যাচার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৭৯ সালের ৪ মে। ১৯৯০ সালের ১ নভেম্বর থ্যাচারের সবচেয়ে পুরোনো ক্যাবিনেট মন্ত্রী গফ্রি ডেপুটি প্রাইমমিনিস্টার হিসাবে পদত্যাগ করলে থ্যাচারের প্রধানমন্ত্রিত্ব হুমকির মুখে পড়ে।

পরের দিন মাইকেল হাসেলটিন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন। যদিও থ্যাচার প্রথম ব্যালটে জয় পান। কিন্তু মাইকেল যথেষ্ট সমর্থন পাওয়ায় দ্বিতীয় ব্যালট আদায় করে নিতে সক্ষম হন। তবে দ্বিতীয় ব্যালটে থ্যাচার চার ভোট কম পান। প্রাথমিকভাবে তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে ক্যাবিনেটের পরামর্শে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। এ সময় তিনি নিজেকে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে বিতাড়িত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এ কারণে তিনি কখনো ক্ষমা করবেন না বলে জানান। থ্যাচারের পর জন মেজর কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পদত্যাগের পর মার্গারেট থ্যাচার দুই বছর ফিনচলির এমপি ছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি ৬৬ বছর বয়সে হাউজ অব কমন্স থেকে পদত্যাগ করেন।

ইয়ান ডানকান স্মিথ : ডানকান স্মিথ ২০০১ সালে কনজারভেটিভ নেতৃত্বে জয়লাভ করে উইলিয়াম হেগের স্থলাভিষিক্ত হন। পার্লামেন্টে তার বিস্ময়কর আসন গ্রহণে থ্যাচার এবং তার অনুগতরা সাহায্য করেছিল। লেবার দলের ক্যারিশমেটিক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে লড়াই করতে হয়েছিল তাকে।

২০০৩ সালের অক্টোবর নাগাদ ইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনের সম্পৃক্ততার ব্যাপক জনবিরোধিতা সত্ত্বেও সংসদীয় দল ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেননি ডানকান স্মিথ। আস্থা ভোটে হেরে নেতৃত্ব ছাড়তে হয় তাকে। নেভিল চেম্বারলেনের পর তিনিই প্রথম টোরি নেতা, যিনি সাধারণ নির্বাচনে লড়াই করেননি।

থেরেসা মে : ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কনজারভেটিভ দলের ক্ষমতায় এসেছিলেন সাবেক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী থেরেসা মে। ডেভিড ক্যামেরনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ৫ জুলাই প্রথম দফার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রক্ষণশীল দলের এমপিদের মোট ভোটের ৫০ শতাংশ ব্যবধানে জয়ী হন।

এর দুই দিন পর তিনি ১৯৯ এমপির ভোট পান। ফলে আন্দ্রিয়া লিডসমের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান এবং রক্ষণশীল দলের সদস্যদের প্রাপ্ত ভোটের মুখোমুখি হন। কিন্তু ১১ জুলাইয়ের নির্বাচনে লিডসমের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে থেরেসা মেকে ওইদিনই দলীয় প্রধানের নেতৃত্ব হস্তান্তরের ঘোষণা করা হয়। এর ফলে ১৩ জুলাই ব্রিটেনের ৭৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাকে নিযুক্ত করা হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কনজারভেটিভ বিদ্রোহীদের ডাকা একটি আস্থা ভোটে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক ডজন কনজারভেটিভ বিদ্রোহীসহ হাউজ অব কমন্সে ব্রেক্সিট চুক্তি চতুর্থবারের মতো প্রত্যাখ্যান করার পর তার নেতৃত্ব মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। অবশেষে ২০১৯ সালের মে মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকা বরিস জনসন এর দুই মাস পরই ক্ষমতায় আরোহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *