ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩ ১০:১০ পূর্বাহ্ণ
ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার লন্ডভন্ড অঞ্চলগুলোতে দিনরাত উদ্ধারকাজ চলছে। উদ্ধার অভিযানে দুই দেশের স্বেচ্ছাসেবী, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবীরা। ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্পের পর থেকে গত ১২ দিনে অনেক জীবিত উদ্ধার হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ও কয়েকজন জীবিত উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ। কারণ ধ্বংসলীলা বয়ে যাওয়া এলাকাগুলোতে এখন শুধু লাশের গন্ধ। এখন যেসব লাশ উদ্ধার হচ্ছে, সেগুলোর বিবরণ দেওয়া সম্ভব নয়। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মানুষের হাহাকার চলছে। তারা খাদ্য, পানি ও কাপড় চাচ্ছেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা খাদ্য, কাপড়সহ অন্যান্য সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। তাবে এই সহায়তা পর্যাপ্ত নয়। কামালপাশা সড়কের পাশে একটি পরিবারের পাঁচ সাতটি শিশুর সঙ্গে দেখা হয়। এদের সম্পর্কে ২২ বছর বয়সি উলফা রাশিদ বলে, ‘এরা শিশু। কী হয়েছে, তারা জানে না। তারা খাবার চায়।’
বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের সঙ্গে বুধবার রাতে সাক্ষাৎ করেন আদিয়ামান প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মুস্তফা ওসমান তুরান। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে আসা টিম শহরজুড়ে উদ্ধার কার্যক্রম সফল ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করছে। বিপদের সময় বাংলাদেশ সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা সত্যিকার অর্থেই দুই দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের অনন্য উদাহরণ।
মুসলিম দেশ হিসেবে আমাদের পাশে থাকায় আমরা বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত ও কার্যকরী সিদ্ধান্তের কথা তুরস্কের জনগণ ভুলবে না। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল অস্থায়ী তাঁবু। বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ১০ হাজার তাঁবু অনেকাংশেই চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে আশা করছি।
সরেজমিন দেখা যায়, মসজিদগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তুরস্ক প্রশাসন উদ্ধারকাজ পরিচালনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের থাকা, খাওয়া ও স্বাস্থ্যসেবায় দিনরাত কাজ করছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা উদ্ধারকারী দলগুলোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন তুরস্কের উদ্ধারকর্মীরা। শিশুখাদ্যসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে।
আদিয়ামান প্রদেশ থেকে হাতাই প্রদেশে যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে শুধু ধ্বংসস্তূপ। বহুতল ভবনগুলো ধসে পড়ে আছে। সেখান থেকে বের করে আনা হচ্ছে লাশ। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা চালু করার কাজ চলছে।
আর ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে বলেন, ‘আপনারা আমাদের কষ্টের মুহূর্তে এখানে এসেছেন। যদি সুদিনে আসতেন তাহলে অবশ্যই ভালোভাবে আপ্যায়ন করতে পারতাম। আরও বেশি ভালোবাসা দিতে পারতাম।’ বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ টিম পৌঁছে সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশ হাতায়ে।
তুরস্কে ভূমিকম্পের সঙ্গে বসবাস : তুরস্কের বিপর্যয় ও আপৎকালীন মোকাবিলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত তুরস্কে তেত্রিশ হাজার বারেরও বেশি ভূমকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে ৩৩২ বার। ১৯৩৯ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭.৮। ওই ভূমিকম্পে ৩২ হাজার ৭০০ জন মারা গিয়েছিল।
১৯৯৯ সালের ১৭ অগস্ট। দেশটির ইজমিটে ভূমিকম্পে মারা যান ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৬। একই কম্পন অনুভূত হয়েছিল ১৭৮৪ সালের ২৩ জুলাই। এরজিনকানে ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিল পাঁচ হাজার জন। ১৬৫৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রিখটার স্কেলে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর ফলে আড়াই হাজার মানুষ নিহত হয়।
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ১৯৩০ সালের ৭ মে। সেবারের ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিল আড়াই হাজার মানুষ। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭.৫। ১৮৮১ সালের ৩ এপ্রিল ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় চার হাজার ৮৬৬ জন। ঠিক তার দু’বছর পর ১৮৮৩ সালের ১০ অক্টোবর ভূমিকম্পে মারা যায় ১২০ জন। তুরস্কে ১৯৫৩ সালের ৯ আগস্ট ভূমিকম্পে ২১৬ জন প্রাণ হারায়।
১৫০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় ১০ হাজার জন। ১৮৭২ সালের ৩ এপ্রিল এক হাজার ৮০০ মারা যায়। ১৯৫৩ সালের ১৮ মার্চ প্রাণ হারায় ২৬৫ জন। ১৯৭০ সালের ২৮ মার্চ মারা যায় এক হাজার ৮৬ জন। ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর ভূমিকম্পে মারা যায় ৮৯৪ জন। ২০১১ সালে ২৩ অক্টোবর ৬০৪ জন প্রাণ হারায়। সব ক্ষেত্রেই রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.২।