ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৯ হলেও কেন ৪৩ ডিগ্রি অনুভূত হচ্ছে?

ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৯ হলেও কেন ৪৩ ডিগ্রি অনুভূত হচ্ছে?

ফিচার স্পেশাল

এপ্রিল ২৯, ২০২৪ ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ

গরমের তীব্রতা বাড়ায় সারাদেশে বইছে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপদাহ। তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪২ ডিগ্রির ঘরে। এমনকি রাজধানীতেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছে। তীব্র তাপদাহে কোথাও স্বস্তি নেই, জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। কাঠফাটা গরমের তীব্রতা এতটাই যে জারি আছে হিট অ্যালার্ট।
এমন পরিস্থিতিতে তাপমাত্রা কতটা বাড়লো বা কমলো, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে জানার আগ্রহ রয়েছে। হাতে থাকা মোবাইলে তাই দেখে নিচ্ছেন তাপমাত্রার হিসাব। গুগলে সার্চ করলে প্রথমেই দেখায় নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা। তবে এর ঠিক নিচে ছোট করে লেখা থাকে, ‘ফিল্‌স লাইক’। ঢাকার কোনো

এলাকায় তাপমাত্রা যদি ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে ‘ফিলস লাইক’-এ তার চেয়ে তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি দেখানো হয়। অর্থাৎ প্রকৃত তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি হলেও গরম অনুভূত হয় ৪৩ বা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো।

আবার বিপরীত ঘটনা ঘটে শীতকালে। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও তার ‘ফিল্‌স লাইক’ কখনো পৌঁছে যায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অর্থাৎ, সেখানকার মানুষ আসলে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো ঠান্ডা অনুভব করছেন।

গুগলে দেখানো তাপমাত্রার চেয়ে অনুভূত হওয়ার অঙ্কটা মেলে না। এটি দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, কী এই ‘ফিল্‌স লাইক’? অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া বিজ্ঞান ব্যুরো বলছে, তাপমাত্রার ‘ফিল্‌স লাইক’ মাপা হয় কোনো এলাকার সম্ভাব্য তাপমাত্রার পূর্বাভাস বা ওই এলাকার আর্দ্রতা এবং বাতাসের গতিবেগ অনুসারে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, তাপমাত্রা বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা। কিন্তু রাস্তাঘাটে বেরোলে শুধু বাতাস নয়, আরও কিছু বিষয় তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলে। বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগের কারণে মূল তাপমাত্রার থেকেও বেশি গরম বা ঠান্ডা অনুভূত হয়ে থাকে।

যদি কোথাও তাপ আছে, তাহলে তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার চাই কোনো একটি মাধ্যম, যেমন বাতাস বা পানি। যেখানে বাতাস প্রবাহিত হবে, তা উষ্ণ বস্তুর তাপ কম করতে থাকবে। তাই যত বেগে বাতাস প্রবাহিত হবে, তত তাপমাত্রার প্রভাব আপনি কম অনুভব করবেন।

বাতাসে জলীয় বাষ্প আর্দ্রতা হয়ে বিদ্যমান থাকে। ভিন্ন তাপমাত্রায় এর একটি নিশ্চিত মাত্রা হলো সুস্থ মাত্রা। আপনি ধরে নিন ২১° বা ২২° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৫৫% আর্দ্রতা হলো সুখকর। বাতাসে আর্দ্রতা যত বেশি হবে, তত তার তাপ বহন করার ক্ষমতা কম হতে থাকবে। Heat Removal Efficiency কম হয়ে যাবে। এর ফলে আপনি তাপমাত্রার প্রভাব আরো বেশি অনুভব করবেন।

যদি আপনি ভারতের দিল্লির তাপমাত্রার সঙ্গে ঢাকার তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন, দিল্লির তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রির বেশি তখনও আপনার যতটা ঘাম হবে, তার তুলনায় ঢাকায় ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রিতে আরো বেশি ঘামে ভিজে যাবেন। তার কারণ হলো আর্দ্রতা। সেখানে আর্দ্রতা ৭০- ৮০% বা এর বেশি থাকে। ত্রিপুরাতে তার চেয়েও বেশি হয়। এর ফলে সেখানে আপনার বেশি গরম লাগে। মনে হয় যেন শরীরটা রুদ্ধ হয়ে আছে। তার কারণ বাতাস তাপমাত্রা বহন করে সরিয়ে দিতে পারছে না। উদাহরণের জন্য এটা দিল্লির তাপমাত্রা, ৩৮° কিন্তু ফিল লাইক হচ্ছে ৩৭°। এখানে বাতাসের বেগ ১৭ কিমি/ ঘণ্টা কিন্তু আর্দ্রতা মাত্র ১১%, মানে শুষ্ক।

কীভাবে অনুভূত তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে বাতাসের আর্দ্রতা এবং হাওয়ার গতি? আবহাওয়াবিদদের মতে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বেশি হয়। কিন্তু সেই ঘাম বাষ্পের সঙ্গে মিশে যেতে সময় বেশি লাগে। শরীর ঠান্ডা হতে পারে না, তখন গরম কিছুটা বেশি লাগে। অস্বস্তির পরিমাণও বেড়ে যায়।

আবার বাতাসের উষ্ণতা যা-ই থাক না কেন, প্রবাহ বেশি থাকলে, অর্থাৎ হাওয়া বইলে তাপমাত্রা কম অনুভূত হয়। সে ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে গরমের অনুভূতির উপর। ফিল্স লাইক পরিমাপের সময়ে ভূমি থেকে পাঁচ ফুট উপরের হাওয়ার গতি মেপে দেখা হয়। সেই হিসাবটাই প্রকাশ করা হয়। গুগলেও তা-ই লেখা থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *