টেস্টের নেতৃত্বভার পেলেন সাকিব

খেলা

জুন ৩, ২০২২ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

শ্রীলংকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে হারার পর থেকেই মুমিনুল হকের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আর তাই টেস্ট দলের নেতৃত্বভার উঠছে সাকিব আল হাসানের কাঁধে, এমন তথ্যই শোনা যাচ্ছিল। আসলে সিদ্ধান্ত হয়েই ছিল। বিসিবির বোর্ড সভায় সেটা চূড়ান্ত করা হলো।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাধারণ সভা শেষে নতুন টেস্ট অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের নাম ঘোষণা করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

সদ্য টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া মুমিনুল হকের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সাকিব। গত মঙ্গলবার সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে আলোচনার পর অধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্বান্ত নেন মুমিনুল।

এরপরই টেস্ট দলের নতুন অধিনায়ক কে হচ্ছেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। মোমিনুলের সরে যাবার সিদ্ধান্তের ৪৮ ঘন্টা পার হবার আগেই জাতীয় দলের টেস্ট ফরম্যাটের অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের নাম ঘোষণা করে বিসিবি।

পাপন বলেন, বোর্ডে তিনজনের নাম এসেছিল। এর মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রথমে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়, এবার অধিনায়কের সাথে একজন সহ-অধিনায়ক আমরা যোগ করবো। ঐটা নিয়েই প্রথমে সিদ্ধান্ত হয় আমাদের। তারপর আসে, অধিনায়ক তাহলে কে হবে? আমরা আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সাকিব আল হাসান টেস্ট অধিনায়ক আর লিটন দাস সহ-অধিনায়ক।’

এই নিয়ে তৃতীয়বার টেস্ট অধিনায়ক হলেন সাকিব। এর আগে ২০০৯ ও ২০১৭ সালে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব করেছেন  এই অলরাউন্ডার। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তৎকালীন অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ইনজুরিতে পড়লে, অধিনায়ক হন সাকিব।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনই ইনজুরিতে পড়েন মাশরাফি। পরে সাকিবের নেতৃত্বে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে বিদেশের মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়।

২০১১ সালে সাকিবের অধীনে জিম্বাবুয়ের মাটিতে এক ম্যাচের সিরিজ হারে বাংলাদেশ। এতে অধিনায়কত্ব হারান সাকিব। তার জায়গায় অধিনায়ক হন মুশফিকুর রহিম। তবে ২০১৮ সালে মুশফিকের জায়গায় দ্বিতীয়বারের মত টেস্ট অধিনায়ক হন সাকিব।

তবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টেস্ট অধিনায়ক থাকেন সাকিব। জুয়াড়ির  কাছ থেকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানানোয় ২০১৯ সালে দুই বছরের জন্য ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন সাকিব। সাকিবের জায়গায় টেস্ট অধিনায়ক হন মুমিনুলকে।

দুই মেয়াদে, ১৪ ম্যাচে টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেন সাকিব। জয় ৩টি ও ১১টি হার ছিলো।

টেস্ট ফরম্যাটে অনিয়মিত হওয়ায় সাকিবকে অধিনায়ক করা নিয়ে দ্বিধায় ছিলো বোর্ড। তবে সাকিব নিশ্চিত করেছেন, নিয়মিত টেস্ট খেলবেন।

বোর্ডের বেশিরভাগ সদস্য মনে করছেন  নিয়মিত লংগার ভার্সনে খেললে টেস্ট ক্রিকেটে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সেরা বিকল্প সাকিব।

মুমিনুলের অধীনে ১৭টি টেস্ট খেলে ৩টিতে জয়, ১২টিতে হার ও ২টিতে ড্র করে বাংলাদেশ। এরমধ্যে এই বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাঠে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ও আছে।

অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাটিং ফর্ম খারাপ হয় মোমিনুলের। অধিনায়ক হবার আগে, ৩৬ টেস্টে ৪১ দশমিক ৪৮ গড়ে ২৬১৩ রান করেছিলেন তিনি। কিন্তু অধিনায়ক হবার পর, ১৭ টেস্টে গড় ৩১ দশমিক ৪৪-এ নেমে আসে। এই সময়ে মাত্র ৯১২ রান করেন তিনি। যার মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি এবং দুটি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। ৫৩ ম্যাচে ১১টি সেঞ্চুরিসহ ৩৫২৫ রান করেছেন তিনি। অধিনায়ক হবার পর মাত্র তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন মোমিনুল।

অধিনায়কত্ব নিয়ে মুমিনুল বলেন, যখন আপনি ভালো খেলবেন, দল খারাপ সময় পার করলেও আপনি দলকে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন। কিন্তু আমি ভালো করছি না, একই সাথে দল খারাপও করছে। তাই এই পরিস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেয়া সত্যিই কঠিন।

প্রথম দু’বারই অধিনায়ক হিসেবে সাকিব নিজের প্রথম ম্যাচ টেস্ট খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এবারও তৃতীয় মেয়াদে অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ।

আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আগামী ১৬ জুন প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *