জাপানের অদ্ভুত ফ্ল্যাট: পাশ ফিরলেই ঘর শেষ, ভাড়াও প্রচুর

জাপানের অদ্ভুত ফ্ল্যাট: পাশ ফিরলেই ঘর শেষ, ভাড়াও প্রচুর

ফিচার স্পেশাল

জানুয়ারি ২৫, ২০২৪ ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের বড় শহরগুলোতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজির হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বাড়ছে জনসংখ্যা আর কমছে থাকার জায়গা। এক চিলতে আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা। কারো রাত কাটছে পথে। কিন্তু পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে নিচ্ছে জাপান। বিশেষ ব্যবস্থা করে ফেলেছে তারা। সেই ‘ব্যবস্থা’ দেখে অবশ্য ভয় পাচ্ছেন অনেকেই।

জাপানে এখন জনসংখ্যা ১২ কোটি ৫৭ লাখেরও বেশি। সীমিত জমিতে এত লোককে ঠাঁই দিতে ক্রমেই ছোট হয়েছে আশ্রয়। এক কামরার ফ্ল্যাটে সংসার পেতেছে শহরবাসী। সেই এক কামরার ফ্ল্যাটও ক্রমে ছোট হয়েছে। জাপানের রাজধানী টোকিওতে আক্ষরিক অর্থেই এক চিলতে ফ্ল্যাটে সংসার পাতছে নগরবাসী।

সম্প্রতি সেই ফ্ল্যাটের ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন এক ব্যক্তি। থাকা তো দূর, যা দেখেই দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়! নর্ম নাকামুরা নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘টোকিও লেনস’-এ সেই ভিডিও পোস্ট করেছেন। ইউটিউবে তার ভক্তের সংখ্যা প্রায় নয় লাখ।

এক রুমের ফ্ল্যাট। ছবি: সংগৃহীত

এক রুমের ফ্ল্যাট। ছবি: সংগৃহীত

তিন কোনা সেই বাড়ি রয়েছে টোকিওতে। দুই রাস্তার সংযোগস্থলে। মেরেকেটে একটা গাড়ি পার্ক করা যায়, এতটুকু জমিতে তৈরি করা হয়েছে আস্ত সেই বাড়ি। এক ঝলক দেখলে মনে হতে পারে একটা প্রাচীর খাড়া রয়েছে। ভেতরে হয়তো একটা মানুষও বসবাস করতে পারবেন না।

অথচ ওই বাড়িতেই বাস কয়েকটি পরিবারের। কোনোমতে অনুমতি নিয়ে সেই আবাসনে ঢুকেছিলেন নর্ম। তার পর ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন ভেতরের ছবি। নর্ম ভেতরে ঢুকে দেখেন এক চিলতে সেই ফ্ল্যাটে রয়েছে বেশ কয়েকটি তলা। একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। আবাসনের ভেতরে ঢুকে নর্মকে বলতে শোনা যায়, ‘জাপানে ছোট আবাসন ভূরি ভূরি। কিন্তু এত ছোট দেখিনি কখনও।’

ভিডিওতে দেখা গেছে, আবাসনের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে জুতা খোলার জায়গা পর্যন্ত নেই। এর পর আবাসনের শৌচালয়ের ভিডিও পোস্ট করেছেন নর্ম। সেখানে দেখা গেছে, একজন মানুষ কোনো মতে দাঁড়িয়ে গোসল করতে পারেন। তার বেশি এক চিলতে জায়গাও নেই। শৌচালয়ের এক কোণে আবার একটি বাথটাবও রয়েছে। তবে সেখানে শুয়ে গোসল সম্ভব নয়। বসে গোসল করতে হবে।

এক রুমের ফ্ল্যাট। ছবি: সংগৃহীত

এক রুমের ফ্ল্যাট। ছবি: সংগৃহীত

ফ্ল্যাটের ঘরের দৈর্ঘ্য ৮.২ ফুট। চওড়া তার থেকেও কম। ফ্ল্যাটের মধ্যে ঘরগুলোকে আলাদা করা হয়েছে ইটের দেওয়াল দিয়ে। যদিও নর্ম টোকা দিয়ে দেখেন, সেগুলো আসল ইটের তৈরি নয়। বরং স্পঞ্জের ইটের। তার উপর ওয়ালপেপার লাগানো হয়েছে।

নর্মের দাবি, এই আবাসনে থাকার সব থেকে বড় অসুবিধা হল শব্দ। দুই রাস্তার সংযোগস্থলে অবস্থিত। সে কারণে দিন-রাত গাড়ির শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায় বাসিন্দাদের। অবশ্য টোকিওতে সর্বত্রই এই সমস্যা। শব্দের জন্য কোনো আবাসনে রাতে শান্তিতে ঘুমানো যায় না। নর্ম জানিয়েছেন, টোকিও শহরে যত ছোট ফ্ল্যাটই হোক না কেন, ভাড়া প্রচুর। তবে এই ফ্ল্যাটের ভাড়া ততটাও বেশি নয়। মাসে এই ফ্ল্যাটের ভাড়া ৪০ হাজার জাপানিজ ইয়েন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩০ হাজার টাকার সামান্য কম।

নর্ম যে ফ্ল্যাটটির ভিডিও ধারণ করেছেন, সেটিতে আপাতত কেউ থাকেন না। তবে ওই আবাসনের বাকি সব ফ্ল্যাটেই লোক থাকেন। ভিডিও দেখে কয়েক জন ব্যবহারকারী বলেছেন, এত ছোট ফ্ল্যাটে থাকলে মানসিক অবসাদ আসতে বাধ্য। অনেকেই আবার জানিয়েছেন, একা যদি বা থাকা যায়, সপরিবারে এখানে থাকা অসম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *