ঘুসের নির্দেশনা দেওয়া সেই এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত

দেশজুড়ে

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩ ৭:২৯ অপরাহ্ণ

শীর্ষ খবর,

দলিলের নামজারি (মিউটেশন) করার জন্য ঘুসের টাকা নেওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়ার নির্দেশনার কথোপকথন (বক্তব্য) ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মো. মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন- পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম হোসেন (কমিটি প্রধান), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাধবী রায় এবং সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) রিয়াজ মাহমুদ।

তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার দিনভর অভিযুক্ত সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মো. মাসুদুর রহমান, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার), উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডা. সঞ্জীব কুমার দাশ বলেন, তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা আমার কার্যালয়ে বসে প্রথম দিনের মতো তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন। আমাকে তারা থাকতে বলেছিলেন মাত্র। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।

তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ সেলিম হোসেন জানান, তদন্ত কাজ চলমান। এ মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না। ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, নাজিরপুর উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে দলিল নামজারি (মিউটেশন) করার জন্য ‘ক’ তফসিলের দলিল প্রতি ৬ হাজার টাকা এবং ‘খ’ তফসিলের নামজারি করাতে ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ঘুস নেওয়ার নির্দেশনা দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মো. মাসুদুর রহমান। ঘুস নেওয়া উক্ত টাকার ‘ক’ তফসিলের ৪ হাজার টাকা এবং ‘খ’ তফসিলের জন্য ১০ হাজার টাকা তাকে (এসিল্যান্ড) দেওয়ার জন্য বলা হয়। বাকি টাকা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিতে বলা হয়।

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সভায় এ নির্দেশনা দেন এসিল্যান্ড মো. মাসুদুর রহমান। সম্প্রতি ওই সভায় এসিল্যান্ড ও তহসিলদারদের কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়।

ভাইরাল হওয়া অডিওর কথোপকথনে শোনা যায়, সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) মো. মাসুদুর রহমান ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলছেন- প্রতিটি নামজারি কেসের জন্য আমাকে ৪ হাজার টাকা করে দিবেন, আর আপনারা নিবেন ২ হাজার টাকা, মোট ৬ টাকা করে নিবেন। তবে ৬ হাজার টাকার উপরে যেন না নেওয়া হয়। ‘খ’ তফসিলের নামজারি কেসের জন্য আমাকে প্রতিটি কেসের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেবেন আর আপনারা ৫ হাজার টাকা করে নেবেন, মোট ১৫ হাজার টাকা করে নিবেন।

ভাইরাল হওয়া অডিও-তে আরও শোনা যায়, নাজিরপুরের এসিল্যান্ড মো. মাসুদুর রহমান ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের বলেন যে- আপনারা যে পার কেসে ডিলিংস করেন তা এনসিউর করার কোনো ওয়ে আছে?

খোলামেলা কথা বলার জন্য তিনি বলেন, আপনাদের মতামত শুনি যে আপনারা কি চাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে শাখারিকাঠী ইউনিয়নের তহসিলদার মো. শাখাওয়াৎ সাহেবের সব কথা হয়েছে।

এ সময় বৈঠকে উপস্থিত মাটিভাংগা ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. সুজন বলেন, ২ একরের বেশি জমি হলে তখন আমরা কত নেব?

শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র বলেন- এটা স্যারের ওপর নির্ভর করে; আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবে আমরা নেব।

সাতকাছিমা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বলেন, সব কেসে (১ একর, ২ একর বা ৩ একর বা তার চেয়েও বেশি জমির ক্ষেত্রে) সমান হওয়া উচিত; যেমন ৫ হাজার টাকা ছিল সেখানে আপনি বললে ৪ হাজার টাকায় নামাইয়া আনতে পারি, আপনি যেভাবে বলবেন স্যার।

এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ধরেন আমি ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিলাম, আপনারা কত ড্রিল করবেন।

এ বিষয়ে মাটিভাংগা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) মো. সুজন বলেন, এখানে যদি ৪ হাজার টাকা দেওয়া যায় তাহলে মোট ৫ হাজার ৫০০ টাকা হলে হয়, আমরা সর্বোচ্চ হাজার টাকার বেশি নেব না।

সাতকাছিমা ইউনিয়নের শাহজাহান কবির বলেন, এখানে ৪ হাজার টাকা, মোট ৬ হাজার টাকা হলে হয়।

তখন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, এ অর্থবছরের জন্য প্রতিটি নামজারি কেসের জন্য আমাকে ৪ হাজার টাকা করে দেবেন আর আপনারা ২ হাজার টাকাসহ মোট ৬ হাজার টাকা নেবেন।

এরপর আবার তাকে বলতে শোনা যায়, একচ্যুয়ালি আপনার কয় টাকা নিতে চান বলেন এবং তিনি তার দিক থেকে প্রস্তাব করেন আমাকে ৪ হাজার টাকা করে দেন, আপনারা ১ হাজার ৫০০ টাকা মোট ৫ হাজার ৫০০ টাকা করে নেন। তখন সেখমাটিয়া ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. হাসান হাওলাদার, দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও দীর্ঘা ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এজেডএম জাকির হোসেন বলেন- স্যার এটা ৬ হাজার করা হোক।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তখন প্রতিটি নামজারির জন্য চূড়ান্ত করে নির্দেশনা দেন এবং বলেন ৬ হাজার টাকার উপরে যেন না নেওয়া হয়। এ সময় তিনি আরও বলেন- ‘খ’ তফসিলের নামজারি কেসের জন্য আমাকে প্রতিটি কেসের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেবেন, আর আপনারা ৫ হাজার টাকা করে নেবেন, মোট ১৫ হাজার টাকা নেবেন।

সংগৃহীত 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *