ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩ ১২:১৯ অপরাহ্ণ
গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না এ বছরও। আসছে গরমে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে দৈনিক ১৬ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু তা মেটাতে জ্বালানি সংস্থানের যে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, ডলার সংকটে তার যোগান নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ!
বৈশ্বিক ধাক্কায় গতবছর দেশের জ্বালানি খাতকে বেশ সংকটময় অবস্থায় পড়তে হয়। সে সময় লোডশেডিং হয়েছে গ্রাম থেকে নগর সর্বত্র। এবারও উড়িয়ে দেয়া যায় না সে শঙ্কা। এরই মধ্যে খবর মিলছে দেশের নানা জায়গায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের।
চাহিদার বিপরীতে ৯ হাজারের মতো বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও বড় ভাবনার কারণ জ্বালানির নিশ্চয়তা। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাক্কলনে এবার গরমকালে সর্বোচ্চ দৈনিক চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আর তা মেটাতে গ্যাস থেকে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট, ফার্নেল অয়েলে ৫ হাজার, পায়রা-রামপাল-বড়পুকুরিয়া-আদানিসহ বেসরকারি কয়েকটি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
তবে সে লক্ষ্য পূরণ যে কতটা চ্যালেঞ্জের, তার বড় উদাহরণ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এক মাসের ধাক্কা কাটিয়ে আবার উৎপাদনে ফিরলেও এলসি (ঋণপত্র) জটিলতায় কয়লার যোগান নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক সুভাস চন্দ্র পাণ্ডে বলেন, ‘কয়লা কেনার জন্য আমাদের পরবর্তী মূল চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার ছাড়ের বিষয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যই সংকটের কারণ হতে পারে।’
অন্য সব উৎসের চিত্রও ভিন্ন কিছু নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও মিলতে পারে বড়জোর ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন। বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বিল পরিশোধ আর ফার্নেস অয়েল আমদানিতেও বড় বাধা ডলার সংকট। সবচেয়ে বেশি উৎপাদন ক্ষমতার পায়রাও সম্প্রতি বন্ধ হওয়া এড়িয়েছে কোনোক্রমে।
সেচ, রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে যেসব পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, তাতে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অগ্রণী ভূমিকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পর্যাপ্ত জ্বালানির সংস্থান নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী সালেক সুফি বলেন, ‘অন্যান্য খাতে খরচ কমিয়ে কয়লা আমদানি এবং এলএনজি আমদানির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ আমরা যদি চাহিদামাফিক সরবরাহ করতে না পারি, তাহলে কোনো পরিকল্পনা করেই অতিরিক্ত লোডশেডিং থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।’
যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, অর্থের সংস্থান নিয়ে সর্বোচ্চ মহল থেকে ইতিবাচক বার্তাই মিলেছে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা নীতিনির্ধারক মহল থেকে আশ্বস্ত হয়েছি যে, আসন্ন চ্যালেঞ্জিং গ্রীষ্মকাল মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের যে পরিমাণ গ্যাস বা কয়লা প্রয়োজন, তা সংগ্রহ করতে যা যা প্রয়োজন, সেটির জন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে।’
তবে বিদ্যুৎ বিভাগের আশা, এবারের পরিস্থিতি সহনীয়ই থাকবে। যদিও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় জুন থেকে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে চান নীতিনির্ধারকরা।