কেন ইসরায়েল গাজার হাসপাতাল ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে?

কেন ইসরায়েল গাজার হাসপাতাল ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে?

আন্তর্জাতিক স্লাইড

এপ্রিল ১, ২০২৪ ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার আল শিফা হাসপাতালে টানা ১৩ দিনের ইসরায়েলি হামলায় চার শর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই আহত রোগী, যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী রয়েছেন।

গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফা। উত্তর-গাজায় অবস্থিত এই হাসপাতালে গত বছরের নভেম্বর থেকে ইসরায়েলি সেনাদের অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। হাসাপাতালের কর্মী, রোগী ও অবরুদ্ধ শরণার্থীদের ইসরায়েলি সেনারা হুমকি দিচ্ছে এই বলে যে গোটা হাসপাতালটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হবে এবং এই আশ্রয়-স্থলটি তারা ত্যাগ না করলে তাদেরকে এর ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়ে নিহত হতে হবে!

অবরুদ্ধ এই ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাদের ওই হুমকি এখন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতাল থেকেই ছবিসহ নানা খবর আসছে যে, রোগীরা মারা যাচ্ছেন, চিকিৎসা-কর্মীরা সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন, বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতার, হত্যা ও নির্যাতন করা হচ্ছে এবং হাসপাতালের আশপাশের বাসভবনগুলোতেও বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এই হাসপাতালে ফিলিস্তিনি নারী ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ধর্ষিত হয়েছে বলেও খবর এসেছে।

গাজার আল শিফা হাসপাতালের ভেতরে এখনো হাজার হাজার ব্যক্তি রয়েছেন যাদের বেশিরভাগই রোগী ও আহত ফিলিস্তিনি। অবরুদ্ধ এ হাসাপাতালের রোগীদের কাছে ওষুধ পৌঁছেনি বলে এখন পর্যন্ত অন্তত চারজন রোগী মারা গেছে এবং অবরোধ অব্যাহত থাকায় আরো অনেকের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে।

হামাসের কমান্ডাররা এই হাসপাতালকে ব্যবহার করেছেন এ অজুহাত দেখিয়ে যে ইসরায়েলের সেনারা এর আগেও সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ইসরায়েল এই হাসপাতালে অনেক প্রতিরোধ যোদ্ধাকে আটক করেছে বলেও জানা গেছে। কিন্তু পরে ওই দাবি সঠিক নয় বলে স্বীকার করতে বাধ্য হয়। আল শিফা হাসপাতালে গ্রেফতার হওয়া ফিলিস্তিনিদের যেসব ছবি প্রকাশ করেছে তা ভুল বলেও স্বীকার করেছে। কিন্তু ইসরায়েল এখনো এ দাবি অব্যাহত রেখেছে যে এই হাসপাতালটিকে হামাস সামরিক কাজে ব্যবহার করছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই হাসপাতালটির ওপর অবরোধ অব্যাহত রাখা এবং রোগী ও শরণার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্যই ইসরায়েল এসব দাবি করছে।

ইসরায়েল এর আগেও গাজার হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তুলেছিল এবং বিশেষ করে আল শিফা হাসপাতালের নীচে হামাসের গোপন নানা সুড়ঙ্গ বা টানেল ও হামাসের কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড সেন্টার থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করে হাসপাতালটির চারদিক ঘেরাও করে সেখানে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

তবে ইসরায়েল ওইসব দাবির কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। আর এ থেকেই বোঝা যায় গাজার হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে, স্কুল, বাজার এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি হামলা আসলে যুদ্ধের পরিকল্পিত অপ-কৌশল মাত্র যাতে গাজার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা-অবকাঠামোগুলোসহ বসবাসের সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয়া যায়। গত ছয় মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজার হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা-কর্মী, রোগী ও বিছানায় শয্যাশায়ী শিশুদের হত্যা করার নানা ঘটনা ইসরায়েলের এই পৈশাচিক ও অশুভ লক্ষ্য বাস্তবায়নেরই স্বাক্ষ্য বহন করছে স্পষ্টভাবে।

হাসপাতাল ও নানা আশ্রয়-কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল আলোচনার টেবিল থেকে ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছে বলেও বিশ্লেষকরাও উল্লেখ করছেন।ইসরায়েল হামাসকে গাজা থেকে নির্মূল করার যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল তার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি ইসরায়েলি সেনারা।

তবে ফিলিস্তিনিরা যাতে গাজা ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং সেখানে আর ফিরে আসতে না পারে সে লক্ষ্যেই ইসরায়েল পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করছে। বিশেষ করে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি নির্মূল করতে বা এ অঞ্চল থেকে তাদেরকে স্থায়ীভাবে তাড়িয়ে দিতে চায় ইসরায়েল যাতে এই অংশকে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য বাফার জোন হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাই উত্তর-গাজার যারা আল শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে ভয় দেখিয়ে ও তাদের অনেককে হত্যা করে ইসরায়েল তাদেরকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার উদ্যোগ নিয়েছে।

উত্তর গাজায় চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা করতে গিয়ে তাদের গায়ে এমনসব ক্ষত দেখেছেন যা তারা আর কখনো দেখেননি।

অনেক বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে ওষুধ পৌঁছাতে না দেয়া মানবতার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অপরাধ। আসলে ইহুদিবাদী পুরো গাজাকেই ফিলিস্তিনি-শূন্য করে সেখানে স্থায়ী দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

অবৈধ ইহুদিবাদী ইসরায়েল সরকারের রূপরেখা গড়ে তোলা হয় ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী ষড়যন্ত্রের আওতায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে মুহাজির হিসেবে পাঠিয়ে। ১৯৪৮ সালে এর অস্তিত্ব ঘোষণা করা হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। আর সেই সময় থেকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বা গণহত্যার নানা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে যাতে গোটা ফিলিস্তিনকে দখল করতে পারে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। ইহুদিবাদী ইসরায়েল নানা অজুহাতে গাজা উপত্যকাকেও স্থায়ীভাবে দখল করার বা নিয়ন্ত্রণে রাখার ষড়যন্ত্র করছিল বলে নানা খবর এসেছে। গাজা-সংলগ্ন সাগরে ও সাগর-উপকূলে গ্যাস ও তেলের খনি রয়েছে এবং এসব খনিতে গ্যাস ও তেলের ব্যাপক মজুদ রয়েছে বলে মনে করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *