এই হল আমার, যাকে যেখানে খুশি সিট বরাদ্দ দেব: প্রাধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেত্রী

দেশজুড়ে

মার্চ ৬, ২০২৩ ২:৩৮ অপরাহ্ণ

কুবি প্রতিনিধি,

‘এই হল আমার, আমার কথাতেই হল চলবে। যাকে যেখানে খুশি সিট বরাদ্দ দিব। আপনাকে এই হলের দায়িত্ব কে দিয়েছে?’, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট সাহেদুর রহমানকে এভাবে শাসানোর অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিনের বিরুদ্ধে।

শনিবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যা সাতটার দিকে শেখ হাসিনা হলের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে হল পরিদর্শনে এসে সমস্যা সমাধানে ফাইজার সঙ্গে কথা বলতে গেলে ফাইজা এমনভাবে শাসান বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রমতে জানা যায়, শেখ হাসিনা হলের ২১৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের ১২তম ব্যাচের প্রেয়শী সানা অন্য কক্ষে তার সিট পরিবর্তনের জন্য হল প্রভোস্ট বরাবর আবেদন করলে তাকে ২১৬ নম্বর রুমের একটি সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন কক্ষে গিয়ে প্রেয়শী তার নতুন সিটে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম আবর্তনের রায়হানা আনজুম মিম নামে এক শিক্ষার্থীকে অবস্থান করতে দেখেন। ঘটনা সমাধানের জন্য হল প্রভোস্টকে ফোন দিলে হল প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান হলে এসে ১১তম আবর্তনের শিক্ষার্থীকে এখানে অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তিনি কাজী ফাইজা মেহজাবিনের নাম বলেন। সেই সূত্রে লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিনকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উপরোল্লিখিত মন্তব্য করেন প্রভোস্টকে উদ্দেশ্য করে।

এই সময় হলে অবস্থারত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ফাইজার এমন আচরণ নতুন কিছু না। সে একজন শিক্ষক সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারে তাহলে ভাবুন আমাদের সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করে থাকে? প্রতিদিন সকাল বেলা তার চিৎকারে আমাদের ঘুম ভাঙে। হলে অবস্থানরত সকল শিক্ষার্থী তার প্রতি বিরক্ত। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা উক্ত হলের হাউজ টিউটর মো. আল আমিন বলেন, হল প্রভোস্টের সাথে ফাইজার আচরণ শিক্ষার্থী সুলভ নয়।

এই ব্যাপারে কাজী ফাইজা মেহজাবিন বলেন, স্যারকে এই ধরনের কোন কথা বলিনি। কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম এই হল তো আমারও।

এই ব্যাপারে হল প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান বলেন, হলে কোন শিক্ষার্থী উঠবে আর কোন শিক্ষার্থী উঠবে না, এই এখতিয়ার সম্পূর্ণ হল প্রসাশনের। একজন শিক্ষার্থী তো এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হল সংস্কৃতি আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি তা শুধুমাত্র সম্ভব হচ্ছে না ফাইজার জন্য।

শেখ হাসিনা হল শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এর আগেও নানা ইস্যুতে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ৩১ জুলাই শেখ হাসিনা হলের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের আগে শেখ হাসিনা হলে উঠতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ভাইবা নিয়ে সিটে উঠানো হয়। কিন্তু হল উদ্বোধনের পর থেকেই ফাইজা নিজের খেয়াল খুশিমতো সিট বদল করতে থাকেন। এছাড়া বরাদ্দকৃত সিটে না উঠতে হুমকি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে সেই সকল সিটে নিজের খেয়ালখুশি মতো শিক্ষার্থী তোলার ঘটনা রয়েছে। শুধু তাই নয় হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা রাত নয়টার পর হলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবে না, হল গেটে শিক্ষার্থীদের কেউ এগিয়ে দিতে পারবে না সহ নানা ধরনের নিয়ম তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হল প্রশাসন সিট দিয়েছে। কিন্তু ফাইজার কথা হচ্ছে সেই সিট বাঁচিয়ে রাখতে গেলে নাকি ছাত্রলীগ করতে হবে! যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না তাদের সিট নিয়ে সে বরাবর ঝামেলা করে।

এ ব্যাপারে কাজী ফাইজা মেহজাবিন বলেন, আমি এরকম কিছুই করি নাই। হলের সিটে বরাদ্দ তো আমি দেই না, হলে প্রশাসন দেয়। আমাদের হলে অবৈধ কিছু হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, এখানে পরস্পরমুখী বক্তব্য আছে। প্রভোস্ট স্যারও নাকি ছাত্রলীগ সম্পর্কে বাজে কথা বলেছে। এখানে দুই জনের দুই রকমের বক্তব্য শুনছি। আমরা তদন্ত করে দেখব এবং যদি ফাইজা এমন কিছু বলে থাকে তাহলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব। হল ছাত্রলীগের না, হল প্রশাসনের।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, হল চালাবে প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা এখানে আসবে কেন? আমি বিষয়টা অবগত হয়েছি। বিষয়টা আলোচনা করে দেখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *